বর্ধমান, 8 জুন: ব্রেন টিউমার হলেই যে মানুষের মৃত্যু হবে এই ধারণা ঠিক নয়। কিছু কিছু ব্রেন টিউমার নিরাময় সম্ভব আবার কিছু খারাপ টিউমার প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লেও অপারেশন করার পর রোগী সুস্থ হয়ে যায় । ফলে বেশ কিছু উপসর্গ আছে, যেগুলি দেখা দিলে দেরি না-করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ৷ ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে এই বার্তা দিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অফ নিউরোলজির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ দেবল লাহা ।
সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ব্রেন টিউমার নিয়ে একটা ভয় সবসময় কাজ করেই থাকে এমনকি ব্রেন টিউমার মানেই সেটি ব্রেন ক্যানসার হতে পারে এই ধারণাও চলে আসছে । ফলে ব্রেন টিউমারের কথা শুনলেই মানুষ আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে । যে আতঙ্কের কারণে রোগীরা চিকিৎসকের কাছেই যেতে চায় না । ফলে কোন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার প্রথম স্টেজে থাকলে চিকিৎসা না করার কারণে সেটি দিনে দিনে খারাপের দিকে যায় । অথচ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারও ধরা পড়ার পরে যদি প্রথম স্টেজে থাকে তাহলে অপারেশনের মাধ্যমে রোগী একদম সুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারে ।
ব্রেন টিউমার হলেই কি ব্রেন ক্যানসার হতে পারে ?
ব্রেন ক্যানসার হচ্ছে ব্রেন টিউমারের একটা অঙ্গ । ভালো কিছু কিছু ভ্যারাইটি আছে যাদের বিনাইন টিউমার বলা হয় অন্যদিকে কিছু কিছু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার আছে সেটা যে স্টেজেই ধরা পড়ুক না কেন, বিপজ্জনক রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থেকে যায় । এমনকী রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । তবে বিনাইন টিউমারের কিছু কিছু আছে যেগুলি অপারেশনের পরে রোগী একদম সুস্থ হয়ে যায় ।
আরও পড়ুন: আজ জাতীয় মাদক ধ্বংস দিবস ! জেনে নিন দিনটির প্রতিপাদ্য
অর্থাৎ ব্রেন টিউমারের খারাপ ও ভালো ভ্যারাইটি আছে । অন্যদিকে ব্রেন ক্যানসার হচ্ছে ব্রেন টিউমারের একটা অঙ্গ । কিছু কিছু টিউমারের ভ্যারাইটি আছে যেগুলো ভালো থেকে খারাপের রূপ নেয় । বিনাইন টিউমারের ক্ষেত্রে স্টেজের প্রথম দিকে ছোট আকারে ধরা পড়লে ভালো কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে যদি একদম প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে অপারেশন করলে ভালো ফল আশা করা যায় । সেক্ষেত্রে সেই রোগীকে অবশ্যই নিউরো সার্জেন্টের পরামর্শ নেওয়া দরকার । কিন্তু সেটা যদি তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজে ধরা পড়লে তার ফল খারাপ হতে পারে ।
ব্রেন টিউমারের সংখ্যা কি বাড়ছে ?
চিকিৎসা ব্যবস্থা যত আধুনিক হচ্ছে পরীক্ষা নিরীক্ষা যত আধুনিক হচ্ছে তখন রোগীদের বিভিন্ন রকম লক্ষ্মণ চিকিৎসকেরা জানতে পারছেন । ফলে তাড়াতাড়ি বিষয়গুলি ধরা পড়ছে । আগে যেগুলি ধরাই পড়তো না রোগী না জেনে সেই টিউমার নিয়েই হয়তো ঘুরে বেড়াত সেটা এখন কমে গিয়েছে ।
কী কারণে হতে পারে ব্রেন টিউমার ?
দিনে দিনে যেভাবে দূষণ বাড়ছে তার ফলে ব্রেন টিউমারে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন । দিনে দিনে রেডিও অ্যাক্টিভিটি বাড়ছে তাছাড়া যেভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়েছে তার ফলে সমস্যাও বাড়ছে । তবে আমার ধারণা বেশি করে পরীক্ষা নিরীক্ষা হওয়ায় বেশি করে ধরা পড়ছে ।
বিষয়টি হচ্ছে কোন টিউমার আর সেটি কোন স্টেজে ধরা পড়ছে তার উপর । অর্থাৎ কোন ভ্যারাইটি টিউমার ধরা পড়ছে তার উপর নির্ভর করছে । কিছু কিছু টিউমার একদম প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে অপারেশন করে রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছে ।
টিউমার হলেই কি মাথার যন্ত্রণা হবেই ?
টিউমার হলেই যে মাথার যন্ত্রণা হবে তার কোনও মানে নেই । মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে একটা অঙ্গ । মাথার যন্ত্রণা হতে পারে, বমি হতে পারে, চোখে কম দেখা, খিঁচুনি দেখা দিতে পারে, একটা দিক প্যারালাইসিস হতে পারে, এমনকি খুব ঝিমুনিতে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে । আসলে কোন ভ্যারাইটি হবে, সেটি নির্ভর করছে কোন জায়গা থেকে টিউমারের উৎপত্তি হয়েছে । ব্রেনের বিভিন্ন অংশে টিউমারের লক্ষ্মণ কিন্তু আলাদা ।
রাতে মাথার কাছে স্মার্ট ফোন নিয়ে ঘুমানো কতটা বিপজ্জনক ?
রাতে মাথার কাছে ফোন নিয়ে ঘুমোনোর থেকে বেশি বিপজ্জনক স্মার্ট ফোনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলা । তাই বেশিক্ষণ কথা বলা এড়িয়ে যেতে পারলে শরীরের পক্ষে মঙ্গল। এমনকি হেড ফোন লাগিয়ে কথা বললেও ফল একইরকম হতে পারে।
ব্রেন টিউমার মানেই কি মৃত্যু ?
ব্রেন টিউমার মানেই যে মৃত্যু, এটা একেবারে সঠিক নয় । যেমন বিনাইন টিউমারের নিরাময় সম্ভব । তবে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে নিউরো সার্জেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে । শুধু বিনাইন টিউমার নয় কিছু খারাপ টিউমারও প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়ার পরে যদি অপারেশন করিয়ে নেওয়া যায় তাহলে বেশীদিন সুস্থ ভাবে বাঁচা সম্ভব । তাই টিউমার হলেই যে মৃত্যু সেটা কোন কথা নয় । কিছু কিছু টিউমার সম্পূর্ণ নিরাময় হতে পারে ৷ কিছু কিছুর ক্ষেত্রে যদি প্রথম পর্যায়ে আসা যায় সেক্ষেত্রে তারও সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থেকে যায় । তাই কোন ধরনের লক্ষ্মণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না-করে অবশ্যই নিউরো সার্জেন্টের কাছে যাওয়া উচিত ।