হিঙ্গলগঞ্জ, 27 জুলাই : পরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন। তবু বছর ঘুরতে চললেও আজও চালু হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর সাধের আইটিআই কলেজ। বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ৷ কলেজে বেড়েছে দুষ্কৃতী, দৌরাত্ম্য। কলেজ চত্বর নেশার আখড়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। যার জেরে নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
এমনই ছবি ধরা পড়েছে সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জ আইটিআই কলেজে। আর অভিযোগ যে শুধু কথার কথা নয়,তার প্রমাণও মিলেছে হাতেনাতে। কলেজ ক্যাম্পাসে চোখ রাখলেই দেখা যাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মদের বোতল ৷ রয়েছে নেশাজত দ্রব্যের বিভিন্ন উপকরণও। যদিও কলেজে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কিংবা নেশারুদের আখড়ার অভিযোগ মানতে চাননি নৈশপ্রহরী।
এনিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রশাসন থেকে শাসকদলের স্থানীয় বিধায়কও। তবে,গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন : বেতনের বন্দোবস্ত নেই, মালদা মেডিক্যালে ছাঁটাইয়ের মুখে শতাধিক অস্থায়ী কর্মী
তাঁরা চাইছেন, দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য ঠেকাতে অবিলম্বে কলেজ চালু করা হোক। শুরু হোক পঠনপাঠন। আখেরে তাতে উপকার হবে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের।
সুন্দরবন ঘেঁষা হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ও মিনাখাঁর প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের নদীপথ পেরিয়ে আজও উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হয় কলকাতার কোনও কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের সমস্যার কথা উপলদ্ধি করে 2013 সালে হিঙ্গলগঞ্জে আইটিআই কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ন'কোটি টাকা।
কলেজ স্থাপনের জন্য হিঙ্গলগঞ্জের বাইলানি এলাকায় ন'বিঘা জমি চিহ্নিত করা হয় প্রশাসনের তরফে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো কলেজ গঠনের কাজ শুরুও হয় জোরকদমে। সেই কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগেই। কিন্তু তারপরও চালু হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর সাধের সেই আইটিআই কলেজ।
যার ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের পড়ুয়াদের সমস্যা না মেটায় এখনও কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলকাতায় যেতে হচ্ছে পড়াশোনার জন্য। কলেজের বিল্ডিং এবং পরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও কেন তা চালু করা হল না, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন : পঠন-পাঠন চালুর দাবিতে কলেজের সামনে অনশনে ছাত্র
যদিও কলেজের পঠন-পাঠন চালু না হওয়ার পিছনে করোনা পরিস্থিতিকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। কলেজ নৈশপ্রহরী আবার ইউজিসির অনুমোদন না মেলায় কলেজ চালু হচ্ছে না বলে সাফাই দিয়েছেন। এই টানাপোড়েনে সুন্দরবন অঞ্চলে পড়ুয়াদের সমস্যা থেকেই গিয়েছে।
এদিকে,বন্ধ কলেজ চত্বর এখন দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। মদ খাওয়া থেকে বিভিন্ন নেশাজত দ্রব্য সেবন সবকিছুই সেখানে বহাল তবিয়তে চলছে বলে অভিযোগ। যা স্পষ্ট হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসের ছবি থেকেই। এনিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে সুন্দরবনবাসীর মধ্যে।
এই বিষয়ে সঞ্জয় পাল নামে এক বাসিন্দা বলেন, "কলেজের পরিকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে এক বছর আগে। তবু কলেজের পঠন-পাঠন চালু হয়নি এখনও। আমরা চাই,দ্রুত কলেজ চালু করা হোক। তাহলে আর কষ্ট করে কলকাতার কলেজে পাড়ি দিতে হবে না সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়াদের। কলেজ চালু হলে উপকৃত হবেন এই অঞ্চলের অসংখ্য পড়ুয়া ৷"
একই সুর শোনা গিয়েছে আলামীন গাজি নামে সুন্দরবনের এক পড়ুয়ার গলাতেও। তিনি বলেন, "কলেজ চালু হলে আমরা এখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতাম। কিন্তু এখনও কলেজ চালু করা হয়নি। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, দ্রুত কলেজ চালু করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হোক ৷"
আরও পড়ুন : বেতন না-পেয়ে বিক্ষোভ কর্মীদের, পরিষেবা ব্যাহত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে
বন্ধ কলেজে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও কলেজ চালু না হওয়ার জন্য করোনা পরিস্থিতিকেই দায়ী করেছেন হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল। তিনি বলেন, "আইটিআই কলেজ চালু করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু করোনাকালে তা থমকে গিয়েছে। আমি নিজেও সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কলেজ চালু করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আশা করা যায়, শীঘ্রই কলেজ চালু করা সম্ভব হবে ৷"
দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যর অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন কলেজের নৈশপ্রহরী অলোক মণ্ডল। তার দাবি, "কলেজ চত্বরে কেউ মদ খান না। জলের বোতল পড়ে থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ,আইটিআই কলেজে ভোট গণনার কেন্দ্র হয়েছিল। তাই জল খেয়ে কেউ বোতল ফেলতেই পারেন। কিন্তু, নেশা করার অভিযোগ ঠিক নয় ৷"
কলেজের পঠন-পাঠন চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে ইউজিসির অনুমোদন এবং করোনা আবহকে দায়ী করেছেন নৈশপ্রহরীও। অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি প্রশাসনের তরফে।