ETV Bharat / state

Lodha Sabar Community : অনগ্রসর লোধা-শবর পাড়ায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে 11 টাকার পাঠশালা

পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর লোধা-শবর পরিবারের ছেলে মেয়েদের জন্য এগিয়ে এলেন কয়েকজন উদ্যোগী তরুণ গবেষক ও শিক্ষক-শিক্ষিকা (Studying for Lodha Sabar Community)। মাত্র 11 টাকায় অনগ্রসর ছেলেমেয়েদের দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা ৷

Concerns for Lodha Sabar Community
লোধা শবর পাড়ায় 11 টাকার শিক্ষাদান
author img

By

Published : May 2, 2022, 6:14 PM IST

ফুলপাহাড়ি, 1 মে : করোনা পরিস্থিতিতে সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর লোধা শবর পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য এগিয়ে এলেন কয়েকজন উদ্যোগী তরুণ গবেষক ও শিক্ষক-শিক্ষিকা (Studying for Lodha Sabar Community) । গত 6 মাস ধরে এলাকায় দিচ্ছেন 11 টাকায় শিক্ষাদান । পড়াশোনার পাশাপাশি হাতেকলমে কারিগরি শিক্ষার পাঠদানও চলছে । সহযোগিতায় ডঃ আম্বেদকর সোসাইটি ফর সোশ্যাল ইকোনমিক ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ৷

কয়েকজন গবেষক ও শিক্ষকের উদ্যোগে শুরু হয়েছে 11 টাকার পাঠশালা ৷ তাও আবার জঙ্গলমহল মেদিনীপুরে ৷ পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে নাম রয়েছে জঙ্গলমহলের । এখানে রয়েছে লোধা-শবর আদিবাসী মাহাতো, কুড়মী-সহ অনগ্রসর জাতিভুক্ত মানুষজন ৷ যাঁদের সংখ্যাটা বেশি এবং তাঁদের পারিবারিক আয় এতই কম যে, নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা । শহরের ফুলপাহাড়ি এলাকায় বেশিরভাগ মেয়ের হাইস্কুলে উঠতে না উঠতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় । ছেলেদের স্কুল শেষ হতে না হতেই চলে যেতে হয় দিনমজুর খাটতে । কারণ সংসারে আর্থিক অনটন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ লোকের বাড়িতে কাজ করেন ৷ কেউ বা চাষের জমিতে মজুর, আবার কেউ বাড়ি তৈরির কাজ করেন ৷ এমন পরিবারে স্কুলের পাশাপাশি টিউশনি দেওয়া একটা বিলাসিতা ।

আরও পড়ুন : Bengal Civic Polls 2022 : প্রচারে বেরিয়ে শিক্ষাদান, অভিনব জনসংযোগ তৃণমূল প্রার্থী তথা অধ্যাপকের

এই পিছিয়ে পড়া লোধা শবর মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন কয়েকজন তরুণ উদ্যোগী গবেষক ও শিক্ষক । তাঁরা শুরু করলেন 11 টাকার বিনিময়ে সুলভ পাঠশালা । প্রতিদিনই দু'বেলা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ কৌশিক, সম্রাট, দেবারতি, বিশ্বজিৎ, সৌরভ, নির্মলেন্দু, গুনগুন নামে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে চলছে এই পাঠশালা । এলাকার কচিকাঁচাদের নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে পাঠদান করছেন উৎসাহী যুবকরা । শুধু হাতে-কলমে শিক্ষাদান নয়, তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক এবং মানসিক বিকাশের পাঠদানও করছেন তাঁরা । পড়াশোনার সঙ্গেই রয়েছে যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলার পাঠদান ৷ সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা, বিউটিসিয়ান কোর্স, কম্পিউটার শেখানো, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, দাবা প্রশিক্ষণ ৷ আর এই সব শিক্ষা দিচ্ছেন এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা । যাঁদের মূল উদ্দেশ্যই হল সমাজের পিছিয়ে পড়া এই মানুষজনের মধ্যে শিক্ষার প্রভাব বিস্তার করা এবং এলাকার স্কুলছুট বাচ্চাদের পড়াশোনায় আওতায় আনা ৷

পিছিয়ে পড়া লোধা-শবর পাড়ায় 11 টাকার শিক্ষাদান উঠতি গবেষক তরুণ-তরুণীদের

এই পাঠশালায় আট থেকে দশজন শিক্ষক প্রতিদিন শিক্ষাদান করছেন শতাধিক বাচ্চাদের । একদম ছোট খুদে থেকে রয়েছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা । রোদ জল এবং ঝড় উপেক্ষা করেই মাটিতে চাটাই-ত্রিপল পেতে গাছের নিচে পাঠশালা চলছে 11 টাকার । এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রত্যেকেই জড়িয়ে রয়েছেন ডঃ আম্বেদকর সোসাইটি ফর সোশ্যাল ইকোনমিক ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির । এই লকডাউনের সময় যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন এই সংস্থা এই গ্রামে সার্ভে করেছিল । সেই সার্ভের ভিত্তিতেই পাঠশালা তৈরি করা ।

আরও পড়ুন : Special School for Tribal Child : বংশীহারিতে খেলার ছলে আনন্দ পাঠশালায় ছোটদের শিক্ষাদান একদল যুবকের

এদিন এই পাঠশালার শিক্ষক-শিক্ষিকা কৌশিক, সম্রাট, দেবারতি, বিশ্বজিৎ, সৌরভ, নির্মলেন্দু, স্বর্ণালী, সৌভনিক গুনগুনরা বলেন, "আমরা এই লকডাউনের সময় সার্ভে করেছিলাম ৷ তাতে দেখেছি এই এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষজনের বাড়ির স্কুলছুটের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি । যারা দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার ফলে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গিয়েছে । এই অবস্থায় মেয়েগুলোর যেমন বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছেলেগুলো বিভিন্ন কাজে নেমে পড়েছে । সেই সব ছাত্রছাত্রীদের পুনরায় শিক্ষার জগতে ফিরে আনার জন্যই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি ।"

এই পাঠদান পেয়ে খুশি এলাকার অভিভাবক অভিভাবকেরা । তাঁরা বলেন, "আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের রোজ দু'বেলা খাওয়াতেই পারছি না । এ অবস্থায় আমরা টিউশনি দেব কীভাবে । তবে এই স্যারেরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে যায়নি । আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব, এই স্যারদের পড়াশোনা করানোর জন্য একটা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করে দেয় ।"

এই 11 টাকার পাঠশালাতে খুশি এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও । এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যর বক্তব্য, এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় । আমরা যতটা সাহায্য করার অবশ্যই করব ।

ফুলপাহাড়ি, 1 মে : করোনা পরিস্থিতিতে সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর লোধা শবর পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য এগিয়ে এলেন কয়েকজন উদ্যোগী তরুণ গবেষক ও শিক্ষক-শিক্ষিকা (Studying for Lodha Sabar Community) । গত 6 মাস ধরে এলাকায় দিচ্ছেন 11 টাকায় শিক্ষাদান । পড়াশোনার পাশাপাশি হাতেকলমে কারিগরি শিক্ষার পাঠদানও চলছে । সহযোগিতায় ডঃ আম্বেদকর সোসাইটি ফর সোশ্যাল ইকোনমিক ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ৷

কয়েকজন গবেষক ও শিক্ষকের উদ্যোগে শুরু হয়েছে 11 টাকার পাঠশালা ৷ তাও আবার জঙ্গলমহল মেদিনীপুরে ৷ পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে নাম রয়েছে জঙ্গলমহলের । এখানে রয়েছে লোধা-শবর আদিবাসী মাহাতো, কুড়মী-সহ অনগ্রসর জাতিভুক্ত মানুষজন ৷ যাঁদের সংখ্যাটা বেশি এবং তাঁদের পারিবারিক আয় এতই কম যে, নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা । শহরের ফুলপাহাড়ি এলাকায় বেশিরভাগ মেয়ের হাইস্কুলে উঠতে না উঠতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় । ছেলেদের স্কুল শেষ হতে না হতেই চলে যেতে হয় দিনমজুর খাটতে । কারণ সংসারে আর্থিক অনটন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ লোকের বাড়িতে কাজ করেন ৷ কেউ বা চাষের জমিতে মজুর, আবার কেউ বাড়ি তৈরির কাজ করেন ৷ এমন পরিবারে স্কুলের পাশাপাশি টিউশনি দেওয়া একটা বিলাসিতা ।

আরও পড়ুন : Bengal Civic Polls 2022 : প্রচারে বেরিয়ে শিক্ষাদান, অভিনব জনসংযোগ তৃণমূল প্রার্থী তথা অধ্যাপকের

এই পিছিয়ে পড়া লোধা শবর মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন কয়েকজন তরুণ উদ্যোগী গবেষক ও শিক্ষক । তাঁরা শুরু করলেন 11 টাকার বিনিময়ে সুলভ পাঠশালা । প্রতিদিনই দু'বেলা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ কৌশিক, সম্রাট, দেবারতি, বিশ্বজিৎ, সৌরভ, নির্মলেন্দু, গুনগুন নামে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে চলছে এই পাঠশালা । এলাকার কচিকাঁচাদের নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে পাঠদান করছেন উৎসাহী যুবকরা । শুধু হাতে-কলমে শিক্ষাদান নয়, তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক এবং মানসিক বিকাশের পাঠদানও করছেন তাঁরা । পড়াশোনার সঙ্গেই রয়েছে যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলার পাঠদান ৷ সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা, বিউটিসিয়ান কোর্স, কম্পিউটার শেখানো, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, দাবা প্রশিক্ষণ ৷ আর এই সব শিক্ষা দিচ্ছেন এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা । যাঁদের মূল উদ্দেশ্যই হল সমাজের পিছিয়ে পড়া এই মানুষজনের মধ্যে শিক্ষার প্রভাব বিস্তার করা এবং এলাকার স্কুলছুট বাচ্চাদের পড়াশোনায় আওতায় আনা ৷

পিছিয়ে পড়া লোধা-শবর পাড়ায় 11 টাকার শিক্ষাদান উঠতি গবেষক তরুণ-তরুণীদের

এই পাঠশালায় আট থেকে দশজন শিক্ষক প্রতিদিন শিক্ষাদান করছেন শতাধিক বাচ্চাদের । একদম ছোট খুদে থেকে রয়েছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা । রোদ জল এবং ঝড় উপেক্ষা করেই মাটিতে চাটাই-ত্রিপল পেতে গাছের নিচে পাঠশালা চলছে 11 টাকার । এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রত্যেকেই জড়িয়ে রয়েছেন ডঃ আম্বেদকর সোসাইটি ফর সোশ্যাল ইকোনমিক ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির । এই লকডাউনের সময় যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন এই সংস্থা এই গ্রামে সার্ভে করেছিল । সেই সার্ভের ভিত্তিতেই পাঠশালা তৈরি করা ।

আরও পড়ুন : Special School for Tribal Child : বংশীহারিতে খেলার ছলে আনন্দ পাঠশালায় ছোটদের শিক্ষাদান একদল যুবকের

এদিন এই পাঠশালার শিক্ষক-শিক্ষিকা কৌশিক, সম্রাট, দেবারতি, বিশ্বজিৎ, সৌরভ, নির্মলেন্দু, স্বর্ণালী, সৌভনিক গুনগুনরা বলেন, "আমরা এই লকডাউনের সময় সার্ভে করেছিলাম ৷ তাতে দেখেছি এই এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষজনের বাড়ির স্কুলছুটের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি । যারা দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার ফলে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গিয়েছে । এই অবস্থায় মেয়েগুলোর যেমন বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছেলেগুলো বিভিন্ন কাজে নেমে পড়েছে । সেই সব ছাত্রছাত্রীদের পুনরায় শিক্ষার জগতে ফিরে আনার জন্যই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি ।"

এই পাঠদান পেয়ে খুশি এলাকার অভিভাবক অভিভাবকেরা । তাঁরা বলেন, "আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের রোজ দু'বেলা খাওয়াতেই পারছি না । এ অবস্থায় আমরা টিউশনি দেব কীভাবে । তবে এই স্যারেরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে যায়নি । আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব, এই স্যারদের পড়াশোনা করানোর জন্য একটা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করে দেয় ।"

এই 11 টাকার পাঠশালাতে খুশি এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও । এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যর বক্তব্য, এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় । আমরা যতটা সাহায্য করার অবশ্যই করব ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.