বক্সা (আলিপুরদুয়ার), 11 জানুয়ারি: পাহাড়ে সুন্দর সুন্দর ভিউ পয়েন্টে অনেকে ঘুরতে গিয়েছেন ৷ সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকেও উঁকি দিতে দেখেছেন পর্যটকরা । কিন্তু মোবাইল ভিউ পয়েন্ট দেখেছেন কখনও । হ্যাঁ, আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড়ে রয়েছে এমনই কিছু ভিউ পয়েন্ট ৷
পাহাড়ের সৌন্দর্য্য় যেমন অতুলনীয়, তেমনই এখানে একটি প্রধান সমস্যা মোবাইল টাওয়ার ৷ তাই মোবাইলের সিগন্যাল খুঁজতে ভিউ পয়েন্টে যেতে হবে আপনাকে । বক্সা পাহাড়ের 16টি এরকম গ্রাম রয়েছে, যেখানে কোনোরকম মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় পাওয়াই যায় না । যার ফলে এখানকার বাসিন্দারা ঘরে বসে কোনোভাবেই মোবাইলের মাধ্যমে পরিবারের বা অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেন না । ফলে তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এসে নেটওয়ার্ক খুঁজে তারপর যোগাযোগ করতে হয় বা মেসেজ পাঠাতে হয় ।
তবে এমনি এমনি মেলে না মোবাইল সিগন্যাল ৷ পাহাড়ের নির্দিষ্ট ওই কয়েকটি পয়েন্টে সিগন্যাল পেতে বাসিন্দারা গাছে প্লাস্টিকের বোতলে ঝুলিয়ে রাখেন মোবাইল । বাড়ি থেকে সেই স্থানে এসেই কাউকে ফোন করা বা মোবাইলে আসা মেসেজ দেখতে হয় তাদের । এমনকি অনলাইন পড়াশোনার যুগেও বক্সা পাহাড়ের ছাত্রছাত্রীরা বাইরের কোনও কোর্স করতে পারে না ৷ তার কারণও মোবাইল সিগন্যাল অমিল ।
বর্তমানে 5জির যুগে জেলার সব জায়গায় মোটামুটি মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া গেলেও, বক্সা পাহাড়ের প্রায় 16টি গ্রাম এই মোবাইল পরিষেবা থেকে বঞ্চিত । বক্সা ফোর্ট, লেপচাখা, আদমা, তাসিগাও, চুনাভাটি-সহ প্রায় সব পাহাড়ি গ্রামে একই অবস্থা । তবে বক্সা ফোর্টে যাওয়ার পথে সান্তলাবাড়িতে একটি বেসরকারি সংস্থার মোবাইল টাওয়ার রয়েছে । সেই টাওয়ারের সিগন্যালই পাহাড়ের বাঁকে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মেলে । তাই নিজেদের প্রয়োজনে পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা তৈরি করেছেন এই মোবাইল ভিউ পয়েন্টর । তারা চাইছেন বক্সা পাহাড়ে বসানো হোক মোবাইল টাওয়ার ।
বক্সার লেপচাখার বাসিন্দা ইন্তেজাম ডুকপা বলেন, "মোবাইলের নেটওয়ার্ক খুঁজে পেতে আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় মোবাইল একটি ঝোলায় রেখে দিই । এরপর সিগন্যাল এলে আমরা যোগাযোগ করি পরিবারের সঙ্গে । মোবাইল টাওয়ার হলে খুব ভালো হয় ৷"
স্থানীয় বাসিন্দা ফিনসু ডুকপার কথায়, "আমাদের এখানে নেটওয়ার্ক নেই । আমরা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকি । ঘরে বসে মোবাইলে নেটওয়ার্ক খুঁজে পাই না । তাই আমরা নির্দিষ্ট জায়গায় মোবাইল রেখেই নেটওয়ার্ক খুজে বের করি । আমরা খুব সমস্যায় আছি । আমরা চাই সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখুক । এখন অনলাইন ক্লাস হয় ৷ এখানে বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারে না । আমার পরিবারের বাচ্চাদের মোবাইল নেটওয়ার্কের কারণে বাইরে রাখতে বাধ্য হচ্ছি ।"
মোবাইল টাওয়ার নিয়ে স্বস্তির খবর শুনিয়েছেন বিএসএনএল'র জলপাইগুড়ি ডিভিশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিজয় কর্মকার ৷ তিনি বলেন, "বক্সায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বসানোর জন্য আমরা সার্ভে করেছি । বেশ কয়েকটি টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের । তবে বক্সায় কোর এলাকায় টাওয়ার বসানোর জন্য পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন । ছাড়পত্র পেলেই আমরা কাজটা করতে পারব ।"
বক্সা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার সৃজানা থাপার কথায়, "নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে পোস্ট অফিসের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে । অনলাইনের কোনও কাজ আমরা করতে পারছি না । মোবাইল নেটওয়ার্ক এলে কাজে অনেক সুবিধা হবে ।" আলিপুরদুয়ারের কালচিনির ব্লকের বিডিও মিঠুন মজুমদার জানান, এই মুহূর্তে বক্সায় মোবাইল টাওয়ার বসানো নিয়ে সেরকম কোনও চিন্তাভাবনা নেই ।