দুর্গাপুর, 20 এপ্রিল: রাজু ঝা খুনের ঘটনায় তাঁর বন্ধু কয়লা মাফিয়া নারায়ণ খাগড়া ওরফে নরেন্দ্র খাড়কার অফিস সিল করলেন সিটের আধিকারিকরা ৷ এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার হয় দুর্গাপুরের ব্যবসায়ী নরেন্দ্র খাড়কার গাড়ির চালক অভিজিৎ মণ্ডল । আটক হয় নরেন্দ্র খাড়কার অফিসের আরও দুজন কর্মী । তারপর বুধবার রাতে দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের অম্বুজা উপনগরীতে নরেন্দ্র খাড়কার অফিসে আসেন বিশেষ তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা । এক ঘণ্টা ধরে অফিসের বাইরে অপেক্ষা করেও অফিসের কোনও কর্মীর দেখা না-মেলায় তদন্তকারী অফিসারেরা সিল করে দেযন অফিসটিকে ।
ধৃত অভিজিৎ মন্ডলকেও নিয়ে আসা হয় সেখানে । সিটের আধিকারিকরা ওই অফিসের ভেতর ঢুকেও তদন্ত চালাতে চাইছে ৷ সে জন্যই অফিসটি সিল করে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে । তদন্তকারী আধিকারিকরা নরেন্দ্র খাড়কার এই কার্যালয়ের ভেতরে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখতে চাইছেন । কিন্তু কে এই নরেন্দ্র খাড়কা ?
জানা গিয়েছে, নরেন্দ্র খাড়কা রানিগঞ্জের বাসিন্দা ৷ বাম আমলে বেআইনি কয়লার কালো কারবারে নামেন তিনি। এই সময় রানিগঞ্জের এক নেতার হাত নরেন্দ্র খাড়কার মাথায় ছিল বলে সূত্রের খবর । এরপর কয়লার কালো কারবারকে কেন্দ্র করে রাজু ঝা'র সঙ্গে তাঁর দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ৷ রাজু ঝা ও নরেন্দ্র খাড়কারা একসঙ্গে বেআইনি কয়লা পাচারের জন্য প্যাড প্রথা চালু করে । তাদের সহযোগী আরও অনেক কয়লা মাফিয়া মিলে বাম রাজত্বে তৈরি করে কোল সিন্ডিকেট। তারা বেআইনিভাবে খনি অঞ্চলের যত্রতত্র র্যাট হোল তৈরি করে কিংবা পরিত্যক্ত খনি থেকে অবশিষ্ট কয়লা তুলে এবং অবশ্যই রাষ্ট্রায়ত্ত ইসিএলের একশ্রেণির আধিকারিক-সহ সিআইএসএফ বাহিনীকে হাত করে বেআইনি কয়লার রমরমা কারবার শুরু করে ।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও এই কয়লা পাচার হত অবলীলায় ৷ কারণ নেতা থেকে পুলিশ সবাই তখন 'অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র' । ফুলে ফেঁপে ওঠে রাজু ঝা, নরেন্দ্র খাড়কা, জয়দেব মণ্ডল, কালো সিং-সহ আরও বহু মাফিয়ার সম্পত্তি। কিন্তু রাজু ঝা'র নাম লাইমলাইটে এলেও নরেন্দ্র খাড়কা তাঁর সমান সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠে এই কারবার থেকে। রাজুর সঙ্গে নরেন্দ্রর পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিল বলেই এতদিন পর্যন্ত এই এলাকার বাসিন্দারা জানতেন । কিন্তু লাইনলাইটে থাকা রাজু ঝা খুন হওয়ার পর নরেন্দ্র খাড়কার গাড়ির চালক গ্রেফতার হয়। আর তাতেই প্রশ্ন ওঠে নরেন্দ্র খাড়কা কি তবে রাজু খুনে জড়িত? কিন্তু কেন ?
মাফিয়া রাজের এটাই বোধহয় চিরাচরিত ইতিহাস। এর আগেও দেখা গিয়েছে, এক সময় বন্ধু থাকা মাফিয়ারা একদিন নিজে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে গিয়ে তার বন্ধু অন্য মাফিয়াকে খুন করেছে। আপাতত দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে নারায়ণ সরকার অফিস সিল রয়েছে। কিন্তু সুপারি কিলার নিয়োগ করে কেন রাজু ঝা'কে খুন করা হল ? অর্জুন সিং এর আগে দুর্গাপুরে এই খুনের ঘটনায় 'বড় মাথা' জড়িয়ে আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ।
অন্যদিকে কয়লা কাণ্ডে রাজু ঝা'কে সিবিআই তলব করেছিল । রাজু পাছে তাদের নাম কেন্দ্রীয় এজেন্সির সামনে বলে দেয় সেই ভয়ে তাহলে কি কোন 'বড় মাথা' তাঁকে সরিয়ে দিল ? সেই 'বড় মাথা' কি পশ্চিম বর্ধমান জেলার ? তিনিই কি নরেন্দ্র খাড়কাকে কাজে লাগিয়ে রাজু ঝা'র মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিল? যেহেতু কেন্দ্রীয় এজেন্সি রাজু ঝা'কে তলব করেছিল, তাই কি তাঁকে খুন হতে হল ? সেই বিষয়ে কি কেন্দ্রীয় এজেন্সি আলাদা করে কোন তদন্তে নামবে? এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর ও আসানসোলে । ইতিমধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকেও রাজু ঝা'র এভাবে খুন হয়ে যাওয়ার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অর্জুন সিং দাবি করেছেন, রাজু ঝা'র খুন খুব সহজ বিষয় নয় ।
আরও পড়ুন: অবশেষে রাজু ঝা খুনে গ্রেফতার এক, পাঠানো হল 14 দিনের পুলিশি হেফাজতে