মধ্যমগ্রাম, 2 নভেম্বর: রেশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ছাড়াই বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূলের প্রথম সাংগঠনিক বৈঠক আয়োজিত হল উত্তর 24 পরগনার মধ্যমগ্রামে। 'বালু'-হীন তৃণমূলের এই সাংগঠনিক বৈঠকে একদিকে যেমন দলীয় সংগঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে, তেমনই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ অনেক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের গরহাজির থাকা নিয়েও শাসকদলের মধ্যে বিভাজন সামনে এসেছে। জেলা রাজনীতিতে বরাবরই বারাসত সাংগঠনিক জেলার বর্তমান তৃণমূল সভাপতি ও সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই নিরিখে 'বালু'-হীন জেলা তৃণমূলের প্রথম সাংগঠনিক বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ দলীয় নেতৃত্বের কাছে ।
বারাসত সাংগঠনিক জেলার এদিনের এই বৈঠকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ছাড়াও হাজির ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, দলের দুই বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, তাপস চট্টোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন পৌরসভা এলাকার দলীয় নেতৃত্ব। তবে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ বেশিরভাগ নেতা-কাউন্সিলরের দেখা মেলেনি এই বৈঠকে। যাদের অধিকাংশই আবার জ্যোতিপ্রিয়'র হাবরা বিধানসভা এলাকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ৷ ফলে, সাংগঠনিক এই বৈঠকে তাঁদের গরহাজির থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই। সেই সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়-কাকলির দ্বন্দ্বও ফের চলে এসেছে প্রকাশ্যে। সেই দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে জ্যোতিপ্রিয়'র বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা, সংগঠনের জেলা সভাপতি কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মন্তব্যে।
এদিন কাকলি বলেন, "উনি (জ্যোতিপ্রিয়) কোথায় আছেন, ওনাকে কে ধরে নিয়ে গিয়েছে। সেটা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। এই জেলায় আমাদের সংগঠন বেশ মজবুত এবং শক্তপোক্ত। প্রতিটি স্তরেই সাংগঠনিক নেতৃত্ব রয়েছেন। সুতরাং কারও অবর্তমানে কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না ৷" জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভাব কি কখনও হবে ? এই প্রশ্নের উত্তরে কাকলি বলেন, "তৃণমূলের সমস্ত স্তরেই নেতৃত্বরা সংগঠনের কাজ করছেন। তাঁদের নিয়েই এদিনের এই বৈঠক হয়েছে ৷" সামনেই লোকসভা নির্বাচন ৷ 24-এর লোকসভা ভোটে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অনুপস্থিতি সমস্যা হবে না দলের ক্ষেত্রে ? এর জবাবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও দলের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "প্রতি বছরই আমরা বুথ স্তরে বিজয়া সম্মেলনী করে থাকি। বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়েই সেটা হয়ে থাকে। সমস্যার যখন মুখোমুখি হব, তখন বুঝতে পারব। সেরকম এখনও কিছু হয়নি।কোনও সমস্যা হবে না ৷"
আরও পড়ুন: 16 নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রকে 100 দিনের বকেয়া মেটাতে সময় বেঁধে দিলেন মমতা
এদিকে, জ্যোতিপ্রিয়'র দুর্নীতির দায় তাঁর ব্যাক্তিগত বলে তাঁকে কার্যত ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁর কথায়, "উনি যা করেছেন সেটা ওনার ব্যাক্তিগত। ব্যাক্তি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কী করেছেন, তার জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে কেন ? এটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। তদন্ত চলছে। তবে এটুকু বলতে পারি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বিজেপির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যে রাজ্যে বিরোধীরা শক্তিশালী, ক্ষমতায় রয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। ইদানিং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযান কয়েক গুন বেড়ে গিয়েছে বিরোধী শাসিত রাজ্যে। বিজেপির সংগঠন নড়বড়ে। তাঁদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। একটাই অ্য়াজেন্ডা কীভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা যায় ৷"
আরও পড়ুন: মনরেগায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়ে মিথ্যা প্রচার চলছে, অভিযোগ মমতার
অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দুর্নীতি কিংবা বিপুল সম্পত্তির দায় কি দল নিচ্ছে না ? এই প্রশ্নের উত্তরে কাকলি বলেন, "আমি তো অন্য লোকের ব্যাপারে বলতে পারব না। কার কী সম্পত্তি রয়েছে, আমি কী করে বলব ? ওনার কোথায় কী রয়েছে ! বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে যেটুকু দেখছি ৷ সেটুকুই জানতে পারছি। তাতে উনি কী করেছেন, কোথায় টাকা রেখেছেন, কার থেকে টাকা পেয়েছেন, সেটা সম্পূর্ণ ওনার ব্যাপার। তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা তো করতেই হবে ৷"