ETV Bharat / state

Fake Rape Case: আইনি পথে নিপীড়িতদের সুবিচার দিতে চান ভুয়ো ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক

একদিন যাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ (Fake Rape Case) উঠেছিল ৷ আজ তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন ৷ এবার আইনজীবী হিসাবে তাঁর মতোই নিপীড়িতদের সহায় হতে চান কেশপুরের যুবক ৷

victim of Fake Rape Case becomes Lawyer to help others
Fake Rape Case: আইনি পথে নিপীড়িতদের সুবিচার দিতে চান ভুয়ো ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক
author img

By

Published : Dec 7, 2022, 4:42 PM IST

কেশপুর, 7 ডিসেম্বর: সৎ সাহস আর অদম্য জেদ সম্বল হলে অসম লড়াইও জেতা যায় ৷ এই সারসত্য আবারও একবার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা এক যুবক ৷ নিরাপত্তার স্বার্থে 28 বছরের ওই যুবকের পরিচয় আমরা গোপনই রাখছি ৷ যদিও তিনি নিজে ক্যামেরার সামনে আসতে ভয় পান না ৷ আজ আমরা জানব, সেই তরুণেরই সংগ্রামের 'কাহিনি' ৷

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুর ৷ সেটা 2016 সাল ৷ দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের জোরে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল হাওয়া ৷ কর্মসূত্রে তখন কলকাতায় রয়েছেন আমাদের এই 'গল্পের নায়ক' ! হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে ফোন যায় তাঁর কাছে ৷ প্রবল উৎকণ্ঠায় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জানান, অবিলম্বে বাড়ি ফিরতে হবে ৷ না হলে ঘোর বিপদ ! কেন ? কারণ, তাঁর এক প্রতিবেশী কিশোরী, যার বয়স মাত্র 13 বছর, সে নাকি সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ! আর সেই কিশোরীর দাবি, তার ভাবী সন্তানের পিতা তারই প্রতিবেশী এই 22 বছরের 'দাদা' ! সেই প্রতিবেশী দাদাই আজকের আটাশের যুবক ৷

আরও পড়ুন: তৃণমূল নেতার অঙ্গুলি হেলনেই ধর্ষণের ভুয়ো অভিযোগ ? উঠছে পালটা চক্রান্তের তত্ত্ব

ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে যুবক জানান, এমন অভিযোগ শুনে তিনি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন ! যে কিশোরীকে তিনি ছোট বোনের মতো দেখেন, যার সঙ্গে কখনও সেভাবে কথাই হয় না, তারই গর্ভস্থ ভ্রূণ কিনা তাঁর ভাবী সন্তান ! পত্রপাঠ এই অভিযোগ খারিজ করেন যুবক ৷ কিন্তু, পাড়ার তৃণমূলের দাদারা শাসায়, ছেলে ঘরে না-ফিরলে পরিবারের বাকিদের কপালে দুঃখ আছে ৷ এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই যুবককে বাড়ি ফিরতে হয় ৷ সালিশি বসিয়ে তাঁকে বাধ্য করা হয় ওই অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে বিয়ে করতে ৷ বিয়ের করতে বাধ্য হলেও পরদিনই বাড়ি ছাড়েন যুবক ৷ অষ্টমঙ্গলায় ফের তাঁকে জোর করে বাড়ি ফেরানো হয় ৷ চাপের মুখে বিষ খেতে আত্মহত্যা করার চেষ্ট করেন যুবক ৷ কিন্তু, প্রাণে বেঁচে যান ৷

এরপরই শুরু হয় অসম লড়াই ৷ যুবক জানতেন, তাঁর জোরজবরদস্তির স্ত্রী আদতে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতার আত্মীয়া ৷ তা সত্ত্বেও আদালতে মামলা (Fake Rape Case) রুজু করেন যুবক ৷ বাড়িছাড়া হয়ে আশ্রয় নেন মেদিনীপুরে ৷ সঙ্গে চলতে থাকে আইনের পড়াশোনা ৷ আদলতেই মহুরির কাজ করে অন্ন সংস্থান ও পড়ার খরচ জোগাড় করেন ৷ অন্যদিকে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য লাগাতার যুবকের পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হয় ৷ পরিবারের সদস্যদের একঘরে করে দেয় গ্রামের মাতব্বররা ৷ এমনকী, যুবকের পরিবারকে পানীয় জলটুকু পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি ! তাদের জমি কেড়ে নেওয়া হয় ৷ আর্থিক জরিমানা আদায় করা হয় !

কিন্তু, এত কিছুর পরও হার মানেননি যুবক ৷ লড়াই চালিয়ে যান ৷ ইতিমধ্যে, তাঁর কিশোরী স্ত্রী একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় ৷ সেই শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করানোর দাবি তোলেন যুবক ৷ ঘটনার পাঁচবছর পর 2022 সালে এসে জানা যায়, কিশোরী মায়ের ওই কন্য়াসন্তান আদৌ এই যুবকের ঔরষজাত নয় ! এরপরই 'গল্পের' মোড় ঘুরে যায় ৷ আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয় যুবকের স্ত্রীকে (বর্তমানে তিনি 18 বছরের তরুণী) ৷ পরে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান তিনি ৷ অন্যদিকে, সেই যুবক এখন নিজেই একজন আইনজীবী ৷ তাঁর জীবনের লক্ষ্য মূলত দু'টি ৷ প্রথমত, নিজের জন্য সুবিচার আদায় করে প্রভাবশালী দোষীদের আইনত শাস্তি দেওয়া ৷ এবং দ্বিতীয়ত, তাঁর মতোই যাঁরা প্রতারিত, নিপীড়িত, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি সহায়তা করা ৷

কেশপুর, 7 ডিসেম্বর: সৎ সাহস আর অদম্য জেদ সম্বল হলে অসম লড়াইও জেতা যায় ৷ এই সারসত্য আবারও একবার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা এক যুবক ৷ নিরাপত্তার স্বার্থে 28 বছরের ওই যুবকের পরিচয় আমরা গোপনই রাখছি ৷ যদিও তিনি নিজে ক্যামেরার সামনে আসতে ভয় পান না ৷ আজ আমরা জানব, সেই তরুণেরই সংগ্রামের 'কাহিনি' ৷

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুর ৷ সেটা 2016 সাল ৷ দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের জোরে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল হাওয়া ৷ কর্মসূত্রে তখন কলকাতায় রয়েছেন আমাদের এই 'গল্পের নায়ক' ! হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে ফোন যায় তাঁর কাছে ৷ প্রবল উৎকণ্ঠায় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জানান, অবিলম্বে বাড়ি ফিরতে হবে ৷ না হলে ঘোর বিপদ ! কেন ? কারণ, তাঁর এক প্রতিবেশী কিশোরী, যার বয়স মাত্র 13 বছর, সে নাকি সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ! আর সেই কিশোরীর দাবি, তার ভাবী সন্তানের পিতা তারই প্রতিবেশী এই 22 বছরের 'দাদা' ! সেই প্রতিবেশী দাদাই আজকের আটাশের যুবক ৷

আরও পড়ুন: তৃণমূল নেতার অঙ্গুলি হেলনেই ধর্ষণের ভুয়ো অভিযোগ ? উঠছে পালটা চক্রান্তের তত্ত্ব

ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে যুবক জানান, এমন অভিযোগ শুনে তিনি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন ! যে কিশোরীকে তিনি ছোট বোনের মতো দেখেন, যার সঙ্গে কখনও সেভাবে কথাই হয় না, তারই গর্ভস্থ ভ্রূণ কিনা তাঁর ভাবী সন্তান ! পত্রপাঠ এই অভিযোগ খারিজ করেন যুবক ৷ কিন্তু, পাড়ার তৃণমূলের দাদারা শাসায়, ছেলে ঘরে না-ফিরলে পরিবারের বাকিদের কপালে দুঃখ আছে ৷ এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই যুবককে বাড়ি ফিরতে হয় ৷ সালিশি বসিয়ে তাঁকে বাধ্য করা হয় ওই অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে বিয়ে করতে ৷ বিয়ের করতে বাধ্য হলেও পরদিনই বাড়ি ছাড়েন যুবক ৷ অষ্টমঙ্গলায় ফের তাঁকে জোর করে বাড়ি ফেরানো হয় ৷ চাপের মুখে বিষ খেতে আত্মহত্যা করার চেষ্ট করেন যুবক ৷ কিন্তু, প্রাণে বেঁচে যান ৷

এরপরই শুরু হয় অসম লড়াই ৷ যুবক জানতেন, তাঁর জোরজবরদস্তির স্ত্রী আদতে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতার আত্মীয়া ৷ তা সত্ত্বেও আদালতে মামলা (Fake Rape Case) রুজু করেন যুবক ৷ বাড়িছাড়া হয়ে আশ্রয় নেন মেদিনীপুরে ৷ সঙ্গে চলতে থাকে আইনের পড়াশোনা ৷ আদলতেই মহুরির কাজ করে অন্ন সংস্থান ও পড়ার খরচ জোগাড় করেন ৷ অন্যদিকে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য লাগাতার যুবকের পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হয় ৷ পরিবারের সদস্যদের একঘরে করে দেয় গ্রামের মাতব্বররা ৷ এমনকী, যুবকের পরিবারকে পানীয় জলটুকু পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি ! তাদের জমি কেড়ে নেওয়া হয় ৷ আর্থিক জরিমানা আদায় করা হয় !

কিন্তু, এত কিছুর পরও হার মানেননি যুবক ৷ লড়াই চালিয়ে যান ৷ ইতিমধ্যে, তাঁর কিশোরী স্ত্রী একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় ৷ সেই শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করানোর দাবি তোলেন যুবক ৷ ঘটনার পাঁচবছর পর 2022 সালে এসে জানা যায়, কিশোরী মায়ের ওই কন্য়াসন্তান আদৌ এই যুবকের ঔরষজাত নয় ! এরপরই 'গল্পের' মোড় ঘুরে যায় ৷ আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয় যুবকের স্ত্রীকে (বর্তমানে তিনি 18 বছরের তরুণী) ৷ পরে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান তিনি ৷ অন্যদিকে, সেই যুবক এখন নিজেই একজন আইনজীবী ৷ তাঁর জীবনের লক্ষ্য মূলত দু'টি ৷ প্রথমত, নিজের জন্য সুবিচার আদায় করে প্রভাবশালী দোষীদের আইনত শাস্তি দেওয়া ৷ এবং দ্বিতীয়ত, তাঁর মতোই যাঁরা প্রতারিত, নিপীড়িত, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি সহায়তা করা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.