ETV Bharat / state

Dakatia Kali Puja: অমাবস্যার রাতে বর্ধমানের রাজাকে চাঁদ দেখিয়েছিলেন সাধক

অমাবস্যার রাতে বর্ধমানের রাজাকে চাঁদ দেখিয়ে অবাক করে দিয়েছিলেন সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী ৷ তাঁর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত দুর্লভা কালী (Durlova Kali) ডাকাতিয়া কালী (Dakatia Kali Puja) নামে পরিচিত ৷

durlova kali of Burdwan known as Dakatia Kali
অমাবস্যার রাতে বর্ধমানের রাজাকে চাঁদ দেখিয়েছিলেন সাধক
author img

By

Published : Nov 1, 2021, 9:36 PM IST

বর্ধমান, 1 নভেম্বর: সাড়ে তিনশো-চারশো বছর আগেকার কথা । বর্ধমানের লাকুরডি এলাকা তখন ছিল ঘন বন-জঙ্গলে ভরা । সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী সেখানে তপস্যা করতেন । বর্ধমানের মহারাজা একদিন খবর পেয়ে পারিষদদের নিয়ে সেই সাধকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন । সাধকের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে বলতে রাজা তাঁকে কালীর প্রাণের অস্বিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তখন হঠাৎ সাধক বলে বসেন, "আজ তো অমাবস্যা । কিন্তু আজ রাতে আপনাকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখাব ।"

এদিকে, সাধক রাজাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে খুব ভয় পেয়ে গেলেন । তিনি দেবীকে ডাকতে শুরু করেন । সেইদিন রাতের দিকে রাজা যখন ফের সাধকের কাছে যান, তখন সাধক রাজাকে আকাশের দিকে তাকাতে বলেন । রাজা অমাবস্যার রাতের আকাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যান । দেখেন পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে । এরপরেই বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের সহযোগিতায় কালীমন্দির গড়ে তোলা হয় । পাশে তৈরি করা হয় একাধিক শিবমন্দির ।

কথিত আছে, সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী ঘুরতে ঘুরতে এই নির্জন স্থানকে তপস্যার জন্য বেছে নেন । একদিন পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতে করতে তিনি কালীর আদেশ পেয়েছিলেন । দেবী তাঁকে নাকি বলেন, তিনি পাশের ডোবায় আছেন ৷ তাঁকে ওই ডোবা থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার আদেশ দেন তিনি । সেই আদেশ মতো সাধক নাকি দেবীকে ডোবা থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন । অনেকদিন ধরে সাধনা করে ওই সাধক দেবীকে পেয়েছিলেন বলেই তার নাম দেওয়া হয় দুর্লভা মা । তবে দেবীর প্রকৃত মূর্তি শিলা পাথরের । একটা ছোট্ট পিতলের সিংহাসনে দেবীর মাথার পিছনে রাখা আছে । প্রতিদিন পুজোর সময় মূর্তি নামিয়ে পুজো করা হয় ।

অমাবস্যার রাতে বর্ধমানের রাজাকে চাঁদ দেখিয়েছিলেন সাধক

আরও পড়ুন: Medinipur Kali Puja : জমি বিবাদে জায়গা বদল মানিকপুরের মোটা কালীর পুজোয়

মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে পঞ্চমুণ্ডির আসন আছে । পাশে সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীর সমাধি । তার উপর একটি বেলগাছ আছে । পাশেই ভোগ দেওয়ার জন্য একটা জায়গা বাঁধিয়ে রাখা আছে । প্রতিদিন পুজো শেষে আগে সেই বেদীতে ভোগ প্রসাদ রাখা হত । এলাকার শেয়ালরা সেই ভোগ প্রসাদ খেয়ে যেত । আজও পুজোর শেষে সেই ভোগ দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে ।

ডাকাতিয়া কালী নামেই পরিচিত দুর্লভা কালী । বর্ধমান শহরের লাকুরডি এলাকায় দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন দুর্লভা কালীর মন্দির । আগে এলাকাটি ছিল বন-জঙ্গলে ভর্তি । প্রচলিত আছে, ডাকাতরা নাকি ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই মন্দিরে পুজো দিয়ে যেত । পরে এই মন্দিরে বসেই তারা লুঠের জিনিসপত্র ভাগ বাটোয়ারা করত । এখানকার দেবীই কালী, তিনিই দুর্গা আবার তিনিই বিপত্তারিণী, তিনিই চণ্ডী । একই মূর্তি নানা ভাবে পূজিত হয় এই কালী মন্দিরে ।

আরও পড়ুন : Kali Puja : মায়ের স্বপ্নাদেশে মন্দির প্রতিষ্ঠা, তিনশো বছরের ঐতিহ্যশালী বাঁকুড়ার হটনগর কালী

তবে এই মন্দিরে প্রথম থেকেই কালীপুজোর সময় ঘট আনা হয় না । এছাড়া পুজোর সময় এখানে গঙ্গা জলের প্রয়োজন হয় না । পাশে সেই সময় যে কুয়ো খনন করা হয়েছিল, সেই কুয়োর জল গঙ্গা জল হিসেবে ব্যবহার করা হয় । সেই জলেই দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয় । আগে এখানে পশুবলি হলেও বর্তমানে বলি নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে । এখন অবশ্য আশেপাশের এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ । তবুও দুপুরবেলা কিংবা সন্ধের পর কেউ একা মন্দিরে যেতে সাহস করেন না ।

বর্ধমান শহর থেকে দু নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কাঞ্চননগর রথতলার দিকে গেলেই রাস্তার ডানদিকে পড়বে দুর্লভা কালীর মন্দির । কিংবা বর্ধমান শহরের কার্জন গেট ধরে পশ্চিমে বোরহাট এলাকা দিয়ে লাকুরডি গেলেই মিলবে দুর্লভা কালীর মন্দির । দেবীর শিলা মূর্তি দর্শন করতে হলে দিনের বেলা পুজোর সময় যেতে হবে । সেখানে থাকা পুরোহিতের কাছে অনুরোধ জানালেই তিনি দেবীর দর্শন করিয়ে দেবেন ।

আরও পড়ুন : Daspur Communal Harmony : ইসমাইলের হাতে মৃণ্ময়ী রূপ পান মা কালী, মুগ্ধ হিন্দু প্রতিবেশীরা

বর্ধমান, 1 নভেম্বর: সাড়ে তিনশো-চারশো বছর আগেকার কথা । বর্ধমানের লাকুরডি এলাকা তখন ছিল ঘন বন-জঙ্গলে ভরা । সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী সেখানে তপস্যা করতেন । বর্ধমানের মহারাজা একদিন খবর পেয়ে পারিষদদের নিয়ে সেই সাধকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন । সাধকের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে বলতে রাজা তাঁকে কালীর প্রাণের অস্বিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তখন হঠাৎ সাধক বলে বসেন, "আজ তো অমাবস্যা । কিন্তু আজ রাতে আপনাকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখাব ।"

এদিকে, সাধক রাজাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে খুব ভয় পেয়ে গেলেন । তিনি দেবীকে ডাকতে শুরু করেন । সেইদিন রাতের দিকে রাজা যখন ফের সাধকের কাছে যান, তখন সাধক রাজাকে আকাশের দিকে তাকাতে বলেন । রাজা অমাবস্যার রাতের আকাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যান । দেখেন পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে । এরপরেই বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের সহযোগিতায় কালীমন্দির গড়ে তোলা হয় । পাশে তৈরি করা হয় একাধিক শিবমন্দির ।

কথিত আছে, সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী ঘুরতে ঘুরতে এই নির্জন স্থানকে তপস্যার জন্য বেছে নেন । একদিন পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতে করতে তিনি কালীর আদেশ পেয়েছিলেন । দেবী তাঁকে নাকি বলেন, তিনি পাশের ডোবায় আছেন ৷ তাঁকে ওই ডোবা থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার আদেশ দেন তিনি । সেই আদেশ মতো সাধক নাকি দেবীকে ডোবা থেকে তুলে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন । অনেকদিন ধরে সাধনা করে ওই সাধক দেবীকে পেয়েছিলেন বলেই তার নাম দেওয়া হয় দুর্লভা মা । তবে দেবীর প্রকৃত মূর্তি শিলা পাথরের । একটা ছোট্ট পিতলের সিংহাসনে দেবীর মাথার পিছনে রাখা আছে । প্রতিদিন পুজোর সময় মূর্তি নামিয়ে পুজো করা হয় ।

অমাবস্যার রাতে বর্ধমানের রাজাকে চাঁদ দেখিয়েছিলেন সাধক

আরও পড়ুন: Medinipur Kali Puja : জমি বিবাদে জায়গা বদল মানিকপুরের মোটা কালীর পুজোয়

মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে পঞ্চমুণ্ডির আসন আছে । পাশে সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীর সমাধি । তার উপর একটি বেলগাছ আছে । পাশেই ভোগ দেওয়ার জন্য একটা জায়গা বাঁধিয়ে রাখা আছে । প্রতিদিন পুজো শেষে আগে সেই বেদীতে ভোগ প্রসাদ রাখা হত । এলাকার শেয়ালরা সেই ভোগ প্রসাদ খেয়ে যেত । আজও পুজোর শেষে সেই ভোগ দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে ।

ডাকাতিয়া কালী নামেই পরিচিত দুর্লভা কালী । বর্ধমান শহরের লাকুরডি এলাকায় দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন দুর্লভা কালীর মন্দির । আগে এলাকাটি ছিল বন-জঙ্গলে ভর্তি । প্রচলিত আছে, ডাকাতরা নাকি ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই মন্দিরে পুজো দিয়ে যেত । পরে এই মন্দিরে বসেই তারা লুঠের জিনিসপত্র ভাগ বাটোয়ারা করত । এখানকার দেবীই কালী, তিনিই দুর্গা আবার তিনিই বিপত্তারিণী, তিনিই চণ্ডী । একই মূর্তি নানা ভাবে পূজিত হয় এই কালী মন্দিরে ।

আরও পড়ুন : Kali Puja : মায়ের স্বপ্নাদেশে মন্দির প্রতিষ্ঠা, তিনশো বছরের ঐতিহ্যশালী বাঁকুড়ার হটনগর কালী

তবে এই মন্দিরে প্রথম থেকেই কালীপুজোর সময় ঘট আনা হয় না । এছাড়া পুজোর সময় এখানে গঙ্গা জলের প্রয়োজন হয় না । পাশে সেই সময় যে কুয়ো খনন করা হয়েছিল, সেই কুয়োর জল গঙ্গা জল হিসেবে ব্যবহার করা হয় । সেই জলেই দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয় । আগে এখানে পশুবলি হলেও বর্তমানে বলি নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে । এখন অবশ্য আশেপাশের এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ । তবুও দুপুরবেলা কিংবা সন্ধের পর কেউ একা মন্দিরে যেতে সাহস করেন না ।

বর্ধমান শহর থেকে দু নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কাঞ্চননগর রথতলার দিকে গেলেই রাস্তার ডানদিকে পড়বে দুর্লভা কালীর মন্দির । কিংবা বর্ধমান শহরের কার্জন গেট ধরে পশ্চিমে বোরহাট এলাকা দিয়ে লাকুরডি গেলেই মিলবে দুর্লভা কালীর মন্দির । দেবীর শিলা মূর্তি দর্শন করতে হলে দিনের বেলা পুজোর সময় যেতে হবে । সেখানে থাকা পুরোহিতের কাছে অনুরোধ জানালেই তিনি দেবীর দর্শন করিয়ে দেবেন ।

আরও পড়ুন : Daspur Communal Harmony : ইসমাইলের হাতে মৃণ্ময়ী রূপ পান মা কালী, মুগ্ধ হিন্দু প্রতিবেশীরা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.