দাসপুর, 2 ডিসেম্বর: মানসিক ভারসাম্যহীন (Mental patient) ছেলেমেয়েকে বাড়ির উঠোনে পায়ে শিকল বেঁধে রেখে দিনযাপন। মর্মান্তিক ছবি দাসপুরের অসহায় রায় পরিবারে। শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই দিন কাটছে ভাই-বোনের। পাড়ার অন্য ছেলেরা যখন খেলাধুলোয় মগ্ন, ছোট্ট কৌশিকের পা তখন লোহার শক্ত শিকলে বাঁধা। পাশে দাঁড়িয়ে দিদি, মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে তার। দিদিকেও শিকলে বেঁধে রাখতে হয়। শৈশবে শিশুর খেলাধুলোর অধিকার তো দূর চরম আর্থিক দুরবস্থায় দু'বেলা দুমুঠো খাবারটুকুও জোটে না। হতদরিদ্র মা ভাগ্যের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে লড়েও আজ ভেঙে পড়েছেন। চোখের জল মুছে বাধ্য হচ্ছেন নিজের সন্তানদের শক্ত শিকলে বেঁধে রাখতে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের হরিরামপুরের সোমা রায় ও অভিজিৎ রায়ের দুই সন্তান ৮ বছরের কৌশিক আর কৌশিকের দিদি ১৪ বছরের কাঞ্চনার। মা সোমাদেবী বলেন, "কাঞ্চনা তাঁদের প্রথম সন্তান। বয়স বাড়তে দেখা যায় মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন কথাটুকুও বলতে পারে না। অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েও সুরাহা মেলেনি। এরপর আসে দ্বিতীয় সন্তান কৌশিক। বয়স বাড়ার সঙ্গে ক্রমশ একই অবস্থা কৌশিকেরও। মুখে নেই কথা সঙ্গে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।" দুই সন্তানকে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে বাবা-মা শেষ পুঁজিটুকুও খরচ করে একের পর এক ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়েছেন। হাজার হাজার টাকার পরীক্ষার শেষে ডাক্তাররাও জবাব দিয়ে দিয়েছেন। কৌশিকের বয়স এখন ৯ বছর। বয়সের সঙ্গে দৌরাত্ম্য বেড়েছে ছেলের। পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মারামারি থেকে পুকুরে নেমে পড়া,জ্বলন্ত আগুনে পড়ে যাওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে সে। ছেলের জন্য মাকে পাড়া পড়শিদের গঞ্জনা শুনতে হচ্ছে নিত্যদিন।
আরও পড়ুন: খড়গপুর হাসপাতালের জঞ্জাল সাফাই বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের
একদিকে অসহায় মা অন্যদিকে শিকলের জাঁতাকলের মধ্যে ছটফট করা অবুঝ শৈশব। রোজগার বলতে সোমাদেবীর একশো দিনের কাজ তাও অন্যের জব কার্ডে। আর স্বামী অভিজিৎ ট্রলি চালান সঙ্গে পুজো বা বিয়ে বাড়িতে বাজনার দলে চুড়চুড়ি বাজান। সরকারি সহযোগিতা বলতে মেয়ে কাঞ্চনার মাসখানেক আগে শুরু হওয়া মাসিক ভাতা। ছেলে কৌশিকের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা ও পার্শ্ব শিক্ষক তাপস মাজি এলাকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নাম নথিভুক্তিকরণের কাজ করেন। তিনি জানান, অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবারের। সরকারি সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি পাঠদানের মাধ্যমে এই সমস্ত শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যেই বিষয়টি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এনেছেন। এখন দেখার কৌশিক-কাঞ্চনা কবে শিকল ভেঙে পাড়ার অন্যদের সঙ্গে মাঠে খেলতে নামে আর পড়াশোনার জগতে পা দিতে পারে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকমের প্রতিশ্রুতির আশ্বাস দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে।