বিশেষত দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর থেকেই 'দীর্ঘস্থায়ী কোভিড' কথাটি বারবার উঠে এসেছে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় (Experts spoke a lot about Long COVID conditions post second wave) ৷ অনেক বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে পরিচিত নন ৷ কিন্তু ওমিক্রন যার উপসর্গ দেখে মনে হয় সাধারণ সর্দি কাশির মতই, তাও কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে যেতে পারে ৷
সুস্থ হওয়ার পরও সমস্যার কারণ হতে পারে 'দীর্ঘস্থায়ী কোভিড':
শরীর থেকে ভাইরাস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার কারণে অনেকের দেহেই সংক্রমণের বিভিন্ন উপসর্গ থেকে যায় ৷ যেমন অনেকেই জানান কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর একটু হাঁটাহাঁটি করতে গেলেই হাঁপিয়ে যান তাঁরা ৷ এখনও পর্যন্ত করোনা থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ওপর এত জোর দিতে হয়েছে চিকিৎসকদের যে তার দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি কি হতে পারে তা নিয়ে তেমন বিস্তারিত গবেষণা করার সুযোগ হয়নি ৷ এবার এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত ভাবনার সময় এসেছে ৷
হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অফ মেডিসিন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তথা গবেষক এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এ কে অরুণ এবিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন ৷ তাঁর মতে, কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালেও এক দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা রেখে যায় ৷ তাঁর অনেক রোগীই কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও একটু হাঁটাহাঁটি করতে গেলেই হাঁপিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন ৷ তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত করোনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর ওপরেই বেশি জোর দিতে হয়েছে চিকিৎসকদের তবে এখন ক্রমশ এটা স্বীকৃতি পাচ্ছে যে করোনার একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে ৷
দীর্ঘস্থায়ী কোভিড ঠিক কী ?
দীর্ঘস্থায়ী কোভিড-কে এখনও সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি তবে সাধারণভাবে এর উপসর্গগুলি হল, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং ব্রেন ফগ ৷ এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সর্দি কাশি, পেশির টান, গাঁটে ব্যথা, শোনার এবং দেখার সমস্যা, মাথার যন্ত্রণা, জিহ্বার স্বাদ পরিবর্তন, ফুসফুস, কিডনি এবং হৃদপিন্ডের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাও হতে পারে এই কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কারণে ৷ গন্ধের কথা বলতে গেলে এক্ষেত্রে অনেকেরই পারোসমিয়ার সমস্যা হতে পারে যেখানে ঘ্রাণের অনুভূতি পরিবর্তিত হয়ে যায় ৷ আবার দ্বিতীয় তরঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই জানিয়েছেন ভীষণভাবে চুল ঝরে যাচ্ছে তাঁদের ৷
শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মানসিক সমস্যারও সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই তাঁদের মধ্য়ে উদ্বেগ, মৃত্যুভয়, একা থাকার ভয়, পরিষ্কারভাবে চিন্তাভাবনা করার সমস্যা দেখা যাচ্ছে ৷ শুধু যারা আইসিইউতে ছিলেন তাঁদের মধ্য়েই যে দীর্ঘস্থায়ী করোনার প্রভাব দেখা যাচ্ছে তা কিন্তু নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দশজনের আক্রান্তের মধ্যে অন্তত একজনের এই সমস্যা হচ্ছেই ৷
কিভাবে ভাইরাস এই দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে :
কিছু গবেষকের মতে ভাইরাসের যে অবশিষ্ট অংশ শরীরে থেকে যায় তার কারণেই পরবর্তীতে এই সমস্যা দেখা দেয় ৷ যদিও রোগমুক্তির সঙ্গে ভাইরাসের বেশিরভাগ অংশই শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় ৷ কিন্তু কিছু অংশ রয়ে গেলেই এই বিপত্তি ৷ করোনা ভাইরাস সরাসরি শরীরের বিভিন্ন কোষকে সংক্রমিত করতে পারে এবং এমন একটি প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ট্রিগার করে দিতে পারে যা অতি সক্রিয় যার জেরে শরীরের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ৷ হু-এর মতে করোনা মুক্তির পরও কোনও ব্যক্তির অল্প বয়সেই হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ আরও একটি সমস্যা তৈরি করতে পারে অতি সক্রিয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা ভাইরাসকে তো আক্রমণ করেই তার সঙ্গে শরীরের বেশ কিছু টিস্যুরও মারাত্মক ক্ষতি করে দেয় ৷
আরও পড়ুন : সন্তানকে অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখার 5টি সহজ উপায়
হোমিওপ্যাথি কি এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে ?
অরুণবাবু বলেন, "বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি বেশ কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করেছি এবং ভাল ফল পাচ্ছি ৷ রোগীদের পরিস্থিতি অনুযায়ী যে যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলি হল আর্সেনিকাম অ্যালবাম, অ্যাসিড সারকোলাক্টিকাম, বেলাডোনা, ব্রায়োনিয়া, ক্যামফোরা, অক্সিলোকোসিনাম প্রভৃতি ৷" তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয় ৷ কারণ সকলের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিস্থিতি এক নয় ৷