মেদিনীপুর, 12 মে : লকডাউন ও কোরোনা উদ্ভূক পরিস্থিতিতে রক্তসংকটে ভুগছে জেলা। বন্ধ রয়েছে রক্তদান শিবির । সংক্রমণের ভয়ে রক্ত দিতে চাইছেন না মানুষজন । কোনও প্রতিষ্ঠানের তরফেও এখন কোনওরকম শিবিরের আয়োজনের উপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । এর জেরে থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসার বা নানা কারণে ডায়ালিসিস করা রোগীরা সমস্য়ায় পড়েছেন । এই পরিস্থিতিতে সোশাল মিডিয়ায় আবেদন জানিয়ে, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে রক্তসংকটের মোকাবিলায় জেলার নানা সংগঠন।
লকডাউনের জেরে ব্যাহত রক্তপ্রদান পরিষেবা । বিশেষ করে যাঁদের মাসে মাসে বা 15 দিন ছাড়া রক্তের প্রয়োজন রয়েছে, সেই থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসার বা নানা কারণে ডায়ালিসিস করা রোগীদের রক্ত প্রদান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন । এদিকে রক্তদান শিবির আয়োজন করারও পরিকাঠামো বা পরিবেশ নেই । সংক্রমণের আশঙ্কায় রক্ত দেওয়া তো দূর, কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছেন না । এছাড়া রক্তদান শিবিরের আয়োজন করত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আপাতত বন্ধ রয়েছে সেই সব । নানা কারণে রক্তদান তাই প্রায় বন্ধের মুখে। মেদিনীপুর জেলার চারটি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রতিদিনই রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে রক্ত মজুত থাকত, আজ সেখানে রক্তের অভাব । প্রয়োজন মতো গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চিন্তায় ঘুম উড়েছে এই থ্য়ালাসেমিয়া বা ডায়ালিসিস করা রোগীদের আত্মীয়-পরিজনদের। কোথায় পাব রক্ত, কোথায় রক্তদান শিবির, সেই খোঁজ-খবর নিতেই তাঁরা সদা ব্যস্ত। মেদিনীপুর শহরের সৌম্য ব্যানার্জি। যাঁর 62 বছরের বাবার ডায়ালিসিস করার জন্য মাসে রক্তের প্রয়োজন হয়। অথচ সেই রক্ত পেতে এবং রক্তের ডোনার খুঁজে বার করতে সৌম্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দৌড়াদৌড়ি করে চলেছে । একই অভিজ্ঞতা জেলার বহু রোগীপর পরিবারের ।
অন্যদিকে আর একটি সংগঠনের উদ্যোক্তা সৌরভ বসু বলেন, "এই লকডাউনে রক্তদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে । তাই জেলায় রক্তসংকটা দেখা গেছে । বিশেষ করে মেদিনীপুর ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তশূন্য। ফলে চরম সমস্যায় থ্যালাসেমিয়া সহ ডায়ালিসিস করতে আসা রোগীরা। কোথায় যাবে, কোথায় রক্ত পাবে সেই আশায় তাঁরা দৌড়াচ্ছেন সারা জেলাজুড়ে। তবে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক দূরত্ব সহ বেশ কিছু নির্দেশিকা মেনে রক্তদান শিবিরে ছাড় দেওয়ায়, আমরা অনেক কষ্টে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পেরেছি । এর মাঝে কোরোনা নিয়ে রক্তদাতাদের মধ্যে আতঙ্কের জেরে রক্তদাতার সংখ্যাও কমেছে।"
রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তা সুব্রত চক্রবর্তী, মানস প্রামাণিকরা বলেন, "সরকারের নির্দেশের জেরে রক্তদান শিবির বন্ধ ছিল । রক্তদাতাদের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে। আমরা ইতিমধ্য়েই সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রক্তদানের আবেদন জানিয়েছি । সেই রক্তদাতাদের রক্ত সরাসরি ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে রক্তের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এক্ষেত্রেও রক্তের গ্রুপ নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে।কারণ সঠিক গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায় না সঠিক সময়ে।"
রক্ত দিতে এসেছিলেন সঞ্জয় রাউৎ ও কাশীনাথ দাসরা । তাঁরা বলেন, "রক্ত তৈরি করা যায় না । রক্ত কিনতে পাওয়া যায় না। রক্তদান করলেই রক্ত পাওয়া যায়। এই অসময়ে যদি মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারি, তবে কখন দাঁড়াব। তবে অনেক বাধা বিপত্তি আছে। তা সত্ত্বেও আমরা রক্তদান করলাম । রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আমরা আরও রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।"
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, "রক্তের সংকট মেটাতে আমরা রক্তদান করার নির্দেশ দিয়েছি । তবে বেশ কিছু নির্দেশিকা আছে । মূলত সংক্রমণ রোধে এই নির্দেশিকা । থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্ত লাগে । সেজন্য সরাসরি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করার নির্দেশ দেওয়া আছে।"