নদিয়া, 7 অগাস্ট : লকডাউনের পর থেকেই বন্ধ পরিবহন ব্যবস্থা । কাপড় বিক্রি না হওয়ার কারণে কাজ হারিয়ে বাড়িতেই বসে রয়েছেন নদিয়ার ফুলিয়ার প্রায় কুড়ি হাজারের বেশি তাঁতশিল্পী । জাতীয় তাঁতদিবসের দিনে কার্যত আধপেটা খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের ।
কোরোনার সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র মার্চের শেষে দেশে লকডাউন ঘোষণা করে । প্রায় সাড়ে চারমাস পেরিয়ে গেছে । কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে কোরোনা সংক্রমনের হার ততই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে লকডাউন তুলে নিলেও আবারও নতুন করে লকডাউনের কথা চিন্তা করছে রাজ্য সরকার । ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে সপ্তাহে দুইদিন লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছে সরকার । অন্যান্য জেলার পাশাপাশি নদিয়াতে যতদিন গড়াচ্ছে ততই কোরোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । মূলত সেইদিকে মাথায় রেখেই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নদিয়ার একাধিক পৌরসভা এবং বেশকিছু পঞ্চায়েত এলাকায় টানা সাতদিন লকডাউন রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে কবে কোরোনার সংক্রমণ কমবে আর কবেই বা পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে তা সঠিক কেউই বলতে পারছে না ।
এদিকে প্রায় 5 মাস কাজ হারিয়ে বাড়িতেই বসে রয়েছেন নদিয়ার শান্তিপুরের প্রায় কুড়ি হাজারের বেশি তাঁতশিল্পী । মূলত তাঁত বুনে সংসার চলে তাঁদের । দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার ফলে আর্থিক কষ্টে পড়েছেন । এই পরিস্থিতিতে সরকারি রেশনে যেটুকু অনুদান মেলে, তাই দিয়েই কোনওরকমে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা । তাঁদের আক্ষেপ আগামী দিনে এইভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে ।
দীর্ঘ 35 বছর ধরে তাঁত বুনছেন ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী স্বপন বসাক । তিনি বলেন, "পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে মহাজনরা কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না । মহাজনরা কাপড় বিক্রি করতে না পারার ফলে আমাদের নতুন করে আর কোনও কাজ দিচ্ছে না । টাকা চাইতে গেল তাঁরা বলছেন আমাদের কাজ নেই । তাহলে টাকা দেব কীভাবে । এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রায় পাঁচ মাস ধরে বাড়িতেই বসে রয়েছি । অন্যদিকে পড়ে থেকে লাখ লাখ টাকার তাঁতগুলি নষ্ট হচ্ছে । তাঁরা চাইছেন সরকার যদি তাঁতশিল্পীদের কথা মাথায় রেখে একটু আর্থিক সাহায্য করেন তাহলে আগামী দিনে হয়ত দু'মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব । না হলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে ।"
অন্য এক তাঁত শিল্পী স্বপ্না বসাক বলেন, "সংসার চলে আমার একার রোজগারে । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে কাজ । মহাজন কাজ দিচ্ছে না । তাহলে আমরা আগামীদিনে কীভাবে বেঁচে থাকব ।"
জাতীয় তাঁতবস্ত্র দিবস । কিন্তু এ বছরের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা । কোরোনা সংক্রমণের জে এই দিনেই একাধিক তাঁতিরা দিনে একবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন । কোরোনা সংক্রমণের জেরে সংকটে তাঁতিরা । সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, সরকার যদি তাঁতিদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়, তাহলে হয়ত নদিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে । না হলে তাঁতশিল্পটি হয়ত আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে । এমনই আশঙ্কা করছেন তাঁরা ।