বারাসত, 18 ফেব্রুয়ারি: 24 ঘণ্টা আগেই পার্ক দুর্নীতিকাণ্ডের স্বপক্ষে পালটা পুকুর ভরাটের অভিযোগ এনে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন বারাসত পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় । নির্দিষ্টভাবে তিনি পৌরসভার যে কটি ওয়ার্ডে পুকুর ভরাটের অভিযোগ করেছিলেন তার মধ্যে 20 নম্বর ওয়ার্ডটি-ও ছিল প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নিশানায় । যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পৌর পারিষদের দায়িত্বে আবার বর্তমান চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ পান্নালাল বসু । সেই অভিযোগের 24 ঘণ্টা কাটতে না কাটতে তার সত্যতা একেবারে সামনে চলে এল ! কোনও লুকিয়ে চুরিয়ে নয় ! প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠ পান্নালাল বসুর 20 নম্বর ওয়ার্ডেই (TMC councillor ward) মাটি ফেলে চলছে পুকুর ভরাটের কাজ । তাও আবার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ।
অর্থ্যাৎ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়ের পুকুর ভরাটের অভিযোগ অন্তত এক্ষেত্রে হুবহু মিলে যাচ্ছে । যা ঘিরে অস্বস্তি বাড়িয়েছে শাসক শিবিরের । কিন্তু, প্রশ্ন হল প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে এই পুকুর ভরাটের কাজ চলছে বহাল তবিয়তে ! কীভাবেই বা এত সাহস পাচ্ছেন আইনভঙ্গকারীরা?তাহলে কি পিছনে প্রভাবশালী কারোর মদত রয়েছে? যে কারণে আইনকে তোয়াক্কা করে পুকুর ভরাট করতেও হাত কাঁপছে না তাঁদের? এমনই সব প্রশ্ন উঁকি মারতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে । যদিও, পুকুর ভরাটের অভিযোগ সামনে আসতেই চাপে পড়ে শেষ বেআইনি সেই কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ প্রশাসন । আর হাতে গরম ইস্যু পেয়ে তৃণমূলকে কাটমানি তত্ত্বে রীতিমতো বিদ্ধ করেছে গেরুয়া শিবির ।
পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনআঁটি এলাকায় প্রায় 10 কাটা জমির ওপর একটি পুকুর রয়েছে । যার মালিক তরুণ অধিকারী । অভিযোগ, সেই পুকুরের চারপাশ মাটি ও রাবিশ ফেলে ভরাট করার কাজ চলছে বেআইনিভাবে । এজন্য বেশ কয়েকজন শ্রমিককেও নিয়োগ করা হয়েছে সেখানে ।শুধু তাই নয়, জল তুলতে শ্যালো মেশিনও বসানো হয়েছে পুকুরের মধ্যে । ভরাট করার মাটি আবার নিয়ে আসা হচ্ছে ছোট 107 গাড়িতে করে ।এসবই চলছে একেবারে প্রকাশ্যে । মাটি ও রাবিশ দিয়ে পুকুরের বেশ খানিকটা অংশ ইতিমধ্যেই ভরাট করে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।তারপরও প্রশাসন কিংবা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের কোনও ভ্রুক্ষেপ চোখে পড়েনি । বরং সংবাদমাধ্যমের অভিযোগের পরও প্রথমে তার দায় নিতে অস্বীকার করেন শাসকদলের কাউন্সিলর পান্নালাল বসু ।
পরে, অবশ্য চাপে পড়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি । এরপর বৈধ কোনও অনুমোদন না থাকায় পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর । এই বিষয়ে পৌরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পৌর পারিষদ পান্নালাল বসু জানান, পৌরসভার সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি এই বিষয়ে । ফলে, পৌরসভা জানত না পুকুর ভরাটের বিষয়টি । নিজের দায়িত্বেই জমির মালিক বেআইনিভাবে পুকুর ভরাট করছিলেন । তা জানতে পেরেই তাঁরা পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিে । নিয়ম রয়েছে পুকুরের চারপাশ গার্ডওয়াল দিয়ে তার আশপাশে মাটি ফেলা যেতে পারে । কিন্তু, কোনও ভাবেই পুকুর ভরাট করে নয় । জমির মালিককে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভায় যেতে বলা হয়েছে । সেই কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর আইনানুগ যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা তাঁরা নেবেন ।
এদিকে, পুকুর ভরাটের অভিযোগ মানতে চাননি জমির মালিক তরুণ অধিকারী । তাঁর কথায়, পুকুর ভরাট নয় । সংস্কারের কাজ চলছিল । যেটি পুকুর বলা হচ্ছে, সেটি আসলে বাস্তু জমি । তার সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে । পৌরসভা দেখতে চাইলে তিনি দেখিয়ে দিতে পারেন । কেন কাজ বন্ধ করা হল তা প্রশাসনই বলতে পারবে । কোনও আইন বিরুদ্ধ কাজ তিনি করেননি বলে দাবি করেন ।
অন্যদিকে, এই ইস্যুতে শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলে আক্রমণ শানিয়েছে গেরুয়া শিবির । বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, "তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের পুকুর ভরাটের অভিযোগের যে সত্যতা রয়েছে । তা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট । বর্তমান পৌরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জেলার সদর শহর বারাসতে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়েছে । অথচ, পৌরসভার বর্তমান তৃণমূল চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় উদাসীন । এই পুকুর ভরাটের ঘটনায় জমির মালিকের সঙ্গে নিশ্চয় গোপন আঁতাত রয়েছে শাসকদলের কাউন্সিলর পান্নালাল বসুর । তা না হলে প্রকাশ্যে পুকুর ভরাট হতে পারে না । আমরা চাই, জেলা প্রশাসন প্রাক্তন চেয়ারম্যানের অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুক ৷"
আরও পড়ুন: সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পুকুর ভরাট, গড়ে উঠছে বসতবাড়ি; কাঠগড়ায় শাসকদলই