রায়গঞ্জ, 28 ফেব্রুয়ারি : শারীরিক অক্ষমতাকে দূরে সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তির সাহায্যে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন রায়গঞ্জের শিক্ষিকা শোভা মজুমদার । অসংখ্য শিশুর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার মহান কাজে ব্রতী হয়েছেন তিনি । যদিও হাত নয়, পা দিয়ে লিখে ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের জীবনের প্রথম পাঠ দিচ্ছেন তিনি । আর পাঁচটা শিক্ষক-শিক্ষিকার মতো হাতে লিখে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করাতে না পারলেও, ‘শোভা ম্যাডাম’ আজ কচিকাঁচাদের কাছে অনুপ্রেরণা ।
তিনি নারী, তিনি সর্ব শক্তিমান ৷ কথায় বলে, নারী দশভুজা ৷ এমনই এক দশভুজা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কাশীবাটির শোভা মজুমদার ৷ ছোটো থেকেই তার দু’টি হাতেই রয়েছে প্রতিবন্ধকতা ৷ জীবনধারণের কোনও কাজই ওই দুই হাত দিয়ে করতে পারেন না তিনি ৷ দু’টি হাত অক্ষম হয়ে যাওয়া শোভা কীভাবে লিখবেন, তা নিয়ে যখন পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত তখন নিজেই নিজের দুই পা ব্যবহার করে লিখতে শুরু করেন। প্রথমদিকে অত্যন্ত কষ্ট হলেও, পরবর্তীকালে পায়ের সাহায্যে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ির অন্যান্য কাজও করতে শুরু করেন শোভা৷ মায়ের চেষ্টা ও নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে একে একে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছেন সফলভাবে ৷
টানাটানির সংসারে এমন শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ের উপেক্ষিত হয়ে থাকার ছবি আকছার দেখা যায় ৷ কিন্তু, ছোটো থেকেই দু’চোখ ভরা স্বপ্ন শোভার৷ তাই সব বাধা পেরিয়ে 2011 সালে রাঙ্গাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন তিনি ৷ স্কুলের চাকরির শুরুটা খুব একটা সুবিধার ছিল না তাঁর কাছে ৷ অভিভাবকদের একাংশ শোভাদেবীর কর্মক্ষমতা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ৷ সেইসব চিন্তা দূর করেছেন তিনি ৷ ভরসা জুগিয়েছেন স্কুলের সহ শিক্ষিকাদেরও ৷ অনুপ্রেরণা হয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ৷ পায়ে লিখেই কচিকাঁচাদের অ-আ-ক-খ শেখাচ্ছেন৷ স্কুলের পড়ুয়াদেরও পছন্দের শিক্ষিকা শোভা ম্যাডাম ৷
রাঙ্গাপুকুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুক্লা সরকার দাস বলেন, ‘‘শোভা আমাদের অত্যন্ত ভরসার মানুষ ৷ আমাদের কখনোই মনে হয় না উনি হাত দিয়ে কোনও কাজ করতে পারবেন না ৷ বাকিদের মতোই বাচ্চাদের পড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করতে পারেন ৷ শোভা মানে আমাদের কাছে শক্তি, চ্যালেঞ্জ ৷ প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত, তাঁদের ছেলে-মেয়েদের শোভার সম্পর্কে জানানো ৷’’
শোভাদেবীর সহ-শিক্ষিকা পিঙ্কি দাস বলেন, ‘‘শোভাদি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা ৷ ওঁর জীবন-সংগ্রাম আমাদের কাছে একটা শিক্ষা ৷ মানুষ শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করেন ৷ শোভাদি এসব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন ৷ এটা অবশ্যই আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা ৷’’
ছাত্রী শিউলি বর্মণ শোভা ম্যাডামের প্রশংসায় বলে, "আমাদের শিক্ষিকা অত্যন্ত ভালোভাবে আমাদের পড়াশোনা করিয়ে থাকেন। তাঁর পায়ে লেখার কারণে আমাদের কখনোই সমস্যায় পড়তে হয়নি।"
শোভা মজুমদারের মতো মানুষ জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে নেই ৷ পর্বতসমান বাধা-বিপত্তি পার করছেন মনের জোরে ৷ অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের ৷