কলকাতা, 5 অগস্ট: নাট্যজগতে এখনও গড়ে ওঠেনি কোনও ইন্ডাস্ট্রি। নেই কোনও স্বঘোষিত নেতার দাদাগিরি। নেই অযথা নিয়মের বেড়াজাল। নিজেদের অন্যান্য সব কাজ সামলে নিছকই ভালোবাসার টানে থিয়েটার শিল্প বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে একাধিক অভিনেতা, নির্দেশকেরা হাজির হন মঞ্চে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইভ পারফরম্যান্স দেখানোর পর যে খুব বেশি টাকা অর্জন হয় তাও নয়। তবুও সরকারি অনুদান নিতে চায় না অনেক নাট্যদল। একইভাবে আজও নাটকপাড়ায় তৈরি হয়নি কোনও ইন্ডাস্ট্রি। যেটা নিয়ে আগ্রহ, উৎসাহ, তৎপরতা থাকবে সরকারের। এই ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া উঠে এল ইটিভি ভারতের ক্যামেরায়।
সাম্প্রতিককালে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির হাল হকিকত দেখে একালের নাট্য নির্দেশক প্রান্তিক চৌধুরী (ব্যারাকপুর ব্রাত্যজন) বলেন, "আমাদের থিয়েটারে কোনও ইন্ডাস্ট্রি নেই, তাই এখনও শান্তিতে আছি। থাকলে শান্তি থাকত না।" রেডিও জকি তথা অভিনেতা সায়ন ঘোষ এই প্রথম পা রাখলেন নাট্য দুনিয়ায়। তিনি বলেন, "সিনেমার থেকে নাটকে অনেক শান্তি। এখানে স্বার্থ বলতে একটাই, দলবদ্ধ হয়ে একটা ভালো কাজ দেওয়া। এখানে সবাই নিজেদের মতো কাজ করেন। চোখরাঙানির জায়গা নেই।" তবে, এঁরা দুজনেই আবার বলেন, "পেটের কথা ভেবে বলছি, থিয়েটারেও ইন্ডাস্ট্রি আসা দরকার। তাতে জটিলতা বাড়ে বাড়ুক। খেয়ে পরে তো বাঁচব। পকেটে টাকা থাকলে অনেক বড় বড় সমস্যা নিমেষে মেটানো যায়। সমস্যাকে সমস্যা বলে মনে হয় না। কাল কী খাব সেই চিন্তা না থাকলে বাকি সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায়।"
প্রান্তিক চৌধুরী আরও বলেন, "থিয়েটার থেকে সেরকম আয় হয় না। সবাই সরকারের সাহায্য নেয় না। আমরা ব্যারাকপুরের ব্রাত্যজন কোনও সরকার থেকেই অনুদান নিই না। আমরা থিয়েটার কোম্পানিতে বিশ্বাসী। যদিও এই মুহূর্তে করা সম্ভব হচ্ছে না। চেষ্টা করছি।" প্রান্তিকের মতে, "কোনও সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত থাকে যেখানে, সেখানে নতুন কিছু গড়ে উঠতে পারে না। সরকার সব সমান। কেউ বেশি খারাপ, কেউ কম খারাপ।"
পর্ণশ্রী বহুমুখী নাট্যদলের দেবদাস ঘোষ অন্য সুরে বলেন, "থিয়েটারে কোনওদিন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে না। কেন না অনেকে সেটা মন থেকে চায় না। তাতে অনেক লাভ-ক্ষতির অঙ্ক পালটে যাবে। সে অনেক বড় অঙ্ক। এখানে বলার নয়।" প্রসঙ্গত, ওটিটির জমানাতেও বাংলা থিয়েটার তার জায়গায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমনটাই জানান, চন্দন সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতো তাবড় তাবড় নাট্যকাররা ৷
নাট্যকার সুমন ইটিভি ভারতকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "যে সময়ে যে সরকার থাকে তারা তাদের মতো করে সিনেমা, থিয়েটার কন্ট্রোল করে। তবে, তাদের যতটা সিনেমা বা সিরিয়াল প্রীতি রয়েছে ততটা থিয়েটার প্রীতি নেই। আরেকটু থিয়েটার প্রীতি হলে কিছু মানুষ থিয়েটারের মাধ্যমেও পয়সা রোজগার করতে পারত। সহজ কথায় সরকারের সাপোর্ট খুব জরুরি। ব্যবসায়িক মূলধন থেকে আগে নাটক তৈরি হত। সেটাও ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে।"
উল্লেখ্য, বাংলা নাটকের অবস্থান, আয়-ব্যয় নিয়ে কথা বলতে গেলে বলতেই হয়, ন্যাশনাল থিয়েটার যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁদের প্রতিজ্ঞা ছিল, টিকিট বিক্রির টাকা দিয়েই তাঁরা দল চালাবেন। কোনও জমিদার বা বিত্তশালী সম্প্রদায়ের দ্বারস্থ হবেন না। তাতে শিল্পের প্রতি দর্শককের অধিকার পুরো মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৷ ফলে কোনও জমিদার–মহারাজাদের জন্য নাটককে আর অপেক্ষা করতে হয়নি। নাটক যথাসময়ে শুরু হত এবং দর্শকেরা টিকিট কেটে নাটক দেখতেন। পরে অবশ্য সেই ধারা বজায় থাকেনি। আজ নাটক দেখতে হলে আছে অনলাইন বুকিং-এর সুবিধা। আছে থার্ড বেল। আজকাল বুক মাই শো-তেও মিলছে নাটকের টিকিট। তা হলে কি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠার দিকেই এগোচ্ছে থিয়েটার? প্রশ্নের উত্তর দেবে সময় ৷