করঞ্জলি (দক্ষিণ 24 পরগনা), 5 অক্টোবর: উমার আগমনী বার্তা বেজে উঠেছে ৷ আকাশে বাতাসে শিউলির গন্ধ এবং শরতের মেঘ জানান দিচ্ছে উমা আসছেন সপরিবার বাপের বাড়িতে। দক্ষিণ 24 পরগনার অলিতে-গলিতে বহু বনেদি বাড়ি লুকিয়ে রয়েছে এবং প্রতিটি বনেদি বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস।
কালের নিয়মে দুর্গাপুজোর জৌলুস ফিকে হয়ে গেলেও এখনও সেই প্রাচীন রীতিনীতি বহাল রয়েছে মণ্ডল বাড়িতে। এই দুর্গাপুজোর সূচনার পিছনে রয়েছে কিছু অলৌকিক ঘটনা।
পুজোর সূচনা-
1188 সনে করঞ্জলির কৃষ্ণচন্দ্রপুরের বাসিন্দা কৈলাস মণ্ডলের স্ত্রী গঙ্গা নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেইসময় তাঁর স্ত্রী গঙ্গা নদী থেকে একটি দুর্গা প্রতিমা উদ্ধার করেন। এরপর সেই প্রতিমাটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় ৷ তখন আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য অতটাও উন্নতি ছিল না মণ্ডল পরিবারের। দুর্গা প্রতিমা বাড়িতে আনার পর কৈলাসচন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রীকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী দুর্গা।
স্বপ্নাদেশে মা জানান, মণ্ডল পরিবারে তিনি পূজিত হতে চান। দেবীর স্বপ্নাদেশের পর শুরু হয় মণ্ডল বাড়িতে উদ্ধার হওয়া দুর্গা প্রতিমার আরাধনা। এরপর মণ্ডল পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু হতেই ঝড়ের গতিতে ধনসম্পদ থেকে শুরু করে আর্থিক, খ্যাতি, যশ, জৌলুস বেড়ে ওঠে মণ্ডল পরিবারে। ফুলে-ফেঁপে ওঠে ওই পরিবারের জমিদারিত্ব, এমনটাই জানা যায় পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে ৷
ফিকে হয়েছে জমিদারদের পুজো-
কালের নিয়মে সেই দুর্গা প্রতিমা মণ্ডল পরিবার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে ৷ সেইসঙ্গে উধাও হয়ে গিয়েছে জমিদারিত্ব। ফিকে হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজো ৷ কিন্তু প্রাচীন রীতিনীতি এখনও পর্যন্ত বহাল রয়েছে। এখনও দুর্গাপুজোয় বলিদানের প্রথা রয়েছে ৷ এখানে ছাগবলি দেওয়া হয় ৷
কী বলছে মণ্ডল পরিবার-
এবিষয়ে পরিবারের প্রবীণ সদস্য রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, "243 বছর ধরে আমাদের এই মণ্ডল পরিবারের দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। বংশ পরম্পরায় ঢাকি ও মৃৎশিল্পী প্রতিমা তৈরি করে আসছেন।"
বর্তমান প্রজন্ম প্রিয়াংশু মণ্ডল বলছে, আর্থিক অভাবের কারণে অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে পুজো ৷ আমরা সেই হারানো ঐতিহ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছি। পরিবারের সদস্যরা যারা ভিন রাজ্য বা দেশে থাকেন, তাঁরা সকলেই ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে।"