গঙ্গাসাগর, 14 জানুয়ারি: মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাসাগর কয়েকদিনের জন্য হয়ে যায় মিনি ভারতবর্ষ ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভিড় জমান সাগর তীরে । পুণ্যলগ্নে স্নানের পাশাপাশি পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে চলে পিণ্ডদান । এই পিণ্ডদান ও শ্রাদ্ধকর্ম করার জন্য শাস্ত্রে উল্লিখিত 55টি স্থানের মধ্যে বিহারের গয়াই শ্রেষ্ঠ। সাধারণভাবে চালের তৈরি পিণ্ড দান করা হলেও গয়ায় ফল্গু নদীর তীরে বালির তৈরি পিণ্ড দান করা হয় ৷ সেটিকেই চালের পিণ্ডদানের সমান মনে করা হয় ।
সেখানকার মতো গঙ্গাসাগরের পবিত্র বেলাভূমিতে বালি দিয়ে পিণ্ডদান করার রীতি রয়েছে । মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরের তীরে সেই বালি দিয়ে পিণ্ডদানের ছবিই ধরা পড়ল ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় ৷ এই বিষয়ে ব্রাহ্মণ দেবপ্রসাদ ত্রিপাঠী জানান, শুধু বঙ্গবাসী নয় গঙ্গাসাগরের পবিত্র জায়গায় এসে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ তাদের পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে পিণ্ডদান করেন।
বাল্মিকী রচিত রামায়ণে গয়ায় বালির পিণ্ডদানের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে, পিতৃপক্ষের সময় রাম, সীতা ও লক্ষণ পিণ্ডদান করার জন্য গয়া ধামে পৌঁছন । কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়ার জন্য তাঁরা শহরের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই দৈববাণী হয় যে পিণ্ডদানের সময় অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে । সেই মুহূর্তে দশরথ দেখা দিয়ে সীতাকে পিণ্ডদানের জন্য বলেন। তখন সীতা ফল্গু নদীতে বটবৃক্ষ, কেতকী ফুল ও গরুকে সাক্ষী রেখে বালির পিণ্ড তৈরি করে দশরথের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেন । এরপর রাজা দশরথের আত্মা শান্তি ও মোক্ষলাভ করে।
মনে করা হয় তখন থেকে বালির পিণ্ডদানের প্রথা প্রচলিত হয়েছে । এই বিষয়ে গঙ্গাসাগরে আগত পুণ্যার্থী পঞ্চানন কর বলেন, "পূর্বপুরুষ থেকে এই প্রথা চলে আসছে ৷ মূলত রামায়ণের সময়কালে রাজা দশরথের মৃত্যুর পর বালি দিয়ে পিণ্ডদান করেছিলেন সীতা ৷ তারপর থেকে এই প্রথা চলে আসছে । মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় আমি পিণ্ডদান করতে এসেছি । গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান এবং বাবা কপিলমুনির কাছে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করি।"