ETV Bharat / state

পরিচর্যার অভাব, ধ্বংসের মুখে শের শাহের তৈরি সরাইখানা - শেরশাহ

জাতীয় সড়ক তৈরির করার পাশাপাশি শেরশাহ পথিকদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করেছিলেন সরাইখানা ৷ তার মধ্যে একটি রয়েছে দুর্গাপুরের খয়রাশোলের দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ৷ কিন্তু পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে শেরশাহের স্মৃতিবিজড়িত সেই সরাইখানা ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Aug 21, 2020, 5:57 PM IST

দুর্গাপুর, 21 অগাস্ট : সড়ক-ই-আজ়ম ৷ যা পরে গ্রান্ড ট্র্যাক রোড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে ৷ এশিয়া মহাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নির্মিত হয়েছিল শেহ শাহের (1486 – 1545) আমলে ৷ সম্রাট বুঝেছিলেন, শুধু সড়ক তৈরি করলেই হবে না ৷ পথিকদের বিশ্রামের জন্য প্রয়োজন সরাইখানার ৷ তাই রাস্তার দু'পাশে তিনি তৈরি করেন একাধিক সারাইখানা ৷ সেই সরাইখানাগুলির একটি রয়েছে দুর্গাপুরে খয়রাশোলে দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ৷ তবে, ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এই সরাইখানা আজ অবহেলার শিকার ৷ পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হওয়ার মুখে ৷

1540 সালে শুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন শেরশাহ । এর আগে মৌর্য শাসনকালে তৈরি হয়েছিল একটি সড়ক । যে সড়কটি গঙ্গার মুখ থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । শেরশাহের শাসন কালে অর্থাৎ 1540 থেকে 1545 সাল পর্যন্ত এই সড়কটির সম্প্রসারণ হয় । শের শাহ এর নাম দেন সড়ক -ই -আজ়ম । সেই সময় অবিভক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, দিল্লি ও পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানের কাবুল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই দীর্ঘ পথ । প্রায় 2,500 কিলোমিটারের এই পথ তখন মূল সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হত । পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা এই রাস্তার নামকরণ করেন "গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা GT রোড৷"

পরিচর্যার অভাবে আজ নষ্ট হচ্ছে শেরশাহর তৈরি সরাইখানা

তবে, শের শাহ বুঝেছিলেন দীর্ঘ এই পথ যাত্রার কারণে জনসাধারণের বিশ্রামের জন্য দুই ক্রোশ অন্তর অন্তর সরাইখানা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে । একই সঙ্গে রাস্তার দু'পাশে তিনি বৃক্ষরোপণও করেছিলেন ৷ সেই সময়ের একটি সরাইখানা তৈরি হয়েছিল দুর্গাপুরের দু'নম্বর জাতীয় সড়কের (বর্তমান) পাশে খয়রাশোল গ্রামে ৷ তবে আজ তার অবস্থা বেহাল ৷ ক্রমশ ভেঙে গিয়েছে একাধিক অংশ ৷ বেলে পাথরের তৈরি ইট ও চুন সুঁড়কি দিয়ে গাঁথা দেওয়াল কোনওরকমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ৷ জানান দিচ্ছে ইতিহাসের ৷

দুর্গাপুরের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ভবানী ভট্টাচার্য জানালেন, "খয়রাশোলেও একটি সরাইখানা তৈরি হয়েছিল । সেই সময়ে রাজাদের ডাক যেত হাতি, ঘোড়ার পিঠে করে । দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হত তাঁদের । তখন এই সরাইখানায় বিশ্রাম নিতেন তাঁরা ৷ পাশাপাশি ঘোড়ার আস্তাবলও ছিল । এছাড়াও অনেক সৈন্য যাঁরা দিল্লি যেতেন বিভিন্ন কাজে তাঁরাও এখানে রাত্রি বাস করতেন । রাস্তার উলটো দিকে থাকা ওই কুয়োর জল পান ছাড়াও ওখানে ঘোড়া এবং মানুষ স্নান করতেন । দুর্ভাগ্য আমাদের যে পুরাতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি সংরক্ষিত হয়নি । তাই আগামী ভবিষ্যৎ হয়ত এই ইতিহাসের কথা জানতেই পারবে না ।" স্থানীয় বাসিন্দারাও অনেকেই বলেছেন শেরশাহের তৈরি এই সরাইখানা সংরক্ষিত হোক ।

আজ বদলে গিয়েছে গ্রান্ড ট্যাঙ্ক রোড ৷ আরও বেশি ঝাঁ চকচকে হয়েছে৷ কিন্তু একরাশ অবহেলা নিয়ে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আছে শের শাহের স্মৃতিবিজড়িত সরাইখানা । এখনই যদি সংস্কারের কোনও রকম ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে হয়ত অচিরেই হারিয়ে যাবে এই ঐতিহাসিক স্থান ৷

দুর্গাপুর, 21 অগাস্ট : সড়ক-ই-আজ়ম ৷ যা পরে গ্রান্ড ট্র্যাক রোড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে ৷ এশিয়া মহাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নির্মিত হয়েছিল শেহ শাহের (1486 – 1545) আমলে ৷ সম্রাট বুঝেছিলেন, শুধু সড়ক তৈরি করলেই হবে না ৷ পথিকদের বিশ্রামের জন্য প্রয়োজন সরাইখানার ৷ তাই রাস্তার দু'পাশে তিনি তৈরি করেন একাধিক সারাইখানা ৷ সেই সরাইখানাগুলির একটি রয়েছে দুর্গাপুরে খয়রাশোলে দুই নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ৷ তবে, ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এই সরাইখানা আজ অবহেলার শিকার ৷ পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হওয়ার মুখে ৷

1540 সালে শুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন শেরশাহ । এর আগে মৌর্য শাসনকালে তৈরি হয়েছিল একটি সড়ক । যে সড়কটি গঙ্গার মুখ থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । শেরশাহের শাসন কালে অর্থাৎ 1540 থেকে 1545 সাল পর্যন্ত এই সড়কটির সম্প্রসারণ হয় । শের শাহ এর নাম দেন সড়ক -ই -আজ়ম । সেই সময় অবিভক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, দিল্লি ও পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানের কাবুল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই দীর্ঘ পথ । প্রায় 2,500 কিলোমিটারের এই পথ তখন মূল সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হত । পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা এই রাস্তার নামকরণ করেন "গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা GT রোড৷"

পরিচর্যার অভাবে আজ নষ্ট হচ্ছে শেরশাহর তৈরি সরাইখানা

তবে, শের শাহ বুঝেছিলেন দীর্ঘ এই পথ যাত্রার কারণে জনসাধারণের বিশ্রামের জন্য দুই ক্রোশ অন্তর অন্তর সরাইখানা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে । একই সঙ্গে রাস্তার দু'পাশে তিনি বৃক্ষরোপণও করেছিলেন ৷ সেই সময়ের একটি সরাইখানা তৈরি হয়েছিল দুর্গাপুরের দু'নম্বর জাতীয় সড়কের (বর্তমান) পাশে খয়রাশোল গ্রামে ৷ তবে আজ তার অবস্থা বেহাল ৷ ক্রমশ ভেঙে গিয়েছে একাধিক অংশ ৷ বেলে পাথরের তৈরি ইট ও চুন সুঁড়কি দিয়ে গাঁথা দেওয়াল কোনওরকমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ৷ জানান দিচ্ছে ইতিহাসের ৷

দুর্গাপুরের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ভবানী ভট্টাচার্য জানালেন, "খয়রাশোলেও একটি সরাইখানা তৈরি হয়েছিল । সেই সময়ে রাজাদের ডাক যেত হাতি, ঘোড়ার পিঠে করে । দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হত তাঁদের । তখন এই সরাইখানায় বিশ্রাম নিতেন তাঁরা ৷ পাশাপাশি ঘোড়ার আস্তাবলও ছিল । এছাড়াও অনেক সৈন্য যাঁরা দিল্লি যেতেন বিভিন্ন কাজে তাঁরাও এখানে রাত্রি বাস করতেন । রাস্তার উলটো দিকে থাকা ওই কুয়োর জল পান ছাড়াও ওখানে ঘোড়া এবং মানুষ স্নান করতেন । দুর্ভাগ্য আমাদের যে পুরাতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি সংরক্ষিত হয়নি । তাই আগামী ভবিষ্যৎ হয়ত এই ইতিহাসের কথা জানতেই পারবে না ।" স্থানীয় বাসিন্দারাও অনেকেই বলেছেন শেরশাহের তৈরি এই সরাইখানা সংরক্ষিত হোক ।

আজ বদলে গিয়েছে গ্রান্ড ট্যাঙ্ক রোড ৷ আরও বেশি ঝাঁ চকচকে হয়েছে৷ কিন্তু একরাশ অবহেলা নিয়ে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আছে শের শাহের স্মৃতিবিজড়িত সরাইখানা । এখনই যদি সংস্কারের কোনও রকম ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে হয়ত অচিরেই হারিয়ে যাবে এই ঐতিহাসিক স্থান ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.