বারাসত, 11 জুন: রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তালিকায় স্পর্শকাতর জেলা হিসেবে রয়েছে উত্তর 24 পরগনার নাম। ফলে, এই পরিস্থিতিতে জেলায় সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত ভোট হওয়া নিয়ে কার্যত সংশয় প্রকাশ করেছে বিরোধীরা। আশঙ্কা রয়েছে মনোনয়ন পর্বের নিরাপত্তা নিয়েও। শনিবার জেলা প্রশাসনের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে রীতিমতো বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলই।
অন্যদিকে, প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হলেও, তাতে অবশ্য আশ্বস্ত হতে পারছে না কোনও রাজনৈতিক দল ৷ বরং, পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে শাসকদল জেলাজুড়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করার চক্রান্ত করছে বলে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। যদিও তাতে আমল দিতে চায়নি শাসক শিবির। উলটে, লোকবল নেই বলে বিরোধীদের দিকে পালটা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল।
পঞ্চায়েতের নির্ঘন্ট ঘোষণা হতেই মনোনয়ন তোলা নিয়ে দিকে দিকে অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। মনোনয়নে বাধা থেকে শুরু করে বিরোধীদের উপর হামলা। রাজনৈতিক হিংসায় মনোনয়নের প্রথম দিনই তপ্ত হয়েছে এই বাংলা। যা ঘিরে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সুষ্ঠুভাবে ভোটে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যেমন আশঙ্কা রয়েছে। তেমনই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে তারা। এরই মধ্যে পঞ্চায়েতের ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দেয় জেলা প্রশাসন। সেখানে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূলের প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক শরৎ কুমার দ্বিবেদী। সেই বৈঠকে নিরাপত্তার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে মনোনয়ন তোলা-সহ একাধিক বিষয়ে জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। আশ্বস্ত করা হয় তাঁদের।
বৈঠক শেষে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, "ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় হুমকি শুরু হয়েছে শাসকদলের তরফে। মোড়ে মোড়ে তৃণমূলের মস্তান বাহিনীর নাকা চেকিং চলছে। যাতে আমাদের কোনও প্রার্থী মনোনয়ন তুলতে কিংবা জমা দিতে না-পারে। এই পরিস্থিতিতে কখনোই সুষ্ঠু ভোট হওয়া সম্ভব নয়। প্রশাসন আশ্বস্ত করলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছি না।" একই সুর শোনা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সজল দে'র গলাতেও। তাঁর কথায়, "যেভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মনোনয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে তাতে সব আসনে আমরা লড়াই করতে পারব কি না, তাতে সন্দেহ রয়েছে। প্রশাসন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক।" এদিকে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া কোনও বিকল্প নেই বলে দাবি করেছেন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তুত রয়েছে আধা সামরিক বাহিনী দিতে। তারপরও রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট হলে তার যাবতীয় দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে ৷"
যদিও বিরোধীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতা ও মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ। তাঁর মতে, "লোকবল নেই বলেই এই ধরনের মনগড়া অভিযোগ করছে বিরোধীরা। আসলে ওদের উদ্দেশ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা। মানুষ সজাগ রয়েছে ৷" অন্যদিকে, সর্বদলীয় বৈঠকের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, "আদর্শ আচরণবিধি থেকে পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যা যা নির্দেশিকা রয়েছে, তা সবই আলোচনা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই এই বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। মনোনয়ন পেপার এবং ডিসিআর নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে তা ঠিক নয়। প্রয়োজনীয় মনোনয়ন পেপার ও ডিসিআর রয়েছে বিডিও অফিসগুলিতে। স্পর্শকাতর জেলা হওয়ায় যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র 'হোম ডেলিভারি' হচ্ছে ! টুইটারে দাবি শুভেন্দুর
প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এবার মোট বুথের সংখ্যা চার হাজার 532। এরমধ্যে প্রধান বুথের সংখ্যা চার হাজার 349। সহকারী বুথ রয়েছে 183টি। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় মোট বুথের সংখ্যা ছিল তিন হাজার 560। অর্থাৎ এবারের পঞ্চায়েত ভোটে বুথ বেড়েছে 972টি। শুধু বুথের সংখ্যা নয়, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের আসনও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে গতবারের থেকে। 2018 সালে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে যেখানে উত্তর 24 পরগনা জেলায় মোট আসন সংখ্যা তিন হাজার 560টি ছিল। সেখানে এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার 194। অর্থাৎ, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আসন বেড়েছে গতবারের থেকে। তবে, স্পর্শকাতর, অতি স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ঠিক কত, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে স্পষ্ট হবে বিষয়টি।