পশ্চিম মেদিনীপুর, 5 নভেম্বর: দুর্গাপুজো শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় কালীপুজোর প্রস্তুতি ৷ মেদিনীপুর শহরের নায়েক বাড়িতেও শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণাকালীর পুজোর প্রস্তুতি ৷ এলাকায় এই বাড়ির পুজো খুবই জনপ্রিয় ৷ ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া এই পুজো দেড়শো বছরে পা দিচ্ছে এবার ৷ নায়েকদের প্রাচীন এই পুজো নিয়ে বিভিন্ন লোককথা প্রচলিত আছে স্থানীয়দের মধ্যে ৷ তার মধ্যে অন্যতম হল দেবীর নিজের হাতে ভক্তদের ফুল দেওয়া সংক্রান্ত একটি ব্যাপার। কথিত আছে, দেবী নিজে এখানে ভক্তদের হাতে ফুল তুলে দেন।
পুজো দেখতে ভিড় জমান এলাকাবাসী ৷ ব্রিটিশ আমলে শুরু হয়েছিল এই পুজো ৷ বিপ্লবী আন্দোলনের সময় শুরু হওয়া কালীপুজো চলে আসছে প্রায় চার পুরুষ ধরে। পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই আসনে বসে পুজো হয় এই বাড়িতে। এই বিষয়টি অনেকের কাছেই বেশ অবাক করে দেওয়ার মতো। শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে এই পুজোয় বিপ্লবীদেরও আনাগোনা ছিল ৷ তা বন্ধ করতে একসময় এই পুজোয় জমায়েত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। রাজরোষে পড়ার ভয়ে পুরোহিতরাও বাড়িতে পুজো করতে আসতেন না ৷ তখন পরিবারের এক সদস্য দক্ষিণাকালীর মূর্তি গড়েন। শুরু হয় পুজো ৷ সেই ধারা আজও চলছে।
নায়েকদের এই পুজোতে পশু বলি না হলেও চাল কুমড়া বলি থেকে শুরু করে সন্ধি পুজো হয় ৷ 108টা প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো চলে সার রাত ধরে । প্রতিমার উচ্চতা প্রায় 6 ফুট । কথিত আছে, দেবী স্বয়ং পুজো শেষে পুরোহিত এবং পরিবারের সদস্যদের হাতে ফুল তুলে দেন । দেবীর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে কখনও তা নাকি বিফল হয় না ৷ অমাবস্যা শেষ হলেই এই প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
আরও পড়ুন: কালীমূর্তির পেছনে 108টি নরমুণ্ড! আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান, বলছে জনশ্রুতি
পরিবারের এক সদস্য বিশ্বেশ্বর নায়েক বলেন, "আমাদের এই পুজো ব্রিটিশ আমল থেকে হয় ৷ তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশরা কালীপুজো করতে দিত না। আর সেই ভয়ে পুরোহিতও পুজো করতে আসতেন না ৷ সেই পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবারের সদস্য়রা এই দক্ষিণা কালীর পুজো শুরু করেন । সেই থেকে আজ প্রায় দেড়শ বছর ধরে চলে আসছে পুজো। সারা বছর যাতে পরিবারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি থাকে তার জন্য আমরা শুরু থেকে শেষ এক আসনে বসেই পুজো করি।"