ETV Bharat / entertainment

'কৃষ্ণেন্দুর কুষ্ঠ হলে কি ভালোবাসার অপমান করা হয় না ?' উত্তমের জন্য চিত্রনাট্যে বদল সুচিত্রার - SUCHITRA SEN DEATH ANNIVERSARY

'সপ্তপদী' উপন্যাসে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নায়ক কৃষ্ণেন্দুকে শেষে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হিসেবে দেখান। দর্শক মেনে নেবে না, জানতেন উত্তম কুমার-সুচিত্রা। এরপরেই দৃশ্যে বদল আনার কথা বলেন মহানায়িকা।

Etv Bharat
সুচিত্রা সেন- উত্তম কুমার (ফাইল ছবি)
author img

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : Jan 17, 2025, 2:40 PM IST

কলকাতা, 17 জানুয়ারি: তাঁর চোখের চাহনিতে কখনও দেখা যেত স্পর্ধা আবার কখনও ভালোবাসা ৷ ঠোঁটের কোণে কখনও প্রাণ খোলা হাসি আবার কখনও তাচ্ছিল্যতা ৷ বাংলা সিনেমার মহানায়িকা তিনি ৷ যিনি আজও আপামর বাংলা সিনেপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় জায়গা দখল করে রেখেছেন ৷ সেই মহান শিল্পীর আজ 11 তম প্রয়াণবার্ষিকী

শুধু জন্মদিন বা মৃত্যুদিন নয়, বছরের যে কোনও সময়েই তিনি প্রাসঙ্গিক। কখনও রীনা ব্রাউন তো কখনও ইন্দ্রাণী আবার কখনও অর্চনা। তাঁর অভিনীত প্রত্যেকটি চরিত্রই মানবহৃদয়ে আলাদা স্থান জুড়ে রয়েছে। 'সপ্তপদী'তে সুচিত্রা সেন অনেকটাই অন্যরকম। তিনি রিনা ব্রাউন। বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা যায়, সেই সময়ে উত্তম-সুচিত্রার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে।

কিন্তু অভিনয়ের সময়ে সামান্যতম রোম্যান্টিকতার অভাব দেখা যায়নি কারোর মধ্যেই। বাংলা সিনেমার সেরা দশ রোম্যান্টিক দৃশ্যের মধ্যে স্কুটারে চেপে 'এই পথ যদি না শেষ হয়' গানের দৃশ্য একটি। আর সেই দৃশ্য কোনও আউটোডোরে তোলা হয়নি। হয়েছিল স্টুডিয়োর অভ্যন্তরেই।

শোনা যায়, এই ছবির পরিচালক অজয় করের সঙ্গে বসে ব্যক্তিগতভাবে চিত্রনাট্যের অনেক বদল ঘটিয়েছিলেন মহানায়িকা। নিজের চরিত্রের বহু বদল ঘটান তিনি। ঠিক যেমনভাবে তিনি এই ছবির শেষটা পাল্টাতে চেয়েছিলেন। মূল 'সপ্তপদী' উপন্যাসে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নায়ক কৃষ্ণেন্দুকে শেষে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হিসেবে দেখিয়েছিলেন। উত্তম কুমার ভালোই জানতেন তাঁকে বাংলা সিনেমার দর্শক এভাবে মেনে নেবে না। জানতেন সুচিত্রা সেনও। অভিনেত্রী এই দৃশ্যে বদল আনার কথা বললে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না লেখক। ওদিকে উত্তম কুমারও মরিয়া।

তিনি ভাই তরুণ কুমারকে নিয়ে হাজির হন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। লেখককে বোঝানোর দায়িত্ব দেন ভাইকে। তরুণ কুমার গল্পের শেষটা বদলানোর অনুরোধ জানালে লেখক রাজি হতে চাননি। বলেন, "এই জন্য আমি সিনেমাওয়ালাদের গল্প দিতে চাই না ভাই।" তবে, অনেকটা সময় নিয়ে তিনি পালটে দেন গল্পের শেষ দৃশ্য। এর নেপথ্য নায়িকা অবশ্য সুচিত্রা সেন। কীভাবে? সেদিন যে তাঁর যুক্তিই তুলে ধরেন তরুণ কুমার।

সুচিত্রা সেনের যুক্তি ছিল- "যে মানুষটা সারাজীবন অন্যের সেবায় জগতের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন সেই বিবেকানন্দের যদি কুষ্ঠ হত আপনি কি তা সহজে মেনে নিতে পারতেন? ঠিক তেমনিই যে কৃষ্ণেন্দু ঘর বাড়ি ছেড়ে রীনা ব্রাউনকে ভালোবেসে পথে নামল এমনকী নিজের ধর্ম থেকে সরে গেল, মৃত্যুপথযাত্রী রীনাকে বাঁচিয়ে তুলল সেই কৃষ্ণেন্দুর কুষ্ঠ হলে কি ভালোবাসার অপমান করা হয় না? লোকে কি তাতে মনে করবে না ভালোবাসা পাপ?"

সুচিত্রা সেনের এই যুক্তি তরুণ কুমারের কাছে শুনে তারাশঙ্করের স্ত্রী'ই স্বামীকে অনুরোধ করেন গল্পের শেষটা বদলে দেওয়ার জন্য। সেদিন তরুণ কুমার সুচিত্রা সেনের বক্তব্য তুলে না ধরলে হয়ত অন্যরকম হত 'সপ্তপদী'। এখানেই শেষ নয়, রীনা ব্রাউনের চরিত্রটিও অদল বদলের কথা বলেন সুচিত্রা। তাঁর যুক্তি ছিল উত্তম-সুচিত্রার এতদিনের রোম্যান্টিক ইমেজের মতো করে রীনা ব্রাউনকে গড়ে তোলা যাবে না। দেখাতে হবে একেবারে আলাদা ইমেজে। সেই কারণেই বহুবার চিত্রনাট্যকার নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়কে চিত্রনাট্য বদলাতে হয় এই ছবির। মহানায়ক খুব একটা আপত্তি তোলেননি কোনওকিছুতেই।

তবে, শেক্সপিয়ারের 'ওথেলো' নাটকের দৃশ্যে সুচিত্রা সেন যখন জেনিফার কাপুরের কণ্ঠে লিপ দিতে চাননি, চাইছিলেন ইংরেজি সংলাপ নিজেই বলবেন, তখন বেঁকে বসেন উত্তম। ওদিকে সুচিত্রাও এককাট্টা। তিনিও মানবেন না। ফলে, পিছিয়ে যায় শুটিং। পরে অজয় করের অনুরোধে মেনে নেন সুচিত্রা। উত্তম কুমার সেই নাটকে উৎপল দত্তর কণ্ঠে লিপ দেন। নাটকটির নির্দেশনা দেন উৎপল দত্ত। সেই সময়ে শত মনোমালিন্য চলা সত্ত্বেও সুচিত্রা সেন এই ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেন তা মুক্তকণ্ঠে বলতেন উত্তম কুমার।

কলকাতা, 17 জানুয়ারি: তাঁর চোখের চাহনিতে কখনও দেখা যেত স্পর্ধা আবার কখনও ভালোবাসা ৷ ঠোঁটের কোণে কখনও প্রাণ খোলা হাসি আবার কখনও তাচ্ছিল্যতা ৷ বাংলা সিনেমার মহানায়িকা তিনি ৷ যিনি আজও আপামর বাংলা সিনেপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় জায়গা দখল করে রেখেছেন ৷ সেই মহান শিল্পীর আজ 11 তম প্রয়াণবার্ষিকী

শুধু জন্মদিন বা মৃত্যুদিন নয়, বছরের যে কোনও সময়েই তিনি প্রাসঙ্গিক। কখনও রীনা ব্রাউন তো কখনও ইন্দ্রাণী আবার কখনও অর্চনা। তাঁর অভিনীত প্রত্যেকটি চরিত্রই মানবহৃদয়ে আলাদা স্থান জুড়ে রয়েছে। 'সপ্তপদী'তে সুচিত্রা সেন অনেকটাই অন্যরকম। তিনি রিনা ব্রাউন। বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা যায়, সেই সময়ে উত্তম-সুচিত্রার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে।

কিন্তু অভিনয়ের সময়ে সামান্যতম রোম্যান্টিকতার অভাব দেখা যায়নি কারোর মধ্যেই। বাংলা সিনেমার সেরা দশ রোম্যান্টিক দৃশ্যের মধ্যে স্কুটারে চেপে 'এই পথ যদি না শেষ হয়' গানের দৃশ্য একটি। আর সেই দৃশ্য কোনও আউটোডোরে তোলা হয়নি। হয়েছিল স্টুডিয়োর অভ্যন্তরেই।

শোনা যায়, এই ছবির পরিচালক অজয় করের সঙ্গে বসে ব্যক্তিগতভাবে চিত্রনাট্যের অনেক বদল ঘটিয়েছিলেন মহানায়িকা। নিজের চরিত্রের বহু বদল ঘটান তিনি। ঠিক যেমনভাবে তিনি এই ছবির শেষটা পাল্টাতে চেয়েছিলেন। মূল 'সপ্তপদী' উপন্যাসে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নায়ক কৃষ্ণেন্দুকে শেষে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হিসেবে দেখিয়েছিলেন। উত্তম কুমার ভালোই জানতেন তাঁকে বাংলা সিনেমার দর্শক এভাবে মেনে নেবে না। জানতেন সুচিত্রা সেনও। অভিনেত্রী এই দৃশ্যে বদল আনার কথা বললে কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না লেখক। ওদিকে উত্তম কুমারও মরিয়া।

তিনি ভাই তরুণ কুমারকে নিয়ে হাজির হন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। লেখককে বোঝানোর দায়িত্ব দেন ভাইকে। তরুণ কুমার গল্পের শেষটা বদলানোর অনুরোধ জানালে লেখক রাজি হতে চাননি। বলেন, "এই জন্য আমি সিনেমাওয়ালাদের গল্প দিতে চাই না ভাই।" তবে, অনেকটা সময় নিয়ে তিনি পালটে দেন গল্পের শেষ দৃশ্য। এর নেপথ্য নায়িকা অবশ্য সুচিত্রা সেন। কীভাবে? সেদিন যে তাঁর যুক্তিই তুলে ধরেন তরুণ কুমার।

সুচিত্রা সেনের যুক্তি ছিল- "যে মানুষটা সারাজীবন অন্যের সেবায় জগতের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন সেই বিবেকানন্দের যদি কুষ্ঠ হত আপনি কি তা সহজে মেনে নিতে পারতেন? ঠিক তেমনিই যে কৃষ্ণেন্দু ঘর বাড়ি ছেড়ে রীনা ব্রাউনকে ভালোবেসে পথে নামল এমনকী নিজের ধর্ম থেকে সরে গেল, মৃত্যুপথযাত্রী রীনাকে বাঁচিয়ে তুলল সেই কৃষ্ণেন্দুর কুষ্ঠ হলে কি ভালোবাসার অপমান করা হয় না? লোকে কি তাতে মনে করবে না ভালোবাসা পাপ?"

সুচিত্রা সেনের এই যুক্তি তরুণ কুমারের কাছে শুনে তারাশঙ্করের স্ত্রী'ই স্বামীকে অনুরোধ করেন গল্পের শেষটা বদলে দেওয়ার জন্য। সেদিন তরুণ কুমার সুচিত্রা সেনের বক্তব্য তুলে না ধরলে হয়ত অন্যরকম হত 'সপ্তপদী'। এখানেই শেষ নয়, রীনা ব্রাউনের চরিত্রটিও অদল বদলের কথা বলেন সুচিত্রা। তাঁর যুক্তি ছিল উত্তম-সুচিত্রার এতদিনের রোম্যান্টিক ইমেজের মতো করে রীনা ব্রাউনকে গড়ে তোলা যাবে না। দেখাতে হবে একেবারে আলাদা ইমেজে। সেই কারণেই বহুবার চিত্রনাট্যকার নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়কে চিত্রনাট্য বদলাতে হয় এই ছবির। মহানায়ক খুব একটা আপত্তি তোলেননি কোনওকিছুতেই।

তবে, শেক্সপিয়ারের 'ওথেলো' নাটকের দৃশ্যে সুচিত্রা সেন যখন জেনিফার কাপুরের কণ্ঠে লিপ দিতে চাননি, চাইছিলেন ইংরেজি সংলাপ নিজেই বলবেন, তখন বেঁকে বসেন উত্তম। ওদিকে সুচিত্রাও এককাট্টা। তিনিও মানবেন না। ফলে, পিছিয়ে যায় শুটিং। পরে অজয় করের অনুরোধে মেনে নেন সুচিত্রা। উত্তম কুমার সেই নাটকে উৎপল দত্তর কণ্ঠে লিপ দেন। নাটকটির নির্দেশনা দেন উৎপল দত্ত। সেই সময়ে শত মনোমালিন্য চলা সত্ত্বেও সুচিত্রা সেন এই ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেন তা মুক্তকণ্ঠে বলতেন উত্তম কুমার।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.