চুরুলিয়া, 12 নভেম্বর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়া । আর এই চুরুলিয়া গ্রামে প্রায় 400 বছর ধরে হয়ে আসছে ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো । এই কালীপুজোয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজে আসতেন, বসে থাকতেন এবং গানও গাইতেন । নজরুল ইসলাম একজন মুসলিম হয়েও যে এত শ্যামা সংগীত লিখেছিলেন তার অনুপ্রেরণা ছিল এই ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো । এমনটাই দাবি ভট্টাচার্য ও কাজী পরিবারের সদস্যদের ৷
সেই পুজোই আজও একইভাবে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে চলেছে । আজও কাজী পরিবার-সহ প্রচুর মুসলিম পরিবার এসে এই ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোয় অংশ নেয়, গান গায় । তবে এখানকার কালীপুজো অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা । কারণ তন্ত্রমতেই হয় ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো । তবে মন্ত্রের শব্দ অন্য কারো শোনা বারণ ৷ তাই অন্য কেউ যাতে মন্ত্রের শব্দ শুনতে না পায় পুজোর সময় মন্দির চত্ত্বরে গাওয়া হয় শ্যামাসঙ্গীত । পাশাপাশি দেওয়া হয় উলুধ্বনি । পুজোর আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় যাত্রাও ।
ভট্টাচার্য পরিবারের পুরোহিত অশোককুমার ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের এই পুজো খুব গোপন । গুরু এবং শিষ্যের পুজো । এই পুজো যেহেতু তন্ত্র মতে হয় সেহেতু এই পুজোর কোনও মন্ত্রের আওয়াজ বাইরে যাবে না ৷ আর তাই পুজো চলাকালীন মন্দিরের মধ্যে শ্যামা সংগীত পরিবেশন করা হয় । উলুধ্বনি দেয় মহিলারা ।"
কথিত আছে, কিশোরবেলায় কালীপুজোয় এই মন্দিরে এসে বসে থাকতেন কাজী নজরুল ইসলাম । যাত্রাও দেখতেন তিনি । পাশাপাশি তিনি গানও গাইতেন বলে ভট্টাচার্য পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন । পরিবারের সদস্য নাড়ুগোপাল ভট্টাচার্যের কথায়, তাঁর বাবার বয়সি ছিলেন নজরুল ইসলাম । একই বছরে জন্ম তাঁদের । তিনি বলেন," বাবার মুখে শুনেছি নজরুল ইসলাম এখানে ছোটবেলায় খুব আসতেন এবং তিনি গানও গাইতেন । আজও জাতপাতের ঊর্ধ্বে আমাদের এই পুজো । আজও সবাই মিলে আমরা এই পুজোয় অংশ নিই । আমাদের মন্দিরের দ্বার সব মানুষের জন্য খোলা ।"
আজও কাজী পরিবারের সদস্যরা একইভাবে এই ভট্টাচার্য পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে আছেন । তারা মন্দিরে আসেন । সবার সঙ্গে মিলেমিশে মন্দিরে বসেন । ভট্টাচার্য পরিবারের সঙ্গে নাড়ু ও মিষ্টি ভাগ করে খান । কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পর্কে নাতি সুবর্ণ কাজী আজও এই মন্দিরে এসে সংগীত পরিবেশন করেন ।
আরও পড়ুন: