মালদা, 17 মার্চ : সংযুক্ত মোর্চা পরের কথা, ভোটের মুখে জেলা বামফ্রন্টেই অনৈক্যের সুর ৷ ইতিমধ্যে এই জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস ৷ নির্বাচনী জোট মেনে হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান বিধায়ক মোস্তাক আলম ৷ একইভাবে মালতিপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করে ফেলেছে সেখানকার দলীয় বিধায়ক আলবেরুণি জুলকারনাইনকে ৷ কিন্তু এই দুটি কেন্দ্রেই নিজেদের প্রার্থী দাবি করে আসছিল বামফ্রন্টের দুই শরিক, ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপি ৷
ইতিমধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতৃত্ব তাদের রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে তারা প্রার্থী দিচ্ছেই ৷ এনিয়ে বামফ্রন্ট ও সংযুক্ত মোর্চার সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে আলোচনা করার বার্তা দিয়েছে জেলা নেতৃত্ব ৷ দু’দিন আগে মালদায় আসা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলি সাইরানিকেও নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দলের জেলা নেতৃত্ব ৷
হাফিজ সাহেবও ইটিভি ভারতকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "এক্ষেত্রে ফ্রন্টের বড় শরিক, সিপিএমকে আরও ভাবতে হত ৷ ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী-সমর্থকদের আবেগকে মান্যতা দিতে হত ৷" অর্থাৎ দলের জেলা নেতৃত্ব ও কর্মীদের দাবিকে পরোক্ষে মেনে নিয়েছেন হাফিজ সাহেবও ৷ তবে তিনি জানিয়েছেন, এনিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে দলের রাজ্য নেতৃত্ব ৷
আরও পড়ুন : ভোটের পর তৃণমূলকে সমর্থনের কথা বলায় কংগ্রেসের ডালুকে তোপ আরএসপি-ফরওয়ার্ড ব্লকের
এদিকে জোটের কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে এই জেলায় ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মীদের এখনও ভোটের ময়দানে নামতে দেখা যায়নি ৷ ফলে গোটা বিষয়টি নিয়েই একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে জেলার বাম মহলে ৷ এনিয়ে ইটিভি ভারতের ক্যামেরার সামনে খোলাখুলি মন্তব্য করেছেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র ৷ তবে এই 'ধোঁয়াশার বল' তিনি রাজ্য বামফ্রন্টের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছেন ।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই মালদা জেলার হবিবপুর, গাজোল ও ইংরেজবাজার কেন্দ্রে প্রচারে নেমে পড়েছেন সিপিএম প্রার্থীরা ৷ এর মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি কোথাও যেন কাঁটার মতো বিঁধছে জোটে ৷ এনিয়ে বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “গোটা রাজ্যের 294টি আসনের নিরিখে এই আসন রফা হচ্ছে ৷ কলকাতায় বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ নেতৃত্ব মিলিতভাবে আসন রফা চূড়ান্ত করছে ৷ ফলে বামফ্রন্টের শরিকদলের নেতৃত্ব যেসব কথা বলেছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে মালদার বাম নেতৃত্বের করার কিছু নেই ৷ মালদার নেতৃত্ব শুধু প্রস্তাব পাঠাতে পারে ৷ বাড়তি আসনে লড়াই করার জন্য অন্যদের সঙ্গে আমরাও আগ্রহী ৷ আমরাও সেটা চেয়েছি ৷"
তিনি আরও বলেন, "2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে ছিল মালতিপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুর কেন্দ্র ৷ সেই সময় আসন রফাসূত্র অগ্রাহ্য করেই কংগ্রেস ওই দুই আসনে প্রার্থী দেয় ৷ পরবর্তীতে তারা জিতে যায় ৷ এবারের ফর্মুলা হল, যাদের জেতা যে আসন, সেখানে তাদেরই প্রার্থী ভোটে দাঁড়াবে ৷ সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের জেতা ওই দুই আসন তাদের ছাড়া হয়েছে ৷ আমরা মালদা থেকে এনিয়ে কিছু বলতে পারি না, করতেও পারি না ৷ ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে ৷ বামফ্রন্টের বৈঠকও হয়েছে ৷ তারা নিজেদের বক্তব্য রাজ্যস্তরে জানাবে, আমরাও জানাব ৷ রাজ্য থেকেই এব্যাপারে ফয়সালা হবে ৷ আমরা সমস্ত বিষয় জানিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য বামফ্রন্টকে চিঠি দিয়েছি ৷"
এছাড়াও অম্বর মিত্রের কথায় জোটের শর্ত উপেক্ষা করে ফরওয়ার্ড ব্লক কোথাও প্রার্থী দেবে বলে তিনি কোনও আশঙ্কা করছেন না ৷ কারণ, তাদের সার্বিক লড়াই বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ তৃণমূল কিংবা বিজেপির মতো ক্ষোভ বিক্ষোভ কখনই তাদের দলের মধ্য দেখা যাবে না বলে তিনি জানিয়েছেন ৷ আলোচনার মাধ্যমেই দলের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী ৷
আরও পড়ুন : ইয়াবা ট্য়াবলেট-সহ ধৃত পাচারকারী
এদিকে আজ ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক শ্রীমন্ত মিত্র বলেন, “তিনদিন আগে দলের বর্ধিত সভায় আমাদের অবজারভার হাফিজ আলি সাইরানি আমাদের সমস্ত বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে নিয়ে গিয়েছেন ৷ জেলাস্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা রাজ্যের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকব ৷ কয়েকদিন অপেক্ষা করে আমরা ফের রাজ্যে রিমাইন্ডার পাঠাব ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে লড়াই করতে আমরা প্রস্তুত ৷ সেই মতো আমাদের শাখাগুলিও তৈরি ৷ ইতিমধ্যে আমরা সেখানে একটি সভা করেছি ৷ আর ওই আসনটি আমাদের দীর্ঘদিনের ৷ বীরেন্দ্রকুমার মৈত্র ওই আসন থেকে জিতেই মন্ত্রী হন ৷ তজমুল হোসেন পরপর দুই দফায় ওই আসনে জিতে পরে তৃণমূলে গিয়েছেন ৷"
এরপর শ্রীমন্ত মিত্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, "2016 সালে ওই আসনটি আমাদেরই দেওয়া হয় ৷ আমরা প্রস্তুতি শুরু করি ৷ মনোনয়নও জমা দিই ৷ কিন্তু কংগ্রেস বেইমানি করে ওই আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়ে দেয় ৷ পরে রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন, হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে ৷ লড়াই কীভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, আমার জানা নেই ৷ তবু আমরা সেখানে লড়াই করি ৷ জোটে একটু সমস্যা হওয়ায় আমরা ওই আসনে হেরে যাই ৷ এবারও আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই আসনে লড়াই করার দাবি জানিয়ে এসেছি ৷ আমরা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি, সিপিএমের তিনটি আসনে আমরা বামফ্রন্টগত ভাবেই লড়ব ৷ তবে হরিশ্চন্দ্রপুর কিংবা তার বাইরে কোনও আসনে আমরা যদি লড়াই করি, সেক্ষেত্রে আমরা অন্য শরিকদের সমর্থন চেয়েছি ৷ কংগ্রেসের হয়ে আমরা এখনও প্রচারে নামিনি ৷ কারণ, রাজ্য থেকে আমরা এখনও তেমন কোনও নির্দেশ পাইনি ৷ আর যেহেতু হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে, তাই আমরা দলীয় কর্মীদের তাদের হয়ে প্রচারে নামার নির্দেশ কীভাবে দেব? আসলে এখনও মালদা জেলায় জোট প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়নি ৷”