কামদুনি, 10 অক্টোবর: "টুম্পা, মৌসুমীরা পথের কাঁটা রাজ্য সরকারের । সেই কারণে ওরা চাইছে, এই দুনিয়া থেকে আমাদের সরিয়ে দিতে ৷" কলকাতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আগে মঙ্গলবার এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কামদুনির প্রতিবাদী মুখ টুম্পা কয়াল । এদিন কলকাতা রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,"রাজ্য সরকার তো কখনও চাইনি কামদুনি মামলায় দোষীদের সাজা হোক । তারা যদি সত্যিই দোষীদের সাজা চাইতো তাহলে কখনই এই রায় দেওয়া হত না হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে । রাজ্য সরকার সবসময় চেয়েছে দোষীরা বাইরে বেরিয়ে আসুক । সেই কারণে চার অভিযুক্ত খালাস পেয়ে গিয়েছে । আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করি না। টুম্পা,মৌসুমীদের নিরাপত্তার চেয়ে কামদুনির গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। ওরা আমাদের মেরে দিলে মেরে দেবে !রাজ্য সরকারও সেটাই চাইছে,পথের কাঁটা সরাতে ৷"
প্রসঙ্গত,কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষন এবং খুনের মামলায় গত শুক্রবার নিম্ন আদালতের রায় মুকুব হয়ে যায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে । মামলার রায় ঘোষণা করে বেঞ্চের দুই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্ত স্পষ্টত জানান, উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে দুই আসামি সইফুল আলি এবং আনসার আলির ফাঁসির সাজা রদ করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হল । ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আরও এক আসামি আমিন আলিকে অবশ্য মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি । শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ না থাকায় নিম্ন আদালতে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করকেও মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সোমবার এই চারজন মুক্তিও পেয়ে গিয়েছে সংশোধনাগার থেকে ৷
হাইকোর্টের এই রায়ে স্বভাবতই হতাশ কামদুনিবাসী । মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কার্যত ক্ষোভে ফুসছে গোটা গ্রাম। কামদুনি প্রতিবাদী আন্দোলনের দুই মুখ টুম্পা কয়াল,মৌসুমী কয়াল থেকে শুরু করে নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা সকলেই এই রায়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ । সকলেই এই মামলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন । সুবিচার পেতে পথেও নেমেছেন তাঁরা । ইতিমধ্যে কামদুনি গ্রামে পৌঁছে পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বাম-ডান সবপক্ষই । এক কদম এগিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নির্যাতিতার পরিবারকে বেসরকারি নিরাপত্তা এবং সুপ্রিম কোর্টে আইনি সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন। এনিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করে কথাও হয়েছে টুম্পা, মৌসুমী কয়ালদের ।
আরও পড়ুন: কামদুনি মামলায় হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আর্জি রাজ্যের, এখনই তা মানতে নারাজ সুপ্রিম কোর্ট
তারই মধ্যে কামদুনি মামলায় সুবিচার পেতে মঙ্গলবার জোড়া কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে রাজ্যে । একটি কামদুনিতে বিজেপির মহিলা মোর্চার তরফে । যেখানে পা মেলানোর কথা রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর । অন্যটি কলকাতার রাজপথে নাগরিক সমাজের। সেখানে আবার সামিল হয়েছেন কামদুনির প্রতিবাদী আন্দোলনের দুই মুখ টুম্পা কয়াল,মৌসুমী কয়ালরা ।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পিটিশন দাখিল করেছে । যার শুনানি হওয়ার কথা সাতদিন পর । তবে,রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে মোটেই সন্তুষ্ট নন কামদুনির প্রতিবাদী দুই মুখ টুম্পা,মৌসুমীরা । তাঁদেরই একজন টুম্পা কয়াল এদিন বলেন,"রাজ্য সরকারের ওপর আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আস্থা রেখেছিলাম । কিন্তু,সেই আস্থা পূরণ করতে ব্যর্থ তাঁরা । সেই কারণে বাংলার মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা আসুন কলকাতার মিছিলে পা মেলাতে । যাতে আমরা সুবিচার পায়। নিম্ন আদালতের রায়-ই যাতে সুপ্রিম কোর্টে বহাল থাকে সেটাই আমরা চাই।"
অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর আইনি সহায়তার দাবি প্রসঙ্গে টুম্পা বলেন,"আমরা এখন অন্ধ । অন্ধকে রাস্তা পার হতে হলে কারোর হাত ধরতে হয় । তা না হলে সে রাস্তা পার হতে পারেনা । সেই কারণেই আমরা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করে আইনি সাহায্য চেয়েছি । উনি আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের।"