স্বরূপনগর, 24 অগাস্ট : সব থেকে বেশি উৎসাহী ছিলেন তিনিই ৷ তাঁর উদ্যোগেই মূলত জন্মাষ্টমীতে কচুয়া যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল ৷ কিন্তু, বাকিরা ফিরলেও বাড়ি ফেরা হল না অপর্ণা সরকারের ৷ গতকাল হাজার মানুষের পায়ের চাপে থমকে গেছে তাঁর হৃদস্পন্দন ৷ 24 ঘণ্টা কেটে গেলেও উত্তর 24 পরগনার স্বরূপনগরের দত্তপাড়ার মানুষজন এখনও বাকরুদ্ধ গোটা এলাকা ৷ এখনও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সত্যিটা ৷
স্ত্রী অপর্ণা ও 12 বছরের ছেলে দীপকে নিয়ে কচুয়ার লোকনাথ ধামে গেছিলেন স্বরূপনগর দত্তপাড়ার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি তারক সরকার । দত্তপাড়া থেকে মোট চারটি গাড়িতে করে আনুমানিক 100 জন গেছিলেন । সবার মধ্যে অপর্ণার উৎসাহ ছিল সব থেকে বেশি । তাঁর প্রস্তাবেই তীর্থযাত্রার আয়োজন হয় । বৃহস্পতিবার দুপুরে গাড়ি ছেড়ে ছিল দত্তপাড়া থেকে । দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ঘাট থেকে গঙ্গাজল নিয়ে গাড়ি চেপে সবাই বেড়াচাঁপা পর্যন্ত গেছিলেন । সেখান থেকে হেঁটে কচুয়ার লোকনাথ মন্দিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় । সাত কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছে মন্দিরে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে ঘটে দুর্ঘটনা । ভিড়ের চাপে লাইনের পাশের অস্থায়ী দোকানের মাচা ভেঙে সবাই পড়েন পুকুরে । অপর্ণা অবশ্য পুকুরে পড়েননি । পদপিষ্ট হন তিনি । অচেতন অবস্থায় তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল । কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি । বুকে ও মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর জখম হন অপর্ণার স্বামী তারক ও ছেলে দীপ । তবে শরীরের আঘাতের চেয়ে মায়ের মৃত্যু তাঁকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে । দুর্ঘটনার পর থেকে মায়ের ছবি হাতে নিয়ে সে কেবল চোখের জল ফেলে চলেছে ।
কথা বলতে গিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারক । তিনি বলেন, "মন্দিরে ঢোকার মুখে পুলিশ আমাদের আটকে দেয় । কিছুক্ষণ পরে পিছন থেকে অসংখ্য মানুষের ভিড়ের চাপ আসতেই পালিয়ে যায় পুলিশ । তখনই পাঁচিল ভেঙে পড়ে । সবাই তখন বাঁচার চেষ্টায় দৌড়াচ্ছে । অপর্ণাকে আর দেখতে পেলাম না । ছেলেকেও না । সব যখন শান্ত হল, তখন অপর্ণা নীথর হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল । গায়ে অসংখ্য ক্ষত ।" মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকার চেক অপর্ণার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে স্বরূপনগর ব্লক প্রশাসন ।
বসিরহাট মহকুমার আরও দুই তীর্থযাত্রী হাসনাবাদের আমলানি মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা তরুণ মণ্ডল ও নোয়াপাড়ার বাসিন্দা সনোকা দাসের পরিবারের হাতেও চেক তুলে দেওয়া হয়েছে ।