উজ্জয়িনী, 8 মার্চ: আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে মহাশিবরাত্রি ৷ তবে মধ্যপ্রদেশের উজ্জিয়িনীর মহাকাল মন্দিরে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে 29 ফেব্রুয়ারি থেকে ৷ 9 মার্চ পর্যন্ত চলবে শিব-পার্বতীর বিয়ের এই উৎসব ৷ 9 দিন ধরে বিভিন্ন রূপে সাজিয়ে পুজো করা হবে মহাকালের । 8 মার্চ শুক্রবার শিবরাত্রির উৎসবে ঢাকঢোল-সহ শোভাযাত্রা বের করে শিবের বিয়ে সম্পন্ন হবে ।
ভগবান মহাকালকে হলুদ এবং চন্দনের মিশ্রণ লাগানোর পরে শিববরাত্রি উৎসব শুরু হয় । এরপর পণ্ডিত-পুরোহিতরা মহাকালের মন্ত্র পাঠ করে পুজো ও অভিষেক করেন । ভগবান মহাকাল 9 দিন ধরে বিভিন্ন রূপে সজ্জিত থাকেন । যা দেখতে এই সময় লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম হয় উজ্জয়িনীতে ৷ এখানে মহাশিবরাত্রি পালিত হবে 8 মার্চ । এই উপলক্ষে মন্দিরের দরজা একটানা 44 ঘণ্টা খোলা থাকবে । বছরে একবার এই সময় অর্থাৎ শিবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে দুপুর 12টায় ভস্মারতি করা হয় । এরপর রাতে শয়ন আরতির পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে শিবরাত্রি উৎসব শেষ হয় । দুর্গা নবরাত্রির মতো মহাকালেশ্বর মন্দিরে পালিত হয় শিব নবরাত্রি উৎসব ৷ 29 ফেব্রুয়ারি ফাল্গুন কৃষ্ণ পঞ্চমী থেকে শুরু হয় শিব নবরাত্রি ৷ যা চলে মহাশিবরাত্রির পরদিন পর্যন্ত ।
মন্দির পরিচালনা কমিটির প্রশাসক সন্দীপ কুমার সোনি জানান যে, 8 মার্চ মহাশিবরাত্রির উৎসবে ভস্ম আরতির জন্য দরজা খোলা হবে রাত আড়াইটেয় । ভস্মারতির পর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে 8টা 15 পর্যন্ত বিশেষ আরতি, সাড়ে 10টা থেকে 11টা 15 পর্যন্ত ভোগ আরতি, দুপুর 12টা থেকে উজ্জয়িনী তহসিলের পক্ষ থেকে পুজো ও অভিষেক করা হবে । এরপর বিকেল 4টেয় হোলকার ও সিন্ধিয়া রাজ্যের পুজো এবং সন্ধ্যায় পঞ্চামৃত পুজোর পর প্রতিদিনের সন্ধ্যা আরতির মতো ভগবান মহাকালেশ্বরকে গরম মিষ্টি দুধ নিবেদন করা হবে । সন্ধে 7টা থেকে রাত 10টা পর্যন্ত কোটিতীর্থ কুণ্ডের তীরে উপবিষ্ট শ্রী কোটেশ্বর মহাদেবের পুজো, সপ্তধন্য, ফুলের মুকুট অর্ঘ্য (সেহরা) অর্পণের পর আরতি করা হবে ।
মহাকালেশ্বরের মহাঅভিষেক পুজো চলবে 9 মার্চ রাত 11টা থেকে পরদিন অর্থাৎ 10 মার্চ সকাল 6টা পর্যন্ত । যেখানে রুদ্রপাঠ ও বিভিন্ন মন্ত্রের মাধ্যমে 11 জন ব্রাহ্মণ ভগবান মহাকালের অভিষেক করবেন । এরপর ভস্ম প্রয়োগ, পাঁচ রকমের ফলের রস দিয়ে অভিষেক, পঞ্চামৃত পুজো হবে (101 লিটার দুধ, 31 কেজি দই, 21 কেজি খণ্ডসারি, 21টি মধু, 15 কেজি ঘি), গঙ্গাজল, গোলাপজল ইত্যাদি মিশ্রিত দুধে অভিষেক হবে । এরপর দেবাদিদেবকে নতুন পোশাক পরানো হবে ও সপ্তাধ্যায় দেওয়া হবে । এর মধ্যে থাকবে চাল, মুগ, তিল, মসুর, গম, যব প্রভৃতি । পরবর্তীতে মহাকালেশ্বর মন্দিরের পুরোহিতরা ভগবানকে অলংকৃত করবেন এবং একটি ফুলের মুকুট (সেহরা) পরাবেন ।
বাবা মহাকালকে চন্দ্র মুকুট, ছত্র, ত্রিপুন্ড এবং অন্যান্য গয়না দিয়ে সাজানো হবে । একটি রূপোর মুদ্রা ও বেলপাতা উৎসর্গ করা হবে । প্রভুর সেহরা আরতি করা হবে এবং বিভিন্ন মিষ্টি-সহ পাঁচটি শুকনো ফল প্রভুকে নিবেদন করা হবে । সেহরা দর্শনের পর দুপুর 12টায় ভস্ম আরতি হবে । এটি বছরে একবারই হয় ৷ 9 মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় পুজো, অলংকরণ, সন্ধ্যা ও শয্যা আরতির পর ভগবান শ্রী মহাকালেশ্বরের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে । শিবরাত্রি উপলক্ষে উপরোক্ত পূজার্চনা করার জন্য মন্দির প্রায় 44 ঘণ্টা খোলা থাকবে ৷
প্রশাসক সন্দীপ সোনি জানান, মহাশিবরাত্রি উৎসবের জন্য ইন্দোর এবং দেওয়াস থেকে আসা যানবাহনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে । যার মধ্যে প্রথমে কর্করাজ পার্কিংয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তারপরে মেঘদূত পার্কিং, ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাউন্ড, শান্তিধাম এবং তপোভূমি । বদনগর থেকে আসা গাড়ির জন্য কার্তিক মেলার জায়গায় পার্কিং থাকবে । এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস বিনামূল্যে চালানো হবে । যার ফলে মন্দিরের কাছে ভক্তদের আসা-যাওয়ার সুবিধা হবে । রেলওয়ে এবং বাস স্টেশনগুলিতে 24 ঘণ্টা হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে । মন্দির চত্বর-সহ বিভিন্ন স্থানে 25টি হেলথ ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে । যেখানে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন তথ্য দিতে তিনজন কাজ করবেন ৷ বিভিন্ন স্থানে ডিসপ্লে বোর্ডও বসানো হবে । যেখানে ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য পার্কিং-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য পাবেন ৷
আরও পড়ুন :