কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: শনিবার সকাল 11টা ৷ সংসদে 2025-26 অর্থবর্ষের জন্য পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন । প্রায় 1টা 15 মিনিট ধরে চলতি আর্থিক বছরের বাজেট প্রস্তাব পড়ে শোনালেন তিনি ৷ এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য কর ছাড়ের বিরাট ঘোষণা করা হয়েছে ৷ এদিনের অর্থমমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, বার্ষিক 12 লক্ষ 75 হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনোরকমের কর দিতে হবে না দেশবাসীকে ।
সাধারণ-মধ্যবিত্তের স্বপ্নপূরণের বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ৷ কিন্তু 2025-26 অর্থবর্ষের বাজেট নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিশেষজ্ঞরা ৷ কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ এই বাজেটকে সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটাই আশাব্যঞ্জন ও স্বস্তির মনে করছেন ৷ অনেকে আবার এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটকে অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক বাজেট বলে কটাক্ষ করছেন ।
চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ধর্মেন্দ্র কাপুর বলেন, "এবারের বাজেট জনমুখী । মধ্যবিত্ত নাগরিক যাঁদের আয় 12 লক্ষ টাকার মধ্যে তাঁদের এক পয়সাও কর দিতে হবে না । যদিও এর ফলে হয়তো রাজকোষে টান পড়বে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ যাতে আরও বেশি করে ব্যয় করতে পারেন, তার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে । কারণ, বিকিকিনি বজায় থাকলে বা তা আরও বাড়লে পক্ষান্তরে চাঙ্গা হবে রাজকোষই ।"
তিনি আরও বলেন, "স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন 50 হাজার থেকে 75 হাজার পর্যন্ত করা হয়েছে । অর্থাৎ 12 লক্ষ 75 হাজার পর্যন্ত আয়ের উপর কোনও করই দিতে হচ্ছে না নাগরিকদের । যাতে সাধারণ মানুষ আরও বেশি করে এফডি, শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ কিংবা সোনা বা জমি কিনতে উৎসাহী হন, তার জন্য এই ব্যবস্থা ।"
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে ইংরেজিতে একটি পোস্ট করেছেন ৷ যার বাংলায় তর্জমা করলে কিছুটা এরকম দাঁড়ায়: "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই । 2025 সালের কেন্দ্রীয় বাজেট 'গরিব', যুবক, অন্নদাতা কৃষক এবং নারীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে । 12 লক্ষ পর্যন্ত কোনও আয়কর দিতে হবে না । এই ঘোষণা মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে বিরাট স্বস্তি এনে দিয়েছে । এরাই আমাদের দেশের করদাতা ।"
Salute Modinomics 🙏
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) February 1, 2025
I express my gratitudes to Hon'ble Prime Minister Shri @narendramodi Ji and @FinMinIndia Smt. @nsitharaman Ji for announcing the Union Budget 2025 focusing on GYAN (Gareeb, Youth, Annadata Farmers and Nari).
Thrilled to know that NO INCOME TAX have to be… pic.twitter.com/Up2nMJ5JsQ
তিনি আরও লেখেন, "সিনিয়র সিটিজেনদের জন্যও রয়েছে বিশেষ স্বস্তি । কারণ সুদের উপর টিডিএস ছাড়ের সীমা 50 হাজার থেকে বাড়িয়ে 1 লক্ষ করা হয়েছে । এই বাজেট যুবসমাজের জন্য আশাব্যাঞ্জক । কারণ, স্কুলগুলিতে ব্রডব্যান্ড সুবিধা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) শিক্ষার প্রসার এবং নতুন মেডিক্যাল আসন তৈরির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।"
অর্থনীতিবিদ ব্যাসদেব দাশগুপ্তের কথায়, "এই বাজেটটা কিছুটা গাজর ঝুলিয়ে রাখার মতো । এর কারণ হল, 12 লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না । তবে এই বাজেটে কর্মসংস্থানের উপর তেমন একটা জোর দেওয়া হয়নি । তাই যাতে অনেক সংখ্যক নাগরিক বাজারে কেনাকাটা করে রাজকোষকে চাঙ্গা করতে পারে সেই সুযোগ তেমন একটা নেই ।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে ভারতীয় অর্থনীতির তিনটি বড় সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, একটি হল কর্মসংস্থান নেই , বাজারের চাহিদার ঘাটতি এবং লাগাতার মুদ্রাস্ফীতি । অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি বজায় থাকলে লাভবান হবেন শুধুমাত্র উচ্চবিত্তরা । অন্যদিকে 8 থেকে 12 লক্ষ টাকা পর্যন্ত 10 শতাংশের যে স্ল্যাবের কথা বলা হচ্ছে, সেটা আগামী সপ্তাহে নতুন আয়কর বিল পেশ করা হলে তবেই এই ধোঁয়াশা কাটবে ।"
অ্যাসোচেম (ASSOCHAM)-এর ইস্টার্ন রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি তরঞ্জিত সিং বলেন, "এই বাজেট মধ্যবিত্তের ব্যয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং অন্যদিকে ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট সুনিশ্চিত করবে ।" তবে তিনি ট্যাক্স কালেক্টেড অ্যাট সোর্স বাতিল করার প্রস্তাব এবং সমস্ত সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান । তাঁর কথায়, "এর ফলে দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর উন্নতি হবে ।"
এছাড়াও তিনি AI-এর ক্ষেত্রে উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন এবং চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণের উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানান । তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ শিক্ষাক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে । তিনি বলেন, "মোটের উপর এই বাজেটের বিশ্ব অর্থনীতিকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করবে । বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ করতে সাহায্য করবে ।"
অন্যদিকে অ্যাসোচেম-এর ইস্টার্ন রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সঞ্জীব পাটওয়ারির মতে, "এবারের বাজেট সুপরিকল্পিত । ইনক্লুসিভ উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও বিকাশের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে । একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হয়েছে, যেমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উপর বেসিক কাস্টম ছাড় দেওয়া হয়েছে । 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পের প্রসার ও প্রচারের জন্য জাতীয় ম্যানুফ্যাকচারিং মিশন তৈরি করা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে ।"
তিনি বলেন, "এই বাজেট শিল্পকে উদ্ভাবিত করবে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশের পথ তৈরি করবে । সামগ্রিকভাবে এটি একটি প্রগতিশীল, সুষম এবং মূলধন বিনিয়োগ-নির্ভরকারী বাজেট । খনন, উৎপাদন, পরিকাঠামো, ডিজিটালাইজেশন-সহ আরও একাধিক বিষয় উপর জোর দেওয়া হয়েছে ।"