উজ্জয়িনী, 30 ডিসেম্বর: পরনে লাল শাড়ি, গলায় মালা ৷ কনের সাজে মণ্ডপে বসে আছেন তিন যুবতী ৷ আর শেরওয়ানি ও মাথায় পাগড়ি পরে তৈরি বর ৷ তবে, তাঁরা কেউ ভারতীয় নন ৷ সকলেই বিদেশি ৷ তাঁদের কেউ ইতালির, কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, তো আবার কোনও যুগল পেরুর ৷ তাঁরা বিয়ে করলেন ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে ৷ তাও আবার বৈদিক মতে ৷
রবিবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর পরামানন্দ যোগ আনন্দময় পীঠের সদস্যরা ৷ সেখানেই এই তিন যুগল বৈদিক মতে বিয়ে করেছেন ৷ উজ্জয়িনীর মহাবালেশ্বর মন্দিরে মহাকালের দর্শনের পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তাঁরা ৷ আর পাত্র-পাত্রীর পরিচয় হল, ড্যারিয়ো ওরফে বিষ্ণু আনন্দ এবং মার্টিনা ওরফে মা মঙ্গলানন্দ ৷ বাকি দুই যুগল হলেন, ইয়ান (আচার্য রামদাস আনন্দ) ও গ্যাব্রিয়েলা (মা সোমানানন্দ) এবং মাউরিজিয়ো (প্রকাশানন্দ) ও নিলমাস (মা নিত্যানন্দ) ৷
বিয়ে উজ্জয়িনীতে হলেও, গায়ে হলুদ, মেহেন্দি ও সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়েছে ইন্দোরে ৷ বিয়ের একদিন আগে গায়ে হলুদ ও মেহেন্দির অনুষ্ঠান হয় দিনের বেলা ৷ এরপর সন্ধেয় মহিলাদের সঙ্গীত অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় ৷ পরেরদিন উজ্জয়িনী পৌঁছে ঘোড়ায় চড়ে বর-কনে পরামানন্দ যোগ আনন্দময় পীঠের বিয়ের মণ্ডপে যান ৷ তাঁদের সঙ্গে বরযাত্রীরাও ছিলেন ৷ মালাবদল, বৈদিক মন্ত্র পাঠ ও সাত পাক ঘুরে বিয়ে করেন বিদেশি তিন যুগল ৷
ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা
পরমানন্দ ইনস্টিটিউট অফ যোগা সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চে যোগ ব্যায়াম শিখতে ও তা নিয়ে গবেষণা করতে এসেছিলেন তাঁরা ৷ যোগ ব্যায়াম শেখা এবং তার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি, ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও চর্চা শুরু করেছিলেন এই বিদেশি যুগলরা ৷ আর সেখান থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় তাঁদের ৷ ফলে সেখান থেকেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় রীতি মেনে বিয়ে করবেন ৷
পরমানন্দ যোগ ইনস্টিটিউটের মহারাজ উমানন্দ বলেন, "তাঁরা এখানে এসেছিলেন যোগ ব্যায়াম শিখতে ৷ তারপর ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় ৷ এমনকি সনাতন ধর্ম নিয়েও চর্চা শুরু করেন এবং হিন্দু নাম ধারণ করেন ৷ বিয়ের শেষে, বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে পুজো করেন তাঁরা ৷ সেই সঙ্গে পূর্ণ আস্থা রেখে হিন্দু নিয়মরীতি পালনের অঙ্গীকার করেছেন ৷"
তবে, বৈদিক মতেই কেন বিয়ে করলেন এই তিন বিদেশি যুগল ? এই নিয়ে উমানন্দ মহারাজ জানান, বিদেশিদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা প্রবল থাকে ৷ সেই সম্ভাবনা দূর করতে বৈদিক মতে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ আর তাঁরা এতে সহমতপোষণ করেন ৷ উল্লেখ্য, ওই তিন যুগলের যোগ শিক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ আগামী 3 জানুয়ারি তাঁরা নিজেদের দেশে ফিরে যাবেন ৷ সেখানে তাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতি এবং যোগচর্চার প্রচার করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি ৷