কলকাতা ও পুরুলিয়া , 28 এপ্রিল : কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সবথেকে ভালো উপায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তথা ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলা । তাই রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলার জন্য উদ্যোগী হয়েছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় । ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ভেষজ , আয়ুর্বেদিক জিনিস দিয়ে তৈরি প্রোডাক্ট বিনামূল্যে আদিবাসী জনজাতির মধ্যে বিলি করছে বিশ্ববিদ্যালয় । পাশাপাশি, এই প্রোডাক্ট কেন ব্যবহার করবে এবং কীভাবে ব্যবহার করবে তা নিয়েও সচেতন করা হচ্ছে তাঁদের । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কর জানাচ্ছেন , জেলার অধিবাসীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই তাঁদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য ।
ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (DST) একটি প্রকল্প হল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন্টারভেনশন ফর দি আপলিফ্টমেন্ট অফ সিডিউল ট্রাইব কমিউনিটি । সেই প্রকল্পের অধীনে পূর্বাঞ্চলে একমাত্র সেন্টার রয়েছে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে । এই সেণ্টারেই হলুদ , লবঙ্গ , ইউক্যালিপটাস তেল , আদার মতো আয়ুর্বেদিক সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ইমিউনিটি বুস্টিং প্রোডাক্ট । জেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বিনামূল্যে সেই প্রোডাক্টগুলি দেওয়া হচ্ছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের । আদা , ইউক্যালিপটাস ওয়েল , লবঙ্গ , হলুদ মতো প্রথাগত আয়ুর্বেদিক ভেষজ সামগ্রীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ও বোটানি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা স্যানিটাইজ়ারও বিলি করা হচ্ছে ।
এই উদ্যোগ নিয়ে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কর বলেন , "এক জায়গায় একজনের কোরোনা হল , আর একজনের হল না । এটা ইমিউনিটির উপর নির্ভর করে । সবারই একসঙ্গে হয়ে যায় না । সংস্পর্শে এলেও সবার হয় না । তাই আমরা আদা, লবঙ্গ, ইউক্যালিপটাস ওয়েল, হলুদের মতো যেসব ভেষজ উপাদান আছে , সেইগুলিকে কীভাবে ব্যবহার করে মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় সেই প্রোগ্রাম করছি । এইসব জিনিস ও জিনিস দিয়ে তৈরি প্রোডাক্ট নিয়ে আমরা এক একটা গ্রামে গিয়ে কাউন্টার করছি । সেই এলাকার লোকজন আসছেন । আদা, ইউক্যালিপটাস ওয়েল, লবঙ্গ, হলুদের মতো প্রথাগত আয়ুর্বেদিক ভেষজ জিনিস আছে সেগুলি দেওয়া হচ্ছে । সেগুলি কীভাবে ব্যবহার করবে , কেন ব্যবহার করবে তা বোঝানো হচ্ছে । কী করে আয়ুর্বেদিক ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবে সেটা বলা হচ্ছে ।" বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগ ও পুরুলিয়া জেলার আয়ুষ বিভাগ এবং জেলা মেডিকেল কলেজের যৌথ উদ্যোগে এই সচেতনতা ও ইমিউনিটি বুস্টিং প্রোগ্রামের কাজ হচ্ছে ।
2010 সালে যাত্রা শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের । পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে পড়ুয়ারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য । কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন শুরু হওয়ার পর স্নাতকোত্তর ও Ph.D পড়ুয়াদের জন্য অনলাইনে পঠন-পাঠন চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় । অনলাইন লাইব্রেরিও খুলে দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের জন্য । এছাড়া , লকডাউনে গৃহবন্দী অবস্থায় পড়ুয়ারা মানসিক অবসাদে ভুগতে পারে এই আশঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগ থেকে পড়ুয়াদের সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়া , দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পড়ুয়াদের টিউশনের বেতন মুকুব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য নয় । জেলার মানুষদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের উদ্যোগও নিয়েছে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় । কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্যানিটাইজ়ার , মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর কোরোনা ত্রাণ তহবিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে 10 লাখ টাকা দান করা হয়েছে । এছাড়া , বিভিন্ন উপায়ে কোরোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচিও করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় । উপাচার্য দীপক কর বলেন , " একমাস ধরে আমরা পুরো জেলার গরিব মানুষদের জন্য রিলিফ ওয়ার্ক করছি । বিশেষ করে সবর , বেদিয়া , মাহালি সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের জন্য , তার সঙ্গে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য আমরা মাস অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম নিয়েছি । আমাদের ছৌ-বিভাগ নাচ-নাটকের ডকুমেন্টারি করেছে । যা আমরা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি ।"