ETV Bharat / state

গাফিলতিতে রোগীমৃত্যু ! অন্তর্বর্তী জামিনের 24 ঘণ্টার মধ্যেই জেল হেফাজতে অভিযুক্ত চিকিৎসক

Doctor in Custody: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ জানিয়েছিল পরিবার ৷ তার জেরে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন চিকিৎসক ৷ তবে তার 24 ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত ৷

Doctor in Custody
গাফিলতিতে রোগীমৃত্যু !
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 29, 2023, 12:57 PM IST

মেদিনীপুর, 29 ডিসেম্বর: চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন চিকিৎসক ৷ তার 24 ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত ৷

চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে মেদিনীপুর শহরের এক নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক মহিলার । তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডা. কাঞ্চন ধাড়া ৷ সেই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকের অন্তর্বর্তী জামিনের বিরোধিতায় আদালত চত্বরে প্ল্যাকার্ড হাতে ধরনায় বসেন দিপালীর স্বামী ও মেয়ে । যদিও তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসক আদালতে হাজিরা দিলে, সব শোনার পর তাঁর 14 দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক ।

কেশপুরের ধলহারার বাসিন্দা 54 বছরের দিপালী খামরুই পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুরের একটি নার্সিংহোমে । সেখানে জেলার নাম করা ডাক্তার কাঞ্চন ধাড়ার চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি ৷ নার্সিংহোমে দুটি অস্ত্রোপচার হয় ওই মহিলার ৷ এরপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি ।মৃতার মেয়ে কেয়া মাইতি অভিযোগ তোলেন যে, চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়ার গাফিলতিতেই দিপালীর মৃত্যু হয়েছে ৷ ডাক্তারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি ও তাঁর বাবা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন ।

সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় । ইতিমধ্যে ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে তাঁর গত বুধবার অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়ে যায় ৷ তিনি শুধু জামিন পেয়েছেন তা নয়, জামিন পেয়েই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য কেয়াকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মেদিনীপুর আদালতের দ্বারস্থ হয় আতঙ্কিত পরিবার ।

আজ সকাল থেকে মেয়ে এবং মৃতার স্বামী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে পড়েন মেদিনীপুর আদালতের সামনে, তাঁদের দাবি ছিল 'বিচার চাই।' তাঁদের এও অভিযোগ যে, এই ডাক্তারকে বাঁচানোর চেষ্টায় পুলিশের একাংশ যুক্ত রয়েছে এবং তারা ছলে বলে কৌশলে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে । তাই অভিযুক্ত ডাক্তারের অবিলম্বে শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে মৃতার পরিবার ।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ফের শুনানির জন্য আদালতে হাজির করানো হয় অভিযুক্ত চিকিৎসককে । এরপর দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে সওয়াল জবাব । সেই শুনানি শেষে সন্ধ্যা নাগাদ চিকিৎসককে 14 দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নির্দেশ দেন বিচারক ৷ অন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ার পরও আদালত অভিযুক্ত চিকিৎসককে হেফাজতে পাঠানোয় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । এই ঘটনায় মৃতের পরিবার বলে, ওই চিকিৎসকের কঠিনতম শাস্তি হোক । যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসকের দাবি, চক্রান্ত করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে । এভাবে চিকিৎসকের গ্রেফতারি রীতিমতো নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ।

এ বিষয়ে মৃতার আইনজীবী অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, "এই কাঞ্চন ধাড়া ডাক্তার নাকি তিনি ডাকাত । তাঁর নামে এর আগেও আটটি মামলা চলছে, কিন্তু তারপরও তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ চিকিৎসা করে বেড়াচ্ছেন, যা অবৈধ । এই ডাক্তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন ৷ আজকে হাজিরা ছিল ৷ সিডি দেখে বিচারক তাঁর 14 দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ।" এরই সঙ্গে আইনজীবী তদন্তকারী আধিকারিককেও কটাক্ষ করেছেন ৷ তিনি বলেন, "অপদার্থ পুলিশ প্রশাসন । তবে আমরা চাই ওই ডাক্তারের আরও কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক ।"

অন্যদিকে, সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব বলেন, ওই ডাক্তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়েছিলেন । এ দিন শুনানি ছিল ৷ শুনানিতে আগের সিডি জমা না দেওয়ায় বিচারক কিছু জানতে পারেননি ৷ এরপর তিনি সিডি দেখে তাঁর প্রয়োজন মনে হয়েছে বলেই 14 দিনের জেল হেফাজতে নির্দেশ দিয়েছেন ।

আরও পড়ুন:

ফের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ

চিকিৎসায় গাফিলতির দায়ে বেসরকারি হাসপাতালকে এক কোটির বেশি জরিমানা

ছাত্রীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, আসানসোলে চিকিৎসকের বাড়িতে ভাঙচুর

মেদিনীপুর, 29 ডিসেম্বর: চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন চিকিৎসক ৷ তার 24 ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত ৷

চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে মেদিনীপুর শহরের এক নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক মহিলার । তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডা. কাঞ্চন ধাড়া ৷ সেই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকের অন্তর্বর্তী জামিনের বিরোধিতায় আদালত চত্বরে প্ল্যাকার্ড হাতে ধরনায় বসেন দিপালীর স্বামী ও মেয়ে । যদিও তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসক আদালতে হাজিরা দিলে, সব শোনার পর তাঁর 14 দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক ।

কেশপুরের ধলহারার বাসিন্দা 54 বছরের দিপালী খামরুই পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুরের একটি নার্সিংহোমে । সেখানে জেলার নাম করা ডাক্তার কাঞ্চন ধাড়ার চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি ৷ নার্সিংহোমে দুটি অস্ত্রোপচার হয় ওই মহিলার ৷ এরপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি ।মৃতার মেয়ে কেয়া মাইতি অভিযোগ তোলেন যে, চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়ার গাফিলতিতেই দিপালীর মৃত্যু হয়েছে ৷ ডাক্তারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি ও তাঁর বাবা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন ।

সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় । ইতিমধ্যে ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে তাঁর গত বুধবার অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়ে যায় ৷ তিনি শুধু জামিন পেয়েছেন তা নয়, জামিন পেয়েই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য কেয়াকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মেদিনীপুর আদালতের দ্বারস্থ হয় আতঙ্কিত পরিবার ।

আজ সকাল থেকে মেয়ে এবং মৃতার স্বামী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে পড়েন মেদিনীপুর আদালতের সামনে, তাঁদের দাবি ছিল 'বিচার চাই।' তাঁদের এও অভিযোগ যে, এই ডাক্তারকে বাঁচানোর চেষ্টায় পুলিশের একাংশ যুক্ত রয়েছে এবং তারা ছলে বলে কৌশলে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে । তাই অভিযুক্ত ডাক্তারের অবিলম্বে শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে মৃতার পরিবার ।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ফের শুনানির জন্য আদালতে হাজির করানো হয় অভিযুক্ত চিকিৎসককে । এরপর দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে সওয়াল জবাব । সেই শুনানি শেষে সন্ধ্যা নাগাদ চিকিৎসককে 14 দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নির্দেশ দেন বিচারক ৷ অন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ার পরও আদালত অভিযুক্ত চিকিৎসককে হেফাজতে পাঠানোয় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । এই ঘটনায় মৃতের পরিবার বলে, ওই চিকিৎসকের কঠিনতম শাস্তি হোক । যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসকের দাবি, চক্রান্ত করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে । এভাবে চিকিৎসকের গ্রেফতারি রীতিমতো নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ।

এ বিষয়ে মৃতার আইনজীবী অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, "এই কাঞ্চন ধাড়া ডাক্তার নাকি তিনি ডাকাত । তাঁর নামে এর আগেও আটটি মামলা চলছে, কিন্তু তারপরও তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ চিকিৎসা করে বেড়াচ্ছেন, যা অবৈধ । এই ডাক্তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন ৷ আজকে হাজিরা ছিল ৷ সিডি দেখে বিচারক তাঁর 14 দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ।" এরই সঙ্গে আইনজীবী তদন্তকারী আধিকারিককেও কটাক্ষ করেছেন ৷ তিনি বলেন, "অপদার্থ পুলিশ প্রশাসন । তবে আমরা চাই ওই ডাক্তারের আরও কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হোক ।"

অন্যদিকে, সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব বলেন, ওই ডাক্তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়েছিলেন । এ দিন শুনানি ছিল ৷ শুনানিতে আগের সিডি জমা না দেওয়ায় বিচারক কিছু জানতে পারেননি ৷ এরপর তিনি সিডি দেখে তাঁর প্রয়োজন মনে হয়েছে বলেই 14 দিনের জেল হেফাজতে নির্দেশ দিয়েছেন ।

আরও পড়ুন:

ফের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ

চিকিৎসায় গাফিলতির দায়ে বেসরকারি হাসপাতালকে এক কোটির বেশি জরিমানা

ছাত্রীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, আসানসোলে চিকিৎসকের বাড়িতে ভাঙচুর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.