দেগঙ্গা, 15 জুন : সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারে জায়গা না পেয়ে গোয়ালঘরে ঠাঁই হল দেগঙ্গার তিন পরিযায়ী শ্রমিকের । বৃষ্টির মধ্যে স্যাঁতস্যাঁতে সেই গোয়ালঘরেই কোনওরকমে কোয়ারানটিন দিন কাটছে সঞ্জয় পাল,সুজিত দে ও গোবিন্দ দাসের । ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরার পরও তাঁদের কোনও শারীরিক পরীক্ষা করা হয়নি বলেও অভিযোগ । এনিয়ে পঞ্চায়েত কিংবা প্রশাসনের তরফেও যোগাযোগ করা হয়নি ওই তিন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে । ফলে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁরা । তাঁরা পরিয়াযী শ্রমিক, জন্তু জানোয়ার তো নয়, আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে তাঁদের গলাতে ৷
দেগঙ্গার 1 নম্বর পঞ্চায়েতের পাল পাড়ার এই তিনজন বাসিন্দা গুজরাতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন ৷ কোরোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় লকডাউনের জেরে দীর্ঘ আড়াই মাস আটকে যান সেখানেই । বহু চেষ্টা করেও নিজ রাজ্যে ফিরতে পারেননি তাঁরা । রাজ্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েও কোনও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ করলেন এই তিন বাসিন্দা । এরপর, লকডাউন শিথিল হতেই কর্মস্থলের কয়েকজন পরিচিত লোক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন৷ খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ট্রেনে ফেরার সমস্ত ব্যবস্থা করেন গুজরাতের সেই পরিচিতরা । তাঁদের সহযোগিতায় ট্রেনে হাওড়া হয়ে দেগঙ্গায় ফেরেন এই তিন পরিযায়ী শ্রমিক । তবে,গ্রামবাসীদের বাধায় গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি ।
কিন্তু,থাকবেন কোথায়? যখন এই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তখন অন্য পাড়ার কয়েকজন যুবকের উদ্যোগে ওই শ্রমিকদের কোয়ারানটিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয় । তবে,কোনও বাড়িতে নয় ৷ পরিতক্ত এক গোয়ালঘর বাছা হয় তাঁদের জন্য ৷ বৃষ্টির মধ্যে স্যাঁতস্যাঁতে সেই গোয়াল ঘরেই 4-5 দিন ধরে দিন কাটাচ্ছেন ভিন রাজ্য থেকে আসা ওই শ্রমিকরা । খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করছেন পাড়ার এক দাদা । গুজরাতে কষ্টের মধ্যে কোনও মতে দিন কাটিয়েছিলেন ৷ ঘরে ফেরার পর থেকে একবারের জন্য তাঁদের কোনও খোঁজ নেয়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত । সাহায্য মেলেনি প্রশাসনেরও । এমনকী কোনওরকম স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়নি পরিযায়ী ওই তিন শ্রমিকের । যার ফলে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁরা ।
সঞ্জয় পাল নামে এক শ্রমিক বলেন, "গুজরাত থেকে ফেরার পর আমরা দেগঙ্গা থানায় গিয়ে যোগাযোগ করি । সেখানে নাম, ঠিকানা নথিভুক্ত করার পর আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । কিন্তু,সেখানে কোনওরকম সোয়াব টেস্ট কিংবা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি । এরপর, হোম কোয়ারানটিনে থাকার কথা বলা হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তরফে । কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় বাড়িতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি । পরিবার ও গ্রামবাসীদের কথা ভেবে আমরা শেষে রাস্তায় ঘুরতে থাকি । এমন সময় অন্য পাড়ার কয়েকজন যুবক একটি পরিত্যক্ত গোয়ালঘরের ব্যবস্থা করে দেয় আমাদের থাকার জন্য । সেখানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে ।’’ তাঁর অভিযোগ, বাড়ি ফেরার পর থেকে একবারের জন্য কোনও খোঁজ নেয়নি প্রশাসন । তাঁদের আক্ষেপ, প্রশাসন যদি সাহায্য করত তাহলে সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারে থাকতে পারতেন ৷ গোয়ালঘরে এত কষ্ট সহ্য করতে হত না তাঁদের ।
অপর শ্রমিক আক্ষেপের সুরে বলেন," আমরা যেন জন্তু জানোয়ার৷ ভিন রাজ্য থেকে ফিরে যেন আমরা অপরাধ করে ফেলেছি ৷ সেই জন্য প্রশাসন থেকে গ্রামবাসী সকলেই আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে ।’’ বিষয়টি নিয়ে দেগঙ্গার BDO সুব্রত মল্লিকের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,এরকম কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি ৷