মালদা, 14 জানুয়ারি: ব্যাংকে টাকা জমিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন দুঃসময়ে সেই টাকা কাজে আসবে বলে ৷ তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কেউ যাতে টাকা না নিতে পারে তার জন্য সতর্কও ছিলেন ৷ নেট ব্যাংকিং কিংবা এটিএম কার্ড করেননি ৷ এমনকি কিছুদিন আগে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে টাকা তোলার অপশনও বন্ধ করে দেন ৷
তবু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ছ’দফায় তিন লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেছে সাইবার দুষ্কৃতীরা ৷ ঘটনাটি জানতে পেরে মাথায় হাত পড়েছে সঞ্চিতা কুমার নামে এক গৃহবধূর ৷ এই ঘটনায় মালদা জেলা সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি ৷ তার কপি জমা দিয়েছেন স্থানীয় থানাতেও ৷
তাঁর অভিযোগ, এত কিছু ঘটে গেলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে সহযোগিতা করছে না ৷ যদিও এই নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷
সঞ্চিতা কুমারের বাড়ি মালদার রতুয়া থানার দেবীপুর গ্রামে ৷ স্বামী দিলীপ মিশ্র পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক ৷ সঞ্চিতাদেবী ঘরের কাজ সামলান ৷ তাঁর অভিযোগ, “ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার ৷ সেদিন দুষ্কৃতীর দল ছ’দফায় আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ছ’দফায় তিন লাখ টাকা তুলে নেয় ৷ গতকাল ব্যাংকের তরফে আমাকে ফোন করে ডাকা হয় ৷ কিন্তু ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকায় আমি ফোন ধরতে পারিনি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ পর আমার স্বামী ফোন করে জানান, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে তিন লাখ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে ৷ আমি কাজকর্ম ফেলে বন্ধন ব্যাংকের দুর্গাপুর শাখায় চলে আসি ৷ ব্যাংক থেকে আমাকে সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয় ৷ আমি গতকাল সেখানে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি ৷ তার কপি রতুয়া থানায় জমা দিয়েছি ৷”
সঞ্চিতাদেবী আরও বলেন, “গতকাল ব্যাংক থেকে আমাকে একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয় ৷ এই নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কীভাবে আমার মোবাইলে কোনও লিংক এসেছিল, তা জানি না ৷ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে, আমার মোবাইল ফোন আমার হাতে থাকলেও সেটা বাইরে থেকে কেউ বা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে ৷ এর মধ্যে কতটা সত্যি আর মিথ্যে আমি জানি না ৷’’
সঞ্চিতা কুমার জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে 5 লাখ 97 হাজার টাকা ছিল ৷ সেখান থেকে তিন লাখ টাকা ছ’বারে কাটা হয়েছে ৷ তাঁর এটিএম কার্ড নেই ৷ নেট ব্যাংকিং করি না ৷ এমনকি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েবের খবরে ভয় পেয়ে তিনি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে টাকা ওঠানোর ব্যবস্থাও লক করে দেন ৷
তিনি বলেন, ‘‘তারপরেও কে বা কারা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিল বুঝতে পারছি না ৷ আমি সুবিচার চাই ৷ টাকা ফেরতের পাশাপশি কে বা কারা এই কাজ করছে, তা জানতে চাই ৷ আমার সঙ্গে ব্যাংকের কেউ কো-অপারেট করছেন না ৷ আমি চাই, যাঁর এক টাকাও এভাবে খোওয়া গিয়েছে, তিনি যেন লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ৷ তাহলেই সবাই বাঁচতে পারব ৷ টাকা যদি আমার বাড়ি থেকে চুরি যেত তাতে আমি দায়ী থাকতাম ৷ কিন্তু ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে গেলে আর উপর ভরসা করব ?”
এই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে রতুয়া থানার এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা তদন্ত শুরু করেছেন ৷ তদন্ত শুরু করেছে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশও ৷ এদিকে সঞ্চিতাদেবী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, টাকা ফেরত না পেলে তাঁরা ভবিষ্যতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবেন ৷