হায়দরাবাদ: বর্ষাকাল চলে এসেছে । এই ঋতুটি গরম থেকে স্বস্তি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক সমস্যাও নিয়ে আসে । যার মধ্যে পাকস্থলীর ফ্লু বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস নামেও পরিচিত একটি । যদিও এটি একটি সাধারণ সমস্যা কিন্তু এটি অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে । কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এবং কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস এড়ানো যায় ।
কেন স্টমাক ফ্লু হয় (What causes stomach flu)?
দিল্লির চিকিৎসক ডাঃ কুমুদ সেনগুপ্ত বলেন, "গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে পেট সংক্রান্ত সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় । যার মধ্যে স্টমাক ফ্লু বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস খুব সাধারণ । প্রকৃতপক্ষে, এই উভয় ঋতুতে তাপ, আর্দ্রতা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা পরজীবীর বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ প্রদান করে যা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হতে পারে ।"
তিনি আরও বলেন, "গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা, এই মরশুমে কাঁচা ফল, সবজি ও রান্না করা খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় । জেনে বা অজান্তে এগুলি খেলে পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে । একই সঙ্গে অনেক সময় মশা, মাছি, তেলাপোকা বা অন্যান্য পোকামাকড়ের মাধ্যমে পেটের ফ্লুতে দায়ী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলি কাটা ফল, স্ন্যাকস, জুস বা বাজারে রাখা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যকে দূষিত করে স্টমাক ফ্লু কারণ হয়ে থাকে ৷"
খারাপ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি দূষিত জল, নোংরা হাত বা আশেপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যত্ন না নেওয়ার কারণেও পেটের ফ্লু হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । যদিও স্টমাক ফ্লু শিশুদের ও প্রাপ্তবয়স্কদের একইভাবে প্রভাবিত করতে পারে ৷ এটি শিশুদের বেশি প্রভাবিত করে ।
লক্ষণ এবং প্রভাব: তিনি বলেন, "পাকস্থলীর ফ্লুর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে অনেক উপসর্গ ও প্রভাব দেখা যায়, যার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ ।"
পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, পেশী ব্যথা, ইত্যাদি ৷
তিনি বলেন, "স্টমাক ফ্লু প্রভাব বাড়লে আক্রান্ত ব্যক্তি ডায়রিয়া, পেট বা অন্ত্রের সংক্রমণ বা সমস্যা এমনকি রক্তাক্ত আমাশয়ও ভুগতে পারে ।"
সতর্কতা প্রয়োজন: ডাঃ কুমুদ সেনগুপ্ত বলেন, "সাধারণত স্টমাক ফ্লু খুব একটা গুরুতর সমস্যা নয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি-বায়োটিক দিতে হয় না । কিন্তু অনেক সময় সমস্যায় মনোযোগ না দেওয়া ও ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যবিধির প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার কারণে সমস্যা বাড়তে পারে ।
স্টমাক ফ্লু হলে সঠিক ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অর্থাৎ শরীরে জলের ঘাটতি যাতে না হয় তা নিশ্চিতত করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ করে বাচ্চাদের স্টমাক ফ্লুর কারণে অতিরিক্ত ডায়রিয়া হলে অনেক সময় তাদের আইভি ফ্লুইড দিতে হতে পারে এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে পারে । যাইহোক, এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায় ।
কীভাবে স্টমাক ফ্লু এড়াতে হবে ?
তিনি বলেন, সময়মত চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু সতর্কতা রয়েছে যা স্টমাক ফ্লু এড়াতে অনেক সাহায্য করতে পারে । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।
প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণে জল পান করুন ৷ বর্ষাকালে জলবাহিত রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে । খাবারে তরলের পরিমাণ বাড়ানো উপকারী হতে পারে । খাদ্য ও পানীয় পরিচ্ছন্নতার যত্ন নিন । ফল ও শাকসবজি ভালো করে ধুয়েই ব্যবহার করুন । খাওয়ার আগে এবং মলত্যাগের পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন । নষ্ট দুধ ওদুগ্ধ দ্রব্য থেকে পেটের সমস্যা হতে পারে । তাই সবসময় তাজা দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবহার করা উচিত । সর্বদা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগ দিন ৷ স্নানের জন্য পরিষ্কার জল ব্যবহার করুন এবং নোংরা পোশাক পরিধান এড়িয়ে চলুন । স্টমাক ফ্লুর কারণে ডায়রিয়া হলে শরীরে জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এটি এড়াতে ওআরএস বা নুন এবং চিনির জল পান করুন ।প্রোবায়োটিক খাবারও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ।