দুর্গাপুর, 28 সেপ্টেম্বর: মহিষাসুরকে নিধনের সময় দেবী দুর্গাকে অমৃত পান করিয়েছিলেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া। তাই কাঁকসার জঙ্গলাকীর্ণ মলানদিঘিতে বনেদি ঘটকবাড়ির দুর্গাপুজায় মা দুর্গার পাশে লক্ষ্মী , সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ থাকে না। দুই সখীর সঙ্গেই 400 বছর আগে থেকেই দেবী দুর্গার পুজো হয়ে আসছে ঘটক বাড়িতে। মা দুর্গা চেপে রয়েছেন শ্বেত সিংহের উপর। সিংহের মুখমণ্ডল ঘোড়ামুখের আদলে গড়া। কথিত আছে দুর্গম হিমালয়ে সেইসময় এইরকম মুখমণ্ডলযুক্ত সিংহ বিরাজ করত। শুধু তাই নয়, পূর্বপুরুষদের লেখা চণ্ডীমন্ত্র পাণ্ডুলিপি পাঠ করেই আজও দুর্গার আরাধনার চিরাচরিত রীতি বজায় ঘটকবাড়ির দুর্গোৎসবে।
শোনা যায়, অবিভক্ত বর্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের মলানদিঘি এলাকায় পণ্ডিতের বসবাস ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল তর্কতীর্থ বংশ। 400 বছর আগে তর্কতীর্থ বংশের পণ্ডিতরা দুই সখী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন মাটির ঘরে। তখন অষ্টমী তিথিতে ছাগ বলিও করা হত। আশপাশের গ্রামের মানুষদের জন্য মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা ছিল। একসময় তর্কতীর্থ বংশের অন্যতম পণ্ডিত বিশ্বনাথ তর্কতীর্থ কেন্দ্রের কাছে ঘটক উপাধি পায়। তখন থেকে ঘটক বংশ হিসাবেও পরিচিত লাভ করে তর্কতীর্থ বংশ।
বিশ্বনাথ তর্কতীর্থ এই এলাকায় টোল তৈরি করেন। সেই টোলে শেখানো হত বৈদিক মন্ত্র। একসময় তর্কতীর্থ বংশ ভট্টাচার্য বংশে পরিণত হয়। এই পুজোতে রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে নিজেদের লেখা পাণ্ডুলিপি ৷ আর সেই পাণ্ডুলিপি দেখে সম্পন্ন হয় পুজো। শতদল পদ্মের ছবি এঁকে অষ্টমীর দিন পুজো হয়। 200 বছর আগে থেকে বন্ধ হয়ে যায় ছাগ বলি। পুজোতে হয় চাল কুমড়ো বলি। মাকে নিরামিষ ভোগও দেওয়া হয়। মাটির মন্দির পরিবর্তন হয়ে পাকা হলেও তর্কতীর্থ বংশের পণ্ডিতের নিয়ম মেনেই হয়ে আসছে ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপুজো।
পরিবারের ছেলেমেয়েরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পুজোর চার দিন একত্রিত হয়। পুজোর আনন্দে সামিল হয়। চার দিন পর গ্রামের পুকুরেই হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। এই পুজোর সঙ্গে মিশে আছে বহু ইতিহাস। তাই শুধু মলানদিঘি গ্রামের মানুষ নয়, আশপাশের বহু অঞ্চলের মানুষ দুর্গোৎসবের সময় ঘটক বাড়ির সুপ্রাচীন এই দুর্গা প্রতিমা দেখতে আসেন। বাড়ির মহিলারাও পুজোর কয়েকটা দিন চূড়ান্ত ব্যস্ত হয়ে ওঠেন পুজোর আয়োজনে।
আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতে ভুট্টার বিভিন্ন অংশ দিয়ে মাতৃমূর্তি তৈরি করছেন অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড