বারাসত, 1 সেপ্টেম্বর : ধূপগুড়ির পর এবার বারাসত ৷ ফের ভ্যাকসিনের লাইনে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, বচসা এবং তার থেকে হাতাহাতি ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে একসময় ভ্যাকসিন সেন্টারের দরজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশ কর্মীরা ৷ ফলে কুপন থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকা না পেয়ে ফিরে গেলেন বলে অভিযোগ । ভ্যাকসিন সেন্টারে একসঙ্গে অনেকে ভিড় করার ফলেই সাময়িকভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ভ্যাকসিন সেন্টারের দায়িত্বে থাকা লোকজন ৷ পরে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠুভাবে টিকাকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা । বিশৃঙ্খলা এবং করোনাবিধি শিকেয় ওঠার জন্য ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের লোকজন এবং পুলিশি অব্যবস্থার দিকেই আঙুল তুলেছেন ভ্যাকসিন নিতে আসা লোকজন ৷
ভ্যাকসিন দেওয়াকে ঘিরে মঙ্গলবারই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ও হুড়োহুড়ির জেরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল জলপাইগুড়ির বানারহাটে । পদপিষ্ট হয়ে ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অন্তত 30 জন । তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক । এই ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে নবান্ন । বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমস্ত জেলার ডিএম এবং এসপিদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক নির্দেশিকা পাঠানো হয় ৷ কিন্তু, তার পরেও বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি, বচসা ও হাতাহাতির ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে । ভ্যাকসিনের লাইনে ভিড় এবং হাতাহাতি কার্যত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে । বুধবার বারাসতের ঘটনায় যা স্পষ্ট ।
আরও পড়ুন : Schools Reopen : কোভিডবিধি মেনে দিল্লিতে খুলল স্কুল, ক্লাস শুরু নবম থেকে দ্বাদশে
এ দিন বারাসত কাছারি মাঠ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কাছারি মাঠের পুলিশ আবাসনের উল্টোদিকে । মূলত বাজারের ব্যবসায়ী এবং দোকানদারদের মধ্যেই কোভিশিল্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা ছিল । সেই মতো প্রথম ডোজের চারশো এবং দ্বিতীয় ডোজের একশো কুপন বিতরণ করা হয়েছিল আগেই ৷ কিন্তু, টিকা দেওয়া শুরু হতেই লাইনে ভিড় জমাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ ৷ অভিযোগ কুপন ছাড়াও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য । কে কার আগে ভ্যাকসিন নেবে, তা নিয়ে একসময় হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ভ্যাকসিন সেন্টারের সামনে । ফলে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় সেখানে ৷ সেখান থেকেই বচসা এবং হাতাহাতি শুরু হয় লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষের মধ্যে । পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামেন বারাসতের এসডিপিও সত্যব্রত চক্রবর্তী । বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে একসময় ভ্যাকসিন সেন্টারের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় । ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় লোকজনকে । বিশৃঙ্খলার জেরে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় ৷ পরে পুলিশি নিরাপত্তায় টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হলেও, অনেকেই ভ্যাকসিন পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে । প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যসচিবের কড়া নির্দেশের পরেও কেন এমন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটল ? ভিড় সামাল দিতে কেন আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি ?
আরও পড়ুন : Suvendu Adhikari : গ্রেফতারির ভয়েই সিবিআই তদন্ত চাইছেন শুভেন্দু , আদালতে দাবি রাজ্যের
এদিকে, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও ভ্যাকসিন না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রাপকদের একাংশ ৷ এই বিষয়ে পূজা পাল নামে এক প্রাপক জানান, ‘‘ব্যবসায়ী সমিতির লোকজনকেই টিকা দেওয়া হবে, তা আগেই বলতে পারত । লাইনে দাঁড়ানোর পর এখন সেই কথা বলা হচ্ছে । এভাবে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা না করলেই পারত ৷ যদি টিকা না-ই দেওয়া হয়, তাহলে ভ্যাকসিনের কুপন সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করতে গেল কেন ? পুলিশ বসে বসে সবকিছু দেখছে । কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না । আমরা তো আর মানুষ নই ! চূড়ান্ত অব্যবস্থার জন্যই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে । করোনা বিধিনিষেধ কোনও কিছুই মানা হচ্ছে না এখানে ৷’’
আরও পড়ুন : Kasba Fake Vaccine : ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান ইডি-র
রাজীব সাহা নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি । কিন্তু, এখনও অবধি টিকা পায়নি । জানিনা কী হবে ৷’’ অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে কাছারি মাঠ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অজিত সরকার বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন সকলেরই প্রয়োজন । সেই কারণে সকলেই চাইছেন ভ্যাকসিন নিতে । তবে, এ দিন আমরা ব্যবসায়ী সমিতির লোকজনকেই কেবলমাত্র ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি । তাঁদের দেওয়ার পর যদি ভ্যাকসিন অবশিষ্ট থাকে, তাহলে অবশ্যই সেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে । অনেকে একসঙ্গে আসার ফলেই কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল । পরে আমরা সুষ্ঠুভাবেই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শেষ করেছি ৷’’