বারাসত, 18 মার্চ: জঞ্জাল তুমি কার? এই প্রশ্নই এখন কার্যত লাখ টাকার ৷ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে (Dumping Ground) জঞ্জাল ফেলার সমস্যা চলছে। একে অপরের ঘাড়ে দায় ঠেলে কার্যত হাত তুলে নিচ্ছে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ৷ যার জেরে সমস্য়ায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ ৷ আলোচনার মাধ্যমে সাময়িক সমস্যা মিটলেও আন্দোলনের জেরে স্থায়ী সমস্যার সমাধান হয়নি আজও। ফলে,মুখ থুবড়ে পড়েছে ভ্যাটের আধুনিকরণের বাস্তবায়নও।
দত্তপুকুরের কদম্বগাছির কুবেরপুর এবং বামুনমুড়া মৌজায় বারাসত পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে। 2013 সাল থেকে শহরের যাবতীয় ময়লা,আবর্জনা সেখানেই ফেলছে পৌরসভা। কিন্তু,সেই আবজর্না ফেলা নিয়েই বিপত্তি বাঁধে বছর খানেক আগে। অভিযোগ,ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ময়লা উপচে দূষিত জল চাষের জমিতে মেশায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে কৃষিকাজের (Agriculture)। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমির ফসলও। ক্ষতির মুখে পড়ে এরপরই ভ্যাট উচ্ছেদ কমিটি গড়ে সেখানে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় মানুষ। আন্দোলন ও স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পড়ে পৌরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে একসময় আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা মেটাতে বিকল্প জমির খোঁজ শুরু করে পৌরসভা (Municipality)।
যদিও পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য কোনও জমি না-পেয়ে অবশেষে কদম্বগাছিতেই আধুনিক মানের ভ্যাট তৈরির পরিকল্পনা করা হয় ৷ অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসই সার, প্রস্তাবিত জায়গার পরিবর্তে সেই পুরণো স্থানেই জঞ্জাল ফেলার কাজ করছিল তারা। ফলে জঞ্জাল ফেলা চললেও অধরাই থেকে গিয়েছিল এর স্থায়ী সমাধান। যার জেরে উত্তরোত্তর দূষণের প্রভাব বাড়ছিল পার্শ্ববর্তি পঞ্চায়েত এলাকায়। সমস্যা মেটাতে বারবার বৈঠক হয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত, পৌরসভা এবং ভ্যাট উচ্ছেদ কমিটির মধ্যে। তাতে হস্তক্ষেপ করেছিল জেলা প্রশাসনও। অভিযোগ এত কিছুর পরও কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি।
সম্প্রতি, আবারও জঞ্জাল সমস্যা প্রকট হয়েছে পৌরসভা এলাকাতে। ভ্যাট উচ্ছেদ কমিটির প্রতিবাদের জেরে আবারও ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ আর তাতেই চরম সমস্য়ায় পরেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় সমস্যার সুরাহা করতে জেলা প্রশাসনের ডাকা শুক্রবারের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও নিষ্ফলা হল ৷ এক কথায় এদিন আলোচনা হলেও কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসল না বৈঠক থেকে। তবে,জঞ্জাল সমস্যা নিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত এবং পৌরসভার মধ্যে চলল দায় ঠেলাঠেলির পালা ৷ জেলাশাসকের (District Magistrate) দফতরে হওয়া সেই বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা চললেও এই নিয়ে কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: কোষাগারের হাল ফেরাতে এবার 'দুয়ারে পুরসভা', কাউন্সিলরদের চিঠি মেয়রের
পালটা বৈঠকে জঞ্জাল সমস্যার সমাধান না-হওয়ার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন বারাসত 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান। এই বিষয়ে তিনি বলেন,"এক বছর ধরে এই বিষয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু,পৌরসভা সঠিকভাবে কোনও কাজই করতে পারেনি। এটা বারাসত পৌরসভার ব্যর্থতা। তাদের জন্যই ভ্যাট চালু করা যাচ্ছে না। এদিনের বৈঠকে আমরা এই সমস্যার কথা তুলে ধরেছি।" যদিও,এই অভিযোগ মানতে নারাজ পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন,"পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি দেখার কথা বলা হলেও উনি কখনও সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেননি। ফোন করলেও উনি একবারের জন্য আসেননি ডাম্পিং গ্রাউন্ড পরিদর্শনে। এটা দোষারোপ করার বিষয় না। পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়েই পৌরসভা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আধুনিকরণের কাজ শেষ করতে চাইছে। আমরা কদম্বগাছিতে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব। এটুকু বলতে পারি,আজকে যারা বাঁধা দিচ্ছে জঞ্জাল ফেলতে তারাই একদিন ময়লা ফেলবে পৌরসভার ভ্যাটে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ৷"
এদিকে,বিষয়টি নিয়ে বারাসতের এসডিও সোমা সাউ বলেন,"ভ্যাট উচ্ছেদ কমিটির প্রতিনিধিরা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের চারপাশে বাউন্ডারি এবং নিকাশি নালা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো যাতে বাস্তবায়িত হয়,তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভ্যাট সমস্যার সমাধান করতে বদ্ধপরিকর আমরা ৷"