মালদা, 30 জানুয়ারি: দীর্ঘ ন'বছরের অপেক্ষার অবসান ৷ অবশেষে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের সমাবর্তন করানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ ৷ তবে এনিয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা ৷
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত 25টি কলেজকে নিয়ে তিনদিনের আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৷ আগামী 24 থেকে 26 ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ৷ উপস্থিত থাকবেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷
2016 সালে শেষবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ৷ তারপর থেকে কোনও সমাবর্তন না হওয়ায় প্রবল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের ৷ তাঁদের অনেককে মোটা টাকা খরচ করে সেই শংসাপত্র নিতে হচ্ছে ৷ আবার অনেককে কলকাতায় গিয়ে শংসাপত্র নিয়ে আসতে হচ্ছে ৷ এতে যেমন তাঁদের সময় নষ্ট হচ্ছে, গাঁটের কড়িও খরচ হচ্ছে বেশ ভালোই ৷
এমনই একজন অনিরুদ্ধ বাগচী ৷ ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ৷ সম্প্রতি বিহারের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৷ সেই সময় তাঁর স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শংসাপত্রের প্রয়োজন পড়ে ৷ তাঁর কথায়, "ওই সার্টিফিকেট আমি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেয়েছি ৷ কিন্তু তার জন্য 1500 টাকা খরচ হয়েছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু'ধরনের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় ৷ একটির মেয়াদ সাতদিন ৷ তার জন্য খরচ হয় 300 টাকা ৷ আর আসল সার্টিফিকেট পেতে 1500 টাকা জমা দিতে হয় ৷ আবেদনের অন্তত 30 দিন পর সেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ৷"
তিনি আরও বলেন, "এতে আমাদের অনেকের সমস্যা হয়েছে ৷ অনেকেরই চটজলদি সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ছিল ৷ বাধ্যতামূলকভাবে তাদের অস্থায়ী সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে ৷ পরে তারা অবশ্য আসল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে ৷ এতে তাদের 1800 টাকা খরচ হয়েছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর সমাবর্তন হলে এসব ঝামেলা থাকে না ৷ শুধু তাই নয়, সমাবর্তন উৎসবে সবার সঙ্গে সার্টিফিকেট নেওয়ার একটা আলাদা অনুভূতিও রয়েছে ৷"
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএড করেছেন শুচিস্মিতা সরকার ৷ তাঁর কথায়, "আমাকে কলকাতা থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হয়েছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস থেকে তা পাওয়া যায়নি ৷ এতে আমার যেমন সময় নষ্ট হয়েছে, টাকা পয়সাও বেশ খরচ হয়েছে ৷ কল্যাণী কিংবা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা পয়সাতেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ৷ কিন্তু গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট পেতে 1500 টাকা খরচ হয় ৷ প্রতি বছর সমাবর্তন উৎসব হলে পড়ুয়ারা হাতে হাতে শংসাপত্র পেয়ে যেতেন ৷ সেক্ষেত্রে তাঁদের খরচও অনেকটা কমত ৷"
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, "যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে সমাবর্তন একটা মহোৎসব ৷ উত্তীর্ণ সমস্ত পড়ুয়া সেই উৎসবে সম্মানিত হন ৷ শুধু তাই নয়, প্রথম তিনজন স্থানাধিকারীকে পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয় ৷ এতদিন সেই উৎসব না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অবশ্যই বঞ্চিত হয়েছেন ৷ এবার সেই উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে ৷ ইতিমধ্যে রাজ্য শিক্ষা দফতরের অনুমোদন মিলেছে ৷ চলতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উৎসবের আয়োজন করা হবে ৷"
সমস্যা অন্য জায়গায় ৷ নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের অধীনস্ত যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়ে থাকেন রাজ্যপাল ৷ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উৎসব করাতে গেলে তাঁর অনুমতি আবশ্যক ৷ এতদিন অন্তত এই নিয়মই লাগু হয়ে এসেছে ৷ কিন্তু বর্তমানে রাজ্য ও রাজ্যপালের সংঘাত চরমে ৷ রাজ্যের যে কোনও বিষয়েই মুখ ফিরিয়ে রাখছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ এই পরিস্থিতিতে তিনি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবের অনুমতি দেবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ৷
যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি মহল জানাচ্ছে, অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে ৷ আর এনিয়ে কোনও টালবাহানা করা যাবে না ৷ যদি রাজ্যপাল সমাবর্তন উৎসব করানোর অনুমতি না দেন তাহলেও চলবে ৷ শুধুমাত্র রাজ্যের সম্মতি পেলেই চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উৎসবের আয়োজন করা হবে ৷ আশা করা যাচ্ছে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় উপস্থিত হয়ে উৎসবের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী ৷ যদি তেমনটাই হয়, তবে রাজ্যে ব্যতিক্রমী হয়ে থাকবে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ৷
