মহাকুম্ভনগর, 28 জানুয়ারি: মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে মহাকুম্ভে নিরাপত্তা জোরদার করেছে যোগী সরকার ৷ মকর সংক্রান্তিকে ছাপিয়ে পুণ্যস্নানের জন্য মৌনী অমাবস্যার দিন প্রায় 10 কোটি পুণ্যার্থী ভিড় জমাবেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, শুরু থেকে গত 17 দিনে 15 কোটিরও বেশি মানুষ পুণ্যস্নান করেছেন ৷
ত্রিবেণী সঙ্গমের ধারে কয়েক হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত মেলা এলাকায় এআইচালিত সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ড্রোন স্থাপনের পাশাপাশি বহু কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে ৷ যদিও মেলা এলাকাটি ইতিমধ্যেই আগামী কয়েকদিনের জন্য একটি নো-ভেহিক্যাল জোন ঘোষণা করা হয়েছে ৷ প্রয়াগরাজ প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে চার চাকার গাড়ি ব্যবহার এড়াতে এবং প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গমে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র টু হুইলার বেছে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে ।
এই বিষয়ে জেলাশাসক রবীন্দ্রকুমার মান্দার জানান, তীর্থযাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে বাসিন্দাদের টু-হুইলার ব্যবহার করতে বা হেঁটে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে ৷
উত্তরপ্রদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র মকর সংক্রান্তিতে (14 জানুয়ারি) 3.5 কোটি ভক্ত ও সাধুরা অমৃতস্নানে অংশ নিয়েছিলেন । 28 জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল 8টা নাগাদ 45 লাখেরও বেশি ভক্ত পুণ্যস্নান করেন ৷ মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে বুধবার সকাল 6টা 45 মিনিটে হেলিকপ্টার থেকে ফুলের পাপড়ি ঝরনার পরিকল্পনা করেছে ।
অমৃত স্নানের দিনগুলি সূর্য, চন্দ্র এবং বৃহস্পতির জ্যোতিষশাস্ত্রীয় সংমিশ্রণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় ৷ যা পবিত্র নদীগুলির আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে বলে বিশ্বাস । হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাঘ মাসের কৃষ্ণ অমাবস্যার দিন মৌনী অমাবস্যা পালিত হয় ৷ এই দিনটি সমস্ত বিশেষ স্নানের তারিখগুলির মধ্যে সবচেয়ে শুভ তিথি হিসাবে বিবেচিত হয় । বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে পবিত্র নদীগুলির জল 'অমৃত'-এ পরিণত হয় । মৌনী অমাবস্যাকে 'সাধুদের অমাবস্যা' হিসেবেও উল্লেখ করা হয় । মৌনী অমাবস্যার স্নান ঐতিহ্যগতভাবে নীরবে সম্পাদিত হয় ।
ইতিমধ্যে, প্রয়াগরাজ প্রশাসন কুম্ভ ময়দানজুড়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন করেছে ৷ বিশাল জনসমাগমকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়াগরাজের সমস্ত বোর্ডে ক্লাস 1 থেকে 8 পর্যন্ত স্কুলগুলি 28, 29 এবং 30 জানুয়ারি বন্ধ থাকবে ৷
বারাণসী ও অযোধ্যায় তিল ধারণের জায়গা নেই :
গিজগিজ করছে লোক ৷ ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ ৷ সোমবারের মধ্যে 25 লক্ষ লোক অযোধ্যায় পৌঁছয় ৷ মঙ্গলবারও 10-15 লক্ষ লোক পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে । একই সময়ে, প্রতিদিন 15 থেকে 20 ভক্ত বারাণসী যাচ্ছেন । এই সংখ্যা খুব শিগগির 30 থেকে 40 লাখে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ দুই শহরের স্কুল 5 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । মৌনী অমাবস্যার ভিড় প্রয়াগরাজ থেকে বারাণসী এবং অযোধ্যায় যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে । এমন পরিস্থিতিতে একে নিয়ন্ত্রণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
ভিড়ের কথা মাথায় রেখে বারাণসী পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ঘুরপথে ব্যবস্থা করেছে । এডিসিপি ট্রাফিক রাজেশ পান্ডে জানান যে, মৌনী অমাবস্যা এবং বসন্ত পঞ্চমীতে সুবিধার জন্য, 5 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন ট্র্যাফিক নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বাইরের যানবাহন শহরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ শহরের বাইরে গাড়ি পার্কিং করে সেখান থেকে শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়াও, পর্যটকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, একটি বিশেষ Google Map পেজ তৈরি করা হয়েছে, যার QR CODE বারাণসীতে আগত বাইরের ভক্তদের পার্কিংয়ের ঠিকানা বলে দেবে ।
মহাকুম্ভে স্নান সেরে রামমন্দির দর্শনের জন্য অযোধ্যার দিকে আসা যানবাহনের কারণে রামনগরীতেও ভিড়ের চাপ রয়েছে । পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গভীর রাতে গোরখপুর-অযোধ্যা-লখনউ মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন । অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের যানবাহনকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না ।
এই বিষয়ে আইজি প্রবীণ কুমার জানান, লাখ লাখ ভক্তের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে । প্রয়াগরাজ থেকে অযোধ্যায় আসা যানবাহনের বৃদ্ধিতে জাতীয় সড়ক কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে । এ ছাড়া অযোধ্যার চারপাশের সব পার্কিং লট ভর্তি । ভক্তদের জন্য যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য বাড়তি ব্যবস্থা করা হচ্ছে । মৌনী অমাবস্যাকে সামনে রেখে প্রয়াগরাজ থেকে প্রচুর মানুষ আসছেন এবং যাচ্ছেন । এটিকে সামনে রেখে সকল রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে ।