নন্দীগ্রাম , 26 মে : একদিকে কোরোনার জেরে লকডাউন , অন্যদিকে আমফান ৷ খাদ্য সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন নন্দীগ্রাম দুই নম্বর ব্লকের আমদাবাদ এলাকার বাসিন্দারা । তাঁদের দুঃখ কিছুটা লাঘব করতে ইদ উপলক্ষে গতকাল এলাকার সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য কিছু খাদ্য সামগ্রী বিলি করা হয় BJP-র পক্ষ থেকে । খাদ্য সংকটে থাকা মানুষগুলি রাজনীতির কথা না ভেবেই পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তির আশায় সেই ত্রাণ নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছিল । আর সেটাই তাঁদের কাছে কাল হয়ে দাঁড়াল ৷ অভিযোগ , ইদের পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল হতেই BJP-র কাছ থেকে ত্রাণ নেওয়ার অপরাধে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাণ্ডব চালালো এলাকায় । লাঠি , রড ও বাঁশের আঘাতে ইতিমধ্যেই জখম হয়ে এলাকার 11 জন বাসিন্দা নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , নন্দীগ্রাম দুই নম্বর ব্লকের আমদাবাদ এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব পল্লিতে প্রায় দেড়শো সংখ্যালঘু পরিবারের বাস । এলাকার শ্রমজীবী মানুষগুলি লকডাউনের কারণে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে পারেনি দীর্ঘদিন ধরে । তার উপর আমফান তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে তাঁদের বাড়িঘর । ফলে বেঁচে থাকার লড়াইটা ধীরে ধীরে কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে । খুশির ইদে আনন্দ তো দূরের কথা ক্ষুধা নিবারণের জন্য বাড়িতে নেই সামান্য খাবারটুকুও । বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের তরফে ত্রাণ সামগ্রী বিলি করা হলেও ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ তাঁরা কিছুই পায়নি । সেইকারণে গতকাল বিকেল নাগাদ BJP-র পক্ষ থেকে তাঁদের বাড়িতে চাল,ডাল-সহ বেশ কিছু সবজি পৌঁছে দেওয়া হয় । ক্ষুধার জ্বালায় একসময়ে ভূমি আন্দোলনে গর্জে ওঠা নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা রাজনীতি ভুলে গিয়ে পেটের তাগিদে গ্রহণ করেছিল BJP-র দেওয়া সেই ত্রাণ । সেটাই যেন নন্দীগ্রামের বাসীদের অপরাধ ! অভিযোগ সকাল হতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা এলাকায় জড়ো হয়ে হুমকি দিতে শুরু করে । কিন্তু তৃণমূল কেন এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছে দিল না ? এই প্রশ্ন তুলে গ্রামবাসীরাও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে নেতাকর্মীদের ঘিরে । অভিযোগ , তখনই উত্তেজিত হয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা গ্রামবাসীদের মারধর করে । রড ,লাঠি ও বাঁশের আঘাতে জখম হন 11 জন সংখ্যালঘু এলাকাবাসী । পরে ঘটনার খবর পেয়ে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের উদ্ধার করে রেয়াপাড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভরতি করেন । বর্তমানে তাঁরা সেখানেই চিকিৎসাধীন । যদিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
ঘটনায় জখম স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আজিজ অভিযোগ করে বলেন , “তৃণমূলের তরফে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চাল , ডাল , ছোলা ও চিনি বিতরণ করা হয়েছিল । কিন্তু আমাদের এলাকার বাসিন্দারা তার ছিটেফোঁটাও পায়নি । যে কারণে গতকাল BJP-র দেওয়া ত্রাণ খিদের জ্বালায় আমরা গ্রহণ করি । সেই অপরাধে সকালবেলা তৃণমূলের একদল নেতাকর্মী এসে আমাদের বাড়ি এসে মারধর করে যায় । আমার ছেলে ও নাতির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে ৷ আমিও জখম হয়েছি । BJP-র কাছ থেকে ত্রাণ পেয়েছি ৷ তাই আমরা BJP হয়ে গেছি ৷ এই অভিযোগ তুলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় । ওরা পিস্তল ও ছুরি বের করে আমাদের ভয় দেখানোয় আমরা পিছু হটতে বাধ্য হই ।”
এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল অভিযোগ করে বলেন , “ইদের দিনে সংখ্যালঘু মানুষগুলি খুব কষ্টে রয়েছে । এটা ভেবেই গতকাল দলীয় ভাবে 50 জন সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের হাতে আমরা কিছু চাল , ডাল ও সবজি তুলে দিয়েছিলাম । BJP-র পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করার অপরাধে সকালবেলাই তাঁদের ব্যাপক মারধর করে তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী । 11 জন জখম বাসিন্দাকে আমরা হাসপাতালে ভরতি করেছি । দুষ্কৃতীদের চরম শাস্তি ও গ্রেপ্তারেের দাবিতে আমরা নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ জানাব ।”
যদিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাথ পাল ৷ তিনি বলেন , “নন্দীগ্রামে BJP বলে কোনও বস্তু নেই । তৃণমূলের তরফ থেকেই এলাকার সমস্ত বাসিন্দাদের ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী । সে সময় কোনও দলীয় ব্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে না ৷ মানবিকতার খাতিরে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত । BJP-ও যদি ব্যানার ছাড়া সাধারণ মানুষের সাহায্যে দাঁড়ায় তাতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই । BJP-র কাছ থেকে ত্রাণ নেওয়ার কারণে এলাকাবাসীকে মারধর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ । কেবলমাত্র রাজনীতি করার জন্যই এই অভিযোগ করা হচ্ছে ।"