কলকাতা, 30 ডিসেম্বর: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি পরিচালক মৃণাল সেনের ষষ্ঠতম মৃত্যুবার্ষিকী। 2018 সালে এইদিনেই ভবানীপুরের বাড়িতে 95 বছর বয়সে মারা যান তিনি। 18টি জাতীয় পুরস্কার এবং 12টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
পরিচালকের 'খারিজ' ছবির মাধ্যমে বিনোদন দুনিয়ায় আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে অভিষেক ঘটে নীতিশ রায়ের ৷ কিংবদন্তি পরিচালকের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর বাংলা ছবি 'খারিজ', হিন্দি ছবি 'খানধর এবং 'জেনেসিস' ছবির আর্ট ডিরেক্টর নীতিশ রায়ের সঙ্গে পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে দেখল ইটিভি ভারত। নীতিশ রায় বলেন, "মৃণাল সেনের সঙ্গে দেখা না হলে হয়ত আমার আর্ট ডিরেক্টর হওয়াই হত না।"
কীভাবে আলাপ? নীতিশ রায় বলেন, "মৃণাল সেনের ছেলে কুণাল সেন আমার বন্ধু। সেই সূত্রেই ওঁদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। অনুপ কুমারের সঙ্গেও আলাপ ওই বাড়িতে যাতায়াতের দৌলতেই। দূর থেকে কুণালের বাবাকে দেখতাম। উনি জানতেন আমি আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়েছি। একবার কুণালের ঘরের একটা ইন্টিরিয়র করার দরকার পড়ল। আমাকে অনুপ কুমার বললেন কাজটা করতে। আমিও করলাম। মৃণাল দা'র পছন্দ হয়েছিল আমার কাজ। একদিন ডেকে বললেন, আমি স্টুডিয়োর আর্ট ডিরেক্টরদের দিয়ে কাজ করাতে করাতে ক্লান্ত। তুমি কাজ করবে আমার ছবিতে? আমিও ও বললাম চেষ্টা করব। ছবিটার নাম 'খারিজ'।"
কেমন ছিল সেই সেট? শিল্পী বলেন, "মাটি থেকে সাত-আট ফুট উঁচুতে বানাতে হয়েছিল সেট। কেননা দোতলা বাড়ি দেখাতে হয়েছিল। বড় একটা প্ল্যাটফর্ম করে তার উপরে সেট বসাতে হয়। উনি খুব ভয়ে ছিলেন যে সেটটা যদি ভেঙে পড়ে তা হলে তো অনেকের বিপদ হবে। তাই একদিন অন্তর এসে সেটের উপর লাফিয়ে দেখে যেতেন ঠিক আছে কি না। অবশেষে ভরসা পান। সেটটা কখনও এক তলা, কখনও দোতলা কখনও তিনতলা হিসেবে দেখানো হয়েছে ৷ উনি খুব খুশি হয়েছিলেন। অবাকও হন। বলেছিলেন কীভাবে আমি ব্যাপারটা করছি সেটা দেখাতে। এভাবেই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ এবং কথাবার্তা। সৌজন্যে 'খারিজ'। এরপর আরও কাজ হয়েছে আমাদের। "
নীতিশ রায় স্মৃতির সরণীতে হেঁটে আরও বলেন, "খারিজের পর আমি মুম্বই চলে যাই। ওখান থেকেও আমাকে ডেকে পাঠান 'খানধর' ছবির জন্য। বোলপুরের বিরাট একটা পুরনো বাড়িতে আমাদের কাজ হয়েছিল। বাড়িটা যতটা না পুরনো ছিল তার থেকেও বেশি আমাদের পুরনো করে তুলতে হয়েছিল। মাটি ফেলতে হয়েছিল, গাছ গজিয়ে তুলতে হয়েছিল ৷ এ ছাড়াও মৃণাল সেনের 'জেনেসিস' ছবির কাজও আমি করেছি। জয়সলমীরে গিয়ে সেট বানিয়েছিলাম। উনি প্রায়ই আমার মুম্বইয়ে এলে আমার বাড়িতে আসতেন। খুব সখ্যতা ছিল আমাদের মধ্যে। কাজের ব্যাপারে কোনও কিছু নিয়ে সমস্যায় পড়লেই আমি ওনার কাছে জিজ্ঞেস করতাম। সাহায্য করতেন উদারতার সঙ্গে। ভাবতে পারি না পাশে নেই মৃণাল দা।..."