বসিরহাট, 12 নভেম্বর: বসিরহাটের গোকনায় শক্তির আরাধনা । হচ্ছে রীতি মেনে পুজো । আলোর মালায় সেজেছে মন্দির । কথিত আছে, রাতের অন্ধকারে এখানে ডাকাতরা মায়ের পুজো দিতেন । ডাকাতি করতে রওনা দেওয়ার আগে মন্দিরের পুকুরে স্নান সেরে মায়ের পুজো দিত দস্যুরা । ডাকাতি সেরে মাঝ রাতে একইভাবে মায়ের পুজো করে যে যার ঘরে ফিরতেন । এখন এই মন্দিরের আদলে বদল ঘটেছে । খড়-গোলপাতার ছাউনির মন্দির সরিয়ে ইট বালি সিমেন্টের মন্দির হয়েছে । প্রতিমার পরিবর্তনও হয়েছে । কিন্তু, 500-550 বছর পরও মন্দিরের ঘট পরিবর্তন হয়নি । আজও তা অক্ষয় আছে ।
এই জাগ্রত গোকনা কালী মন্দিরের মা ভবানী বহুজনের কাছেই বিশ্বাসের জায়গা । এলাকা তো বটেই, দূর দুরান্ত থেকেও ভক্তরা ছুটে আসেন এখানে । এই মন্দির ঘিরে ইতিহাসও আছে । উত্তর 24 পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া ব্লকের যদুরআঁটি দক্ষিণ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে আছে গোকনা গ্রাম । হাতে গোনা কয়েকঘর হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের বাস সেখানে । স্থানীয় অজয় হালদার বলেন,"কর্মসূত্রে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকে । কেউ বিদেশে, কেউ কলকাতায় থাকেন । এখন 14-15 ঘর ব্রাহ্মণ আছে । তাঁরাই বছরভর মায়ের সেবায় থাকেন । পুজোও হয় । সাড়ম্বরে মা কালীর আরাধনায় মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। আগে বলি প্রথা চালু থাকলেও বেশ কয়েকবার বাধা পড়ায় এখন তা বন্ধ রয়েছে।"
এই পুজো প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা তথা স্কুল শিক্ষক গৌতম হালদার বলেন,"মা ভবানীর এই মন্দির ঘিরে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে । জনশ্রুতি আছে, ধান্যকুড়িয়ার জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইনের ছেলে মরণাপন্ন হলে স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি এই মন্দিরে আসেন। মায়ের আশীর্বাদে তিনি পুনর্জীবন লাভ করেন । এরপরেই জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইন মন্দিরের পাকা গাঁথুনির প্রস্তাব দেন । পুরোহিত কালীধন হালদারের জমির মাটি নিয়ে ইট পুড়িয়ে পুরোনো থানের পাশেই পাকা গাঁথুনির বড় মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় । দেড়শো বছর আগে নতুন করে কৃষ্ণনগর থেকে চতুদোলায় চাঁপিয়ে জমিদার মহেন্দ্র গাইন প্রতিমা নিয়ে আসেন । পুরোনো ছোট প্রতিমাটি মন্দিরের পিছনের পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় । কিন্তু, ওই পুরনো ঘট নতুন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা পায় । যার বয়স প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছর।
মন্দিরের দেওয়ালে লেখা তথ্য অনুযায়ী, 1319 সালের 16 বৈশাখে পাথুরে কালীমূর্তির মা ভবানীর মন্দিরটা পাকাপাকি নির্মাণ হয় । 1388 সালে মন্দির সংস্কার হয় । তার আগে মাটির প্রতিমা হেমন্তের কার্তিকী অমাবস্যার রাতে পূজিত হতো । হালদার বংশের চৌদ্দতম পুরুষ হিসেবে মন্দিরের পুজো করেন অরুণকুমার হালদার । তিনি জানান, মা ভবানীর সঙ্গে মন্দিরে পুজিত হয় তিনটি শিলাখণ্ড । শিলাখণ্ডগুলি হল বৈদ্যনাথ, মানেশ্বর ও পঞ্চানন । মন্দিরে এখন কুমড়ো বলির আয়োজন হয়, অনেকে মানসিক করার জন্য পুজোয় মায়ের ভোগ চড়ান ।
আরও পড়ুন:
1. তারার অঙ্গে চলছে শ্যামার আরাধনা, তারাপীঠ মন্দিরের ভক্তদের ঢল; দেখুন ভিডিয়ো