কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: 'সুরক্ষা বন্ধু'-তে বলা হয়েছে মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ৷ অথচ, ফেডারেশনের তরফে যাঁরা এই সংগঠনে রয়েছেন, তাঁরাই অভিযুক্ত ৷ কেশসজ্জার আত্মহত্যায় চেষ্টার ঘটনায় এমনই মত ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া'র (ডিএইআই) ৷
প্রতিবাদ করায় প্রথমে সাসপেন্ড, তারপর কাজে ফিরেও কম কাজ পাওয়া ৷ এমনকী, বাইরে কাজ করার ক্ষেত্রেও তীব্র নিষেধাজ্ঞা ৷ কাজের দুনিয়ায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল টলিউডের কেশসজ্জা শিল্পী তনুশ্রী দাসের ৷ আর তাতেই চরম পদক্ষেপ বেছে নেন তিনি ৷ গিল্ড ও ফেজারেশনের বিরুদ্ধে একটি চিঠি ও একটি ভয়েস ম্যাসেজ (ইটিভি ভারত সত্যতা যাচাই করেনি) পাঠিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি ৷ এই মুহূর্তে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত টলিপাড়া ৷
সোমবার সন্ধ্যায় কাজের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে এবং কাজের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার পক্ষে আলোচনার জন্য সাংবাদিক বৈঠক করে ডিএইআই ৷ গিল্ডের তরফে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুদেষ্ণা রায়, সুব্রত সেন, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ৷ তাঁদের দাবি, "কারও কাছ থেকে কাজ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই । এখানে সবাই ফ্রিলান্সার । মানে কেউ চাকরি করেন না । কাজ না করে কেউ এখানে মাইনে পান না ৷ সুতরাং কাজ না করা মানে রোজগার বন্ধ ।"
সুদেষ্ণা রায় বলেন, "মেয়েটি যখন কাজে ফিরল তাঁকে বলা হল বাইরের কোনও কাজই করতে পারবেন না ৷ একটা কাজ পেয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু কাজ শুরুর আগের দিন জানতে পারলেন কাজটা তাঁর থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ৷ তখন তাঁর মনের অবস্থা কেমন হতে পারে ?"
সুদেষ্ণা আরও বলেন, "আর যেন এই রকম দেখতে না হয় । ফেডারেশন, ট্রেড ইউনিয়ন বা গিল্ড যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এটা একটা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন । আমরা সদস্যদের ভালো চাই । তাঁরা যেন সঠিক পারিশ্রমিক পান, কাজ পান, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে যেন সুরক্ষিত থাকেন, সেটা দেখা আমাদের কাজ । তাঁর সঙ্গে কোনও কারণে ঝগড়া হলেই তাঁকে সাসপেন্ড করে কাজ থেকে বসিয়ে দেব, এটা হতে পারে না । আমি তাঁর সঙ্গে কাজ নাই করতে পারি । কিন্তু তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হবে কেন ?"
সুব্রত সেন বলেন, "আমাদের দাবি, কেশসজ্জা শিল্পী কাজে ফিরলে তাঁকে যেন কোনওভাবে বাধা না দেওয়া হয় । পছন্দের লোক কাজ পাবে বাকিরা পাবে না । এটা খুবই অস্বস্তির বিষয় ৷ আমরা সাসপেনশন এবং থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে । সহজ কথায় 'সাসপেন্ড করে দেব' এবং 'কার্ড নিয়ে নেব' এর বিরুদ্ধে আমরা ।"
তিনি আরও বলেন, "ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কারও কাজ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কোনও ট্রেড ইউনিয়ন বডির নেই । এখানে যেটা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ বে-আইনি ৷ আমরা আইনের পথে যাচ্ছি । সুরক্ষা বন্ধুতে বলা হয়েছে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে । কিন্তু দুঃখের বিষয়, সুরক্ষা বন্ধুতে যাঁরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন আজ দেখা যাচ্ছে তাঁরাই অভিযুক্ত । ভয়ংকর ব্যাপার ।"
সুব্রতর অভিযোগ, "ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যখন 'সুরক্ষা বন্ধু'-এর কথা ঘোষণা করা হয় তখন বারবার আমরা বলি আমরা ফেডারেশনের একটা পার্ট । আর মাননীয় সভাপতি বলেন, তিনি নাকি জানেনই না আমরা সদস্য কি না । আমাদের সুরক্ষা বন্ধু কমিটি থেকে বাদ রাখা হয় । অথচ, আইনিভাবে আমরা এখনও তাদের মেম্বার ৷ এটা ওনার জানা উচিত ছিল ।"
এদিন, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আরও একটা অভিযোগ সামনে এনেছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র ৷ তাঁর কথায় উঠে আসে আরও একটি দিক। অভিনেত্রীর অভিযোগ, একজন সমকামী মানুষ কিংবা কোনও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সদস্যপদের কার্ড দিতেও টালবাহানা করে ফেডারেশন । তাঁরা কোথায় বসবেন, তা নিয়েও জল্পনা হয় ।