বড়ঞা (মুর্শিদাবাদ), 31 অক্টোবর: মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত রাজার কাটা মুণ্ডুর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেদি । প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে সেই বেদির উপরেই পূজিত হয়ে আসছেন বড়ঞা থানার ফতেপুরের মুন্ডেশ্বরী কালী ।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় দেড়শো বছর আগে এই বেদিতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন তান্ত্রিক সাধক কৃষ্ণ দাস । তারপর থেকেই দেবীর মাহাত্ম্য দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে । নিত্যপুজো-সহ প্রতি শনি- মঙ্গলবার বিশেষ পুজো হয় ৷ দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মুণ্ডেশ্বরী দেবী জাগ্রত হয়ে ওঠেন বলেই বিশ্বাস স্থানীয়দের ৷
বড়ঞা ব্লক তখন ফতে পরগনার অধীন। সেখানকার রাজা ছিলেন ফতে সিং । তাঁর নাম থেকেই ফতেপুর গ্রামের নামকরণ । বর্তমান ময়ূরাক্ষী নদীর গতিপথের উপর ছিল ফতেপুর রাজবাড়ি । পুরাতত্ত্ব বিভাগের খননকার্যে তার বহু নিদর্শনও মিলেছে । প্রাসাদের পাশেই ছিল হাতি ও ঘোড়াশালা । সেই থেকেই হাতিশাল গ্রামের নামকরণ হয়েছে ।
1500 খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে মুঘল সৈন্যরা রাঢ় বাংলায় হানা দেয়। ফতে সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ায় মুঘল সেনাপতি মান সিং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । যুদ্ধ হয় পারশালিকা গ্রামের বিশাল ময়দানে । ফতে সিং-সহ তাঁর হাজার হাজার সৈন্য ও পরিবারের সকলেই নিহত হন সেই যুদ্ধে । ময়দান ভেসে গিয়েছিল নিহত সৈন্যদের রক্তের স্রোতে। মাঠে ভরে গিয়েছিল সৈন্যদের কাটা মুণ্ডুতে ৷ তখন থেকে ওই মাঠের নামকরণ হয় মুণ্ডমালার চটান ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মুণ্ডমালার চটান থেকে মশাল জ্বেলে ফতে সিংয়ের কাটা মুণ্ডু খুঁজে বর্তমান কালীর বেদির নীচে সমাধিস্থ করেন । মুঘল সৈন্যদের চোখে ধুলো দিতে সমাধিস্থলে ফুল ছিটিয়ে দেওয়া হয় । তারপরই সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় কালীমূর্তি । নাম হয় মুণ্ডেশ্বরী কালী।
বর্তমানে মন্দির ও পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন ফতেপুরের বাসিন্দা শান্তনু সেন । তাঁর কথায়, "মুণ্ডেশ্বরী মায়ের মাহাত্ম্য আজ আর নতুন করে কাউকে বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না । এখানকার মা যে জাগ্রত তার বহু প্রমাণ রয়েছে । মানুষের মনে সেই বিশ্বাস গেঁথে রয়েছে ।"
স্থানীয় বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সুচিন্ত্য সেন জানান, মুর্শিদাবাদ সংক্রান্ত বহু ইতিহাস গ্রন্থে ফতে সিং ও মুণ্ডেশ্বরী মায়ের বর্ণনা রয়েছে । বছরের পর বছর ধরে মুণ্ডেশ্বরী মা এই গ্রামকে রক্ষা করছেন ।