ETV Bharat / state

বেলজিয়ান ফানুস থেকে ঝাড়বাতি, 500 বছরের ঐতিহ্য মেনে সেজে ওঠে শান্তিপুরের রাস - মোমবাতি ও ঝাড়বাতিতে সেজে ওঠে শান্তিপুরের রাস

Santipur Rash Yatra: শুরু হয়ে গিয়েছে শান্তিপুরের রাস মেলার প্রস্তুতি ৷ এই রাস উৎসবের বৈশিষ্ট হল মোমবাতির আলোয় সেজে ওঠে ৷ ইতালিয়ান কাচের ফুানুসে সেজে ওঠে রাস ৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 28, 2023, 7:35 PM IST

ঐতিহ্য মেনে সেজে ওঠে শান্তিপুরের রাস

নদিয়া, 28 নভেম্বর: সাড়ম্বরে শুরু হয়ে গিয়েছে শান্তিপুরের রাস উৎসব ৷ এই রাস উৎসব ঘিরে গল্প আছে ৷ আনুমানিক 500 বছর আগে অদ্বৈত আচার্যের হাত ধরে প্রথম শুরু হয়েছিল শান্তিপুরের রাসযাত্রা। প্রাচীন রীতি মেনে ধুমধাম করেই পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী রাধাকৃষ্ণের রাস। এবছরও শান্তিপুরের বিভিন্ন বারোয়ারি মণ্ডপগুলি সেজে উঠেছে রাসের সাজে ৷

আড়ম্বর থাকলেও নেই বৈদ্যুতিন আলো, গোটা মণ্ডপ বেলজিয়াম কাচের ফানুসে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোকিত হয় শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি ও দীনদয়াল বিগ্রহ বাড়ির মণ্ডপসজ্জা। শহরের মঠবাড়ি হোক কিংবা দীনদয়াল ঠাকুর বাড়ি। প্রায় প্রতিটি বিগ্রহ বাড়িতে ব্যবহৃত বেলজিয়াম কাচের ফানুসগুলোর একেকটির বয়স প্রায় 200 থেকে 350 বছর। উচ্চতাপ্রায় 2 ফুটের মত । বেলজিয়াম কাচের ফানুসের প্রতিটির দাম 8 হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কেন এত দাম? কারণ অবশ্যই তার সূক্ষ্ম কারুকার্যের জন্য। সারাবছর বাড়ির অন্দরমহলে সযত্নে রক্ষিত থাকে সেগুলো। রাস উৎসবের সন্ধ্যায় এই বেলজিয়াম ফানুস দিয়ে সাজানো হয় প্রতিটি বাড়ির মূল প্রাঙ্গন ।

এই রাসের মেলা একাধিক গল্পেরও প্রচলন আছ ৷ সে কথাই শোনালেন বড় গোস্বামী বাড়ির বংশধর সত্যনারায়ণ গোস্বামী ৷ কথিত আছে, অদ্বৈত আচার্য প্রথম কলিযুগে নারায়ণ রূপে রাসযাত্রা শুরু করে । দাপরে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ তার গোপিনীদের সঙ্গে নিয়ে রাস লীলা করতেন । সেখানে কোনও পুরুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল । কিন্তু মহাদেবের মনে হয়েছিল কেন সেখানে পুরুষ প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি গোপনে সেই রাসযাত্রা দেখার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই কারণে তিনি নিজেকে নারী রূপে রাস লীলা দর্শনের জন্য ঘোমটা টেনে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সেটি বুঝতে পেরে রাস লীলা ক্ষেত্র থেকে চলে যান । শ্রীকৃষ্ণ চলে যাওয়ায় গোপিনীরাও ক্ষুব্ধ হন । মহাদেবের স্ত্রী যোগমারায় সন্দেহ হয় এবং তিনি বুঝতে পারেন তার স্বামী নারীর রূপে প্রবেশ করেছেন । এরপর খোঁজাখুঁজি করতে দেখা যায় এক নারী ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন । তখন কাছে গিয়ে যোগমায়া তার স্বামীকে চিহ্নিত করেন । মহাদেবকে ভর্ৎসনা করেন । মহাদেব ছেড়ে চলে গেলেও তিনি বলে যান দাপরের এই রাসলীলা তিনি কলিযুগে দেখবেন ৷ ।

এরপরই অদ্বৈত আচার্যকে সে সময় মহাদেবের অবতার হিসেবে মনে করা হত। সেই কারণে অদ্বৈত আচার্য্য প্রথম নারায়ণ পুজার মধ্যে দিয়ে রাসযাত্রা শুরু করেন । পরবর্তীকালে বড় গোস্বামী রাধারমন জিউ শ্রীমতি বিদ্রোহের যুগল মিলনকে কেন্দ্র করে রাধাকৃষ্ণের রাসযাত্রা শুরু হয়। জানা যায়, গোস্বামী বাড়ির যে রাধা কৃষ্ণের বিদ্রোহ ছিল হঠাৎ করে সেখান থেকে রাধা উধাও হয়ে যায়। বিভিন্ন খোঁজাখুঁজির পর শান্তিপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকা দিগনগরে রাধার বিগ্রহ খুঁজে পাওয়া যায়। এরপরেই গোস্বামী বাড়ি তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাধাকৃষ্ণকে এক জায়গায় বসিয়ে তাদের যুগল মিলন করা হবে ৷ মূলত রাস পূর্ণিমা তিথিতেই তাদের এই যুগলের মিলন ঘটানো হয়। এর পরে শুরু হয় শান্তিপুরের রাধা কৃষ্ণের রাসযাত্রা । রাধা কৃষ্ণের যুগল ঘটানোর একদিন পর যুগল বিগ্রহ নিয়ে করা হয় নগর পরিক্রমা। এই রীতি মেনেই চলছে শান্তিপুরের রাসযাত্রা।

আরও পড়ুন:

  1. রাধার সাজে রাস মহোৎসবে নৃত্য পরিবেশন, তাক লাগালেন 'ড্রিমগার্ল'
  2. রাস উৎসব দেখতে শান্তিপুরে মমতা
  3. রাস পূর্ণিমাতে দুর্গাপুজোয় মাতলেন এলাকাবাসী

ঐতিহ্য মেনে সেজে ওঠে শান্তিপুরের রাস

নদিয়া, 28 নভেম্বর: সাড়ম্বরে শুরু হয়ে গিয়েছে শান্তিপুরের রাস উৎসব ৷ এই রাস উৎসব ঘিরে গল্প আছে ৷ আনুমানিক 500 বছর আগে অদ্বৈত আচার্যের হাত ধরে প্রথম শুরু হয়েছিল শান্তিপুরের রাসযাত্রা। প্রাচীন রীতি মেনে ধুমধাম করেই পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী রাধাকৃষ্ণের রাস। এবছরও শান্তিপুরের বিভিন্ন বারোয়ারি মণ্ডপগুলি সেজে উঠেছে রাসের সাজে ৷

আড়ম্বর থাকলেও নেই বৈদ্যুতিন আলো, গোটা মণ্ডপ বেলজিয়াম কাচের ফানুসে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোকিত হয় শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি ও দীনদয়াল বিগ্রহ বাড়ির মণ্ডপসজ্জা। শহরের মঠবাড়ি হোক কিংবা দীনদয়াল ঠাকুর বাড়ি। প্রায় প্রতিটি বিগ্রহ বাড়িতে ব্যবহৃত বেলজিয়াম কাচের ফানুসগুলোর একেকটির বয়স প্রায় 200 থেকে 350 বছর। উচ্চতাপ্রায় 2 ফুটের মত । বেলজিয়াম কাচের ফানুসের প্রতিটির দাম 8 হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কেন এত দাম? কারণ অবশ্যই তার সূক্ষ্ম কারুকার্যের জন্য। সারাবছর বাড়ির অন্দরমহলে সযত্নে রক্ষিত থাকে সেগুলো। রাস উৎসবের সন্ধ্যায় এই বেলজিয়াম ফানুস দিয়ে সাজানো হয় প্রতিটি বাড়ির মূল প্রাঙ্গন ।

এই রাসের মেলা একাধিক গল্পেরও প্রচলন আছ ৷ সে কথাই শোনালেন বড় গোস্বামী বাড়ির বংশধর সত্যনারায়ণ গোস্বামী ৷ কথিত আছে, অদ্বৈত আচার্য প্রথম কলিযুগে নারায়ণ রূপে রাসযাত্রা শুরু করে । দাপরে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ তার গোপিনীদের সঙ্গে নিয়ে রাস লীলা করতেন । সেখানে কোনও পুরুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল । কিন্তু মহাদেবের মনে হয়েছিল কেন সেখানে পুরুষ প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি গোপনে সেই রাসযাত্রা দেখার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই কারণে তিনি নিজেকে নারী রূপে রাস লীলা দর্শনের জন্য ঘোমটা টেনে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সেটি বুঝতে পেরে রাস লীলা ক্ষেত্র থেকে চলে যান । শ্রীকৃষ্ণ চলে যাওয়ায় গোপিনীরাও ক্ষুব্ধ হন । মহাদেবের স্ত্রী যোগমারায় সন্দেহ হয় এবং তিনি বুঝতে পারেন তার স্বামী নারীর রূপে প্রবেশ করেছেন । এরপর খোঁজাখুঁজি করতে দেখা যায় এক নারী ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন । তখন কাছে গিয়ে যোগমায়া তার স্বামীকে চিহ্নিত করেন । মহাদেবকে ভর্ৎসনা করেন । মহাদেব ছেড়ে চলে গেলেও তিনি বলে যান দাপরের এই রাসলীলা তিনি কলিযুগে দেখবেন ৷ ।

এরপরই অদ্বৈত আচার্যকে সে সময় মহাদেবের অবতার হিসেবে মনে করা হত। সেই কারণে অদ্বৈত আচার্য্য প্রথম নারায়ণ পুজার মধ্যে দিয়ে রাসযাত্রা শুরু করেন । পরবর্তীকালে বড় গোস্বামী রাধারমন জিউ শ্রীমতি বিদ্রোহের যুগল মিলনকে কেন্দ্র করে রাধাকৃষ্ণের রাসযাত্রা শুরু হয়। জানা যায়, গোস্বামী বাড়ির যে রাধা কৃষ্ণের বিদ্রোহ ছিল হঠাৎ করে সেখান থেকে রাধা উধাও হয়ে যায়। বিভিন্ন খোঁজাখুঁজির পর শান্তিপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকা দিগনগরে রাধার বিগ্রহ খুঁজে পাওয়া যায়। এরপরেই গোস্বামী বাড়ি তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাধাকৃষ্ণকে এক জায়গায় বসিয়ে তাদের যুগল মিলন করা হবে ৷ মূলত রাস পূর্ণিমা তিথিতেই তাদের এই যুগলের মিলন ঘটানো হয়। এর পরে শুরু হয় শান্তিপুরের রাধা কৃষ্ণের রাসযাত্রা । রাধা কৃষ্ণের যুগল ঘটানোর একদিন পর যুগল বিগ্রহ নিয়ে করা হয় নগর পরিক্রমা। এই রীতি মেনেই চলছে শান্তিপুরের রাসযাত্রা।

আরও পড়ুন:

  1. রাধার সাজে রাস মহোৎসবে নৃত্য পরিবেশন, তাক লাগালেন 'ড্রিমগার্ল'
  2. রাস উৎসব দেখতে শান্তিপুরে মমতা
  3. রাস পূর্ণিমাতে দুর্গাপুজোয় মাতলেন এলাকাবাসী
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.