অশোকনগর , 10 জুন : সালটা 1996 ৷ সমারোহে পালিত হচ্ছে ভাইফোঁটা ৷ অশোকনগরের কবিতীর্থ রোডে জয়দেব বিশ্বাসের বাড়িতেও চলছে ভাইফোঁটা ৷ নিজের কোনও বোন না থাকায় জয়দেববাবুকে ফোঁটা দিতেন পাশের বাড়ির বোন অগ্নিবীণাদেবী ৷ সেদিনও এর অন্যথা হয়নি ৷ ফোঁটা শেষে ছিল বিশাল খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ৷ শেষপাতে চাটনি খাওয়ার সময় চলপাইয়ের আঁটিটাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে মুখেই রেখে দিয়েছিলেন জয়দেববাবু ৷ তা দেখে বোন অগ্নিবীণাদেবী মজা করেই বলেন , দেখি কতক্ষণ মুখে রাখতে পারিস আঁটিটা ? উত্তরে দাদা বলেছিলেন ,তুই যতক্ষণ না বলবি আমি ততক্ষনই পারব ৷ তারপর কেটে গেছে 23 বছর ৷ বোনের স্নেহে দাদা আজও মুখ থেকে ফেলেননি ওই জলপাইয়ের আঁটিটি ৷ দাদা-বোনের ভালোবাসার সম্পর্ককের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ৷
68 বছরের জয়দেব বিশ্বাস ৷ প্রাক্তন রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ৷ বোন না থাকায় পাশের বাড়ির অগ্নিবীনাদেবী তাঁকে ভাইফোঁটা দিতেন ৷ তবে 1996 সালের ভাইফোঁটাটা অন্যবারের চেয়ে আলাদা ৷ এই দিনই দাদাকে খুনসুটি করে বোন বলেছিলেন ,"দেখি তুই কতক্ষণ রাখতে পারিস মুখের মধ্যে ওই জলপাইয়ের আঁটিটা ৷" উত্তরে দাদা বলেছিলেন," তুই যতক্ষণ না বলবি আমি ততক্ষণই পারব ৷ " পরের দিন হলেও বোন তবু দাদাকে বলে না, জলপাইয়ের আঁটিটা মুখ থেকে বের করতে ৷ বরং তিনি মজা করে বলেন," দেখি কতদিন রাখতে পারিস?" বোনের কথা দাদা রেখেছেন ৷ আজও রাখছেন ৷ মাঝখানে শুধু কেটে গেছে দীর্ঘ 23 বছর ৷ কলকাতার একটি কলেজের অধ্যাপিকা অগ্নিবীণাদেবী মারা যান 2012 সালে ৷ তবুও জয়দেব বাবু কিন্তু বোনের কথা অগ্রাহ্য করেননি ৷ আজও সেই জলপাইয়ের আঁটিটি জয়দেব বাবুর মুখের মধ্যেই রেখে দিয়েছেন জিভের ফাঁকে ৷ এই অবস্থায় তিনি খাওয়া -জলপান সবই করেন ৷ জয়দেব বাবু বাড়ির লোকের আপত্তি করলেও পরে তাঁরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন ৷ বিষয়টি নিয়ে জয়দেববাবুর মা লীলা বিশ্বাস বলেন," ছেলেটাকে অনেক বুঝিয়েছি ৷ ও শোনেনি ৷ বোনের প্রতি ওর স্নেহ প্রকাশ করতে সারা জীবন গালের মধ্যে জলপাইআঁটি রেখে গেল ৷ একই সুর প্রতিবেশী গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ৷ তিনি বলেন," আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি, জয়দেবদার মুখের মধ্যে ওই জলপাই আটি রেখে দিয়েছে ৷ বোন বারণ করে যেতে পারেননি ৷ তাই আজও সেই জলপাই আঁটি তার মুখের মধ্যে ৷ "বোনের প্রতি এক অনন্য স্নেহের উদাহরণই ছাড়া আর কি বলে তিনি মনে করেন ৷
আজও অবসরে মাঝেমধ্যে বোনের ভাইফোঁটা দেওয়ার ছবিটা হাতে নিয়ে দেখেন জয়দেব বাবু ৷ আর মুখের মধ্যে তার সেই জলপাই আঁটি ৷ ইটিভির ক্যামেরার সামনে জয়দেব বাবু বলেন," বোন আমাকে খুব স্নেহ করত ৷ আমিও করতাম ৷ সেই বোন আজ আর নেই ৷ তার স্মৃতিতেই আমি আজও সেই জলপাইআঁটিটা মুখের মধ্যে রেখেছি ৷ একটাই আশা, বোন যেন ফিরে আসে ৷ তারপর আমাকে বলে, আঁটিটা মুখ থেকে বের কর ৷ যদি বোন না ফিরে আসে, মুখের মধ্যেই জলপাই আঁটিটা নিয়েই আমি যেতে চাই পরপারে ৷ " দাদা-বোনের এই অপ্রতিম ভালোবাসা সত্যিই চোখে জল এনে দেয় ৷