জামুড়িয়া, 9 অগাস্ট : রোগকে দূরে রাখুন, রোগীকে নয় । কোরোনা আক্রান্তদের যাতে কোনওভাবে অপদস্থ হতে না হয়, তার জন্য সরকারের তরফে প্রচার করা হচ্ছে ৷ তাও রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় কোরোনা আক্রান্তকে হেনস্থা হতে হয়েছে ৷ আর এবার কোরোনা আক্রান্ত না হয়ে কার্যত একঘরে হয়ে থাকতে হয় জামুড়িয়ার একটি পরিবারকে ৷ কোরোনা অপবাদ দিয়ে ওই পরিবারকে কার্যত সমাজ থেকে বিচ্যুত করে রাখা হয় । বাড়ির পরিচারিকা থেকে পাড়ার মুদির দোকান, দুধওয়ালা, ধোপা, নাপিত সব বন্ধ করে দেওয়া হয় । এমনকী ওই পরিবারটিকে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য করে স্থানীয় কিছু যুবক । খবর পেয়ে ETV ভারতের প্রতিনিধি পৌঁছান ওই পরিবারের কাছে । তাঁদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশ সবাইকে জানানো হয় বিষয়টি । প্রত্যেকেই আশ্বাস দিয়েছেন আর কোনও সমস্যা হবে না পরিবারটির ।
জামুড়িয়া থানার অন্তর্গত শিবপুর পাওয়ার হাউজ় এলাকায় পরিবার নিয়ে বাস করেন পার্থ জানা । চাকরি সূত্রে জামুড়িয়া শিবপুর এলাকায় থাকেন তাঁরা । বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থায় কাজ করেন । কম্পানির আবাসনেই থাকেন । স্ত্রী পিউ মিত্র জানা গৃহবধূ । তাঁদের 8 বছরের এক সন্তান আছে । সম্প্রতি, স্ত্রীরোগজনিত কারণে কলকাতায় গেছিলেন পিউ । বলা হয় অস্ত্রোপচার করতে হবে । সেখানে তাঁর কোরোনা পরীক্ষা করা হয় । কিন্তু শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দেখেই চিকিৎসকরা ডিক্লাইন রিপোর্ট দেন । তবে কোরোনা পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলেই 5 অগাস্ট ফিরে আসেন তাঁরা । অভিযোগ, ফেরার পরের দিন থেকেই পিউকে কোরোনা আক্রান্ত বলে এলাকায় গুজব ছড়াতে শুরু করে স্থানীয় কিছু যুবক । গুজব এমন জায়গায় পৌঁছায়, পাড়ার দোকানি তাঁদের জিনিস দিতে অস্বীকার করে । বাড়ির পরিকারিকাকে পাড়ার যুবকরা হুমকি দিয়ে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেয় । দুধওয়ালা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সবাইয়ের আসা বন্ধ করে দেওয়া হয় । এসবই অভিযোগ করেছেন পিউ ও তাঁর স্বামী পার্থ । এমনকী তাঁদের বাড়ি থেকে বের হতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ।
গতকাল ফেসবুকে লাইভ করে বিষয়টি জানিয়ে প্রশাসনের সহায়তা চান পিউ । বিষয়টি জানার পরই ETV ভারতের প্রতিনিধি ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ জামুড়িয়া শিবপুর পাওয়ার হাউজ়ের আবাসনে ETV ভারতের প্রতিনিধি যান । সেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন । শুধু তাই নয়, এলাকার তৃণমূল নেতা সুনীল কর্মকার ও BJP নেতা সন্তোষ সিংয়ের দৃষ্টিগোচরে নিয়ে আসা হয় বিষয়টিকে । দু'জনেই বলেন, তাঁরা সর্বতোভাবে পরিবারটির পাশে থাকবেন ৷ যাতে আর কেউ ওই পরিবারটিকে বিব্রত করতে না পারে সে বিষয়ে তাঁরা কড়া নজর রাখবেন । অন্যদিকে, জামুড়িয়া থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ এরপর পুলিশ পরিবারটির কাছে যায় । সমস্ত বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয় । পুলিশ তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দায়িত্ব নিয়েছে ।
আজ দুপুরের পর ওই পরিবারের পরিচারিকা আবার কাজে ফিরেছেন । এখনও পর্যন্ত নতুন করে আর কোনও হুমকির মুখে পড়তে হয়নি ওই পরিবারকে । পরিবারের কর্তাও বাইরে বেরিয়েছেন । জিনিসপত্র কিনে এনেছেন । আজ তাঁদের ছেলেও সামনের মাঠে খেলাধুলো করেছে ৷ ধীরে ধীরে গুজবের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুলস্রোতে ফিরছে পরিবারটি । নতুন করে পরিবারটিকে আর বিব্রত বা বিরক্ত করার কোনও খবর পাওয়া যায়নি ।