কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর: চন্দন সেন, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সঞ্জিতার পর সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন পরিচালক শুভদীপ (বাবান) গুহ। থিয়েটারের মঞ্চে এবং বাংলা ছবিতে তাঁর সঙ্গীত পরিচালনা এবং আবহ আলাদা মাত্রা সংযোজন করে।
ইটিভি ভারতের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "এটা তো রাজ্য সরকারের দেওয়া পুরস্কার, নাট্য অ্যাকাডেমিরও নয়। এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না। খুব দুঃখ, যন্ত্রণা আর কষ্ট থেকে ফিরিয়ে দিলাম আমি সম্মানটা। কিছু উপায় ছিল না। যে সরকার থেকে এই পুরস্কার পেয়েছিলাম সেই দলেরই প্রতিনিধি যখন বলছেন বিচার চাইতে হলে, পথে নামতে হলে নাকি পুরস্কার ফেরত দিয়ে দিতে হবে। তাই ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া তো উপায় নেই। কেন না লড়াই তো করবই। পথে তো নামবই। বিচার তো চাইবই। তাই ফিরিয়েই দিলাম।"
শুভদীপ গুহ একজন প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত পরিচালক। থিয়েটারে একজন অভিনেতা কীভাবে নাটকের নির্মিত আবহকে ধারণ করবেন, কিংবা আবহ, অভিনেতাকে কীভাবে সহযোগিতা করবে, এইসব নিয়ে তাঁর অগাধ জ্ঞান। কাঞ্চন মল্লিকের প্রতি তাঁর কোনও বার্তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ওঁকে আমার কিছুই বলার নেই আর।"
শুভদীপ গুহর পুরস্কার ফেরত প্রসঙ্গে ব্যাত্য বসু বলেন, "এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেকেরই স্বাধীন সত্তা রয়েছে। কেউ তাঁর পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে যাঁর পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তিনি একজন বামপন্থী নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। এই আমলেই তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কার দেওয়ার আগে তিনি ডানপন্থী না বামপন্থী তা ভাবিনি আমরা।"
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার ফেরালেন বিশিষ্ট অভিনেতা সুপ্রিয় দত্ত ৷ তিনি নাট্য অ্যাকাডেমিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন এই কথা ৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, "গত 24 জানুয়ারি 2021 সালে শিশির মঞ্চে আমি বিশিষ্ট চরিত্রাভিনেতা (পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক বিভাবগে) হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমী পুরস্কারে ভূষিত হই ৷ কিন্তু বর্তমানে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনার পর শাসকের ভূমিকা আমায় স্তম্ভিত করেছে ৷ শাসক এবং তার পদলেহনকারী পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে সত্যকে আড়াল করতে তারা কতটা মরিয়া ৷ এমতাবস্থায় এক কন্যা সন্তানের পিতা হিসেবে আমি ভীত, সন্ত্রস্ত ৷"
তিনি আরও লেখেন, "আমার বন্ধু, বর্তমানে শাসকের প্রতিনিধি কাঞ্চন মল্লিকের কথায় বুঝলাম শাসক আসলে পুরস্কার এবং সম্মানের বিনিময়ে মোসায়েব খরিদ করে ৷ শাসক চায় একদল অমেরুদণ্ডী চাটুকারের ব্যাটেলিয়ন ৷ কাঞ্চনবাবুর এই বিবৃতি আসলে সরকারেরই ঘোষিত (বা অঘোষিত) আদেশনামা- হয় সত্য নয় সম্মান ৷ এমতাবস্থায় আমি সত্যের পথই বেছে নিলাম ৷ আমি আমার প্রাপ্ত পুরস্কার এবং পুরস্কারমূল্য সবকিছুই সরকারকে ফেরত গিয়ে গ্লানিমুক্ত হতে চাই ৷"