মেদিনীপুর, 25 জুন : 11 বছর আগে ঝাড়গ্রামে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনা ঘটে । মৃত্যু হয় 149 জনের ৷ শনাক্ত করা যায়নি 23 জন যাত্রীর দেহ । প্রায় দেড় মাস পরে ডিএনএ পরীক্ষার পর এদের মধ্যে 7জনের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু বাকি 16 জনের দেহ শনাক্ত হয়নি ৷ সেই দুর্ঘটনার 11 বছর পেরিয়ে গেলেও নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি ৷ এমনকি মেলেনি রেলের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা । শুধু মাত্র ডেথ সার্টিফিকেটের অভাবে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ধুঁকছে একাধিক মৃতের পরিজনেরা । অথচ ভুয়ো ডকুমেন্ট দিয়ে রেলে চাকরি ও ক্ষতিপূরণ পেলেন অমৃতাভ চৌধুরী ৷ এই ধরনের বঞ্চনার প্রতিবাদ সোচ্চার এখনও মৃতদের পরিবার ।
2010 সালের 27 মে গভীর রাতে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকার সরডিহায় এই ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনাটি ঘটে । রেল দফতরের তরফে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল । ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয় রাজ্য সরকারের তরফেও ৷ সেই সময় বামফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন 24 ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বার করা হবে ৷ তাঁদের শনাক্ত করে, ও মৃতদের ডেট সার্টিফিকেট দিয়ে তাঁদের ক্ষতিপূরণ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে । যদি এরপর বহু জল গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে ৷
তৎকালীন বিরোধি দল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ৷ যদিও তারপর রাজ্যে পালাবদল হয়েছে ৷ দীর্ঘ 11 বছর কেটে গিয়েছে ৷ তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী ৷ তবে এখনও জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে অনেক মৃত, আহত ও নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি ৷
সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এস ফাইভ কামরা ৷ এই কামরায় বেশিরভাগ যাত্রীই ছিলেন কলকাতা বা হাওড়ার বাসিন্দা ৷ এই 16 জন নিহতদের পরিবারের তরফে 2018 সালে ঝাড়গ্রামের দেওয়ানি আদালতে মামলা করা হয় ডেথ সার্টিফিকেট ও ক্ষতিপূরণের আশায় ৷ এঁদের মধ্যেই আছেন যুথিকা আটা ৷ সেই রাতের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায়, যুথিকা হারিয়েছিলেন তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ আটাকে ৷ এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি তাঁর মরদেহ ৷ আজও যুথিকা তাঁর আইনজীবীর কাছে আইনি প্রক্রিয়ার খবর নেন ৷
কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানার চার্চ লেনের বাসিন্দা, পেশায় গাড়ি চালক সুরেন্দ্র সিং ৷ জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় হারিয়েছিলেন স্ত্রী নীলম সিং ও দুই ছেলে রোহিত ও রাহুলকে ৷ ছোট ছেলে রোহিতের দেহ পেলেও এখনও স্ত্রী নীলম ও পুত্র রাহুলের দেহ শনাক্ত হয়নি ৷
আরও পড়ুন : Dilip Ghosh : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাগল ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না, কটাক্ষ দিলীপের
তবে পুরো ঘটনাটি কার্যত ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল ৷ তবে অমৃতাভ চৌধুরীর ভুয়ো নথি নিয়ে ক্ষতিপূরণ ও রেলে চাকিরর কথা সামনে আসতেই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা নিয়ে রাজ্যে ও রেলের গাফিলতির বিষটিও ৷ অমৃতাভ চৌধুরীর পরিবার কীভাবে চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ পেলেন কীভাবে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ এর সঙ্গে রাজ্য ও রেলের কেউ জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ এইবিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হলেন দুর্ঘটনায় শনাক্ত না হওয়া মৃতদের আত্মীয়-স্বজনের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত । তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারের মানবিকতা এবং উদাসীনতায় আজও ক্ষতিপূরণ পেল না জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের যাত্রীদের পরিবার-পরিজনরা ।’’