মালদা, ১৬ মার্চ : “ভোটের পর সরকার গঠনে প্রয়োজন পড়লে তৃণমূলকে সমর্থন করব ৷ বিজেপিকে করব না ৷” জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরির এই মন্তব্য আরও একবার সংযুক্ত মোর্চার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল ৷ একইসঙ্গে এই মোর্চার অন্যতম সঙ্গী আব্বাস সিদ্দিকীকেও সাপ্রদায়িকতা ইস্যুতে বিঁধেছেন ডালু মিয়াঁ ৷ যদিও তাঁর এই মন্তব্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র ৷ তবে এনিয়ে ডালুবাবুর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বামেদের দুই শরিক, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লক ৷
জেলা কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, “কংগ্রেস কখনও আব্বাস সিদ্দিকির হাত ধরেনি ৷ সিপিএম বা বামফ্রন্ট তার হাত ধরেছে ৷ আমার মনে হয়, বামফ্রন্টের ভয় ছিল, তারা হয়তো এবার একটা আসনেও জিততে পারবে না ৷ তাই তারা হয়তো ভেবেছে, আব্বাস সিদ্দিকী যদি কিছু আসন তাদের জোগাড় করে দেয় ৷ তাই তারা আব্বাস সিদ্দিকীর হাত ধরেছে ৷ আমরা আগেই বামফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করে নিয়েছিলাম বলে এনিয়ে কিছু বলতে পারিনি ৷ আমরা নিজেদের অপছন্দের কথা জানিয়ে দিয়েছি ৷ আব্বাস সিদ্দিকীও ধর্মের নামে রাজনীতি করে ৷ আমরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি কখনই পছন্দ করি না ৷ আর তৃণমূলকে পছন্দ করি না, কারণ, ওরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি ৷ বাংলার মানুষের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে ৷ কিন্তু যদি সরকার গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের তৃণমূল ও বিজেপিকে সমর্থনের জন্য বেছে নিতে হয়, আমি তৃণমূলকে সমর্থন করব ৷ কারণ, বিজেপি ধর্মের নামে দেশটাকে ভাগ করতে চাইছে ৷ পশ্চিমবঙ্গে এসব চলে না ৷”
ডালুবাবুর এমন মন্তব্যের পরেও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নন সংযুক্ত মোর্চার প্রধান শরিক, সিপিএমের জেলা সম্পাদক ও জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অম্বর মিত্র ৷ তাঁর সাফ কথা, “এনিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না ৷” তবে এনিয়ে ডালুবাবুর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে ফ্রন্টের দুই শরিক আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লক ৷ আরএসপির জেলা সম্পাদক সর্বানন্দ পাণ্ডে বলেন, “কোন পরিপ্রেক্ষিতে ডালু মিয়াঁ এই মন্তব্য করেছেন তা বলতে পারব না ৷ তবে একজন দায়িত্বশীল নেতা হিসাবে তাঁর এই মন্তব্য করা ঠিক হয়নি ৷ তাঁদের একই বাড়িতে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সহাবস্থান রয়েছে ৷ একই ছাদের তলায় তাঁদের মধ্যে কী সম্পর্ক, তা তাঁরাই বলতে পারবেন ৷ কিন্তু রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে ও বিজেপিকে রুখতে এবার সংযুক্ত মোর্চা তৈরি হয়েছে ৷ তৃণমূল সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আমরা সবাই জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে চাই৷ জেতার পর যদি ডালুবাবু বলেন, প্রয়োজনে আমরা তৃণমূলকে সরকার গঠন করতে দেব, তার থেকে ন্যক্কারজনক মন্তব্য আর কিছু হতে পারে না ৷ এর আগেও তিনি বৈষ্ণবনগরে সভা করতে গিয়ে বলেছিলেন, মালদায় বামফ্রন্ট কোথায় ? অথচ গত লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের ভোটেই তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ তাতেই তিনি গর্ব করেন, মালদায় নাকি শুধুই কংগ্রেস ৷ আমরা চাইব, ডালুবাবু সংযতভাবে কথাবার্তা বলবেন ৷ তাঁর বাড়ির নীতি অনুযায়ী রাজনীতিতে কথাবার্তা বলবেন না ৷ কংগ্রেস যদি ভোটের পর তৃণমূলকে সমর্থনের কথা ভাবে, তবে রাজ্য বামফ্রন্টের এখনই ভাবা উচিত, একুশের ভোটে বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে কি না ৷”
আরও পড়ুন : চণ্ডী মায়ের পিন্ডি চটকে দিয়েছেন মমতা, সমালোচনা শুভেন্দুর
এই ইস্যুতে ডালুবাবুকে বিঁধেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক শ্রীমন্ত মিত্রও ৷ তিনি বলেন, “একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা হিসাবে ডালুবাবুর এমন মন্তব্য করা ঠিক হয়নি ৷ তবে তাঁর এই মন্তব্যে আমার ধারণা, বেড়াল বোধহয় ঝুলি থেকে বেরিয়েই পড়ল ৷ আমরা জোটের নেতাদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, একজন দায়িত্বশীল কংগ্রেস নেতা হিসাবে ডালুবাবুর এই মন্তব্যের পর জোটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক ৷ আমি এনিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্ব ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি ৷ কংগ্রেসের যদি এই নীতি হয়ে থাকে, তবে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে না ৷”