মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি অনুযায়ী কাটমানি না দিতে পারায় সরকারি আবাস যোজনার প্রাপ্য টাকা ঢোকেনি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ৷ এমনই অভিযোগ উঠল স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হারিয়ান গ্রামে ।
বারেক আলি পেশায় রাজমিস্ত্রি, হারিয়ানের বাসিন্দা ৷ স্ত্রী আর 5 ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিন আনা দিন খাওয়া সংসার ৷ তাঁর অভিযোগ, দেড় বছর আগে সরকারি আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর নাম ওঠে । সেই কাগজপত্র নিয়ে তিনি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সচিব সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । যখন অন্য উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার টাকা ঢুকতে শুরু করে, তখন তিনিও নিজের অ্যাকাউন্টে খোঁজ নেন ৷ টাকা না ঢোকায় তিনি পঞ্চায়েত সদস্যকে বলেন, "আমার টাকা ঢুকছে না কেন ?" পঞ্চায়েত সদস্য তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, "সবারই টাকা ঢুকছে ৷ আস্তে আস্তে টাকা ঢুকবে ৷" কিন্তু কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর সদস্য তাঁর কাছে 10 হাজার টাকা কাটমানি চান বলে অভিযোগ বারেক আলির ৷
অসহায় ভাবে তিনি বলেন, "সেই টাকা আমি দিতে পারিনি , তাই আমার অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি ৷" তাঁর প্রশ্ন, "10 হাজার টাকা দেওয়া যায় ? একটা গরিব মানুষের পেটের খাওয়া চলে না ঠিক করে ৷" এরপর তিনি অনলাইনে দেখেন যে তাঁর টাকা পেমেন্ট হয়ে গিয়েছে ৷ তখন অ্যাকাউন্টে তথ্য নিয়ে জানতে পারেন যে আসলে টাকাটা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি ৷ তাঁর অভিযোগ কথায়, "টাকাটা অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে গেছে ৷ সদস্য দেখছি দেখছি করে দেড় বছর কাটিয়ে দিলেন ৷" এনিয়ে তিনি বিডিও, এসডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন । তিনি চান, তাঁর প্রাপ্য টাকা যেন তাঁর অ্যাকাউন্টে চলে আসে ।
আরও পড়ুন : Malda Duare Sarkar : নিরক্ষর গ্রামবাসীদের সরকারি প্রকল্পের ফর্ম পূরণ কন্যাশ্রীদের, অভিভূত বিডিও
যদিও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য রূপসানা খাতুনের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে । তিনি বলেন, "আমি ওর কাছে কোনও টাকা চাইনি । উনি মিথ্যে বলছেন । বরং উনি যাতে ঘরের টাকা পান, তার চেষ্টা করেছি । পঞ্চায়েত, ব্লক, এমনকি বিডিওর কাছেও গিয়েছি । ওনার অভিযোগ, ওনার টাকা নাকি অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে । আমিও ব্লকে আবেদন করেছি, যাতে ওনার টাকা তাড়াতাড়ি অ্যাকাউন্টে ঢোকে।"
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এমন কোনও ঘটনা ঘটলে দল অভিযুক্তের পাশে থাকবে না। সংবাদমাধ্যমের কাছে খবর পেয়ে বিডিও জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হারিয়ান গ্রামে ।
এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল । তৃণমূল পরিচালিত মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গোপাল চৌধুরী বলেন, "উপভোক্তা আমাদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন । আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটির তদন্ত করি । আমাদের মনে হয়েছিল, হয়ত উপভোক্তা তাঁর নথিপত্র জমা দিতে কোনও ভুল করেছেন, অথবা তাঁর নথি এন্ট্রি হতে কোনও ভুল হয়েছে ।" কিন্তু তদন্তে দেখা যায় যে ওই উপভোক্তার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে । অ্যাকাউন্ট নম্বর এন্ট্রিতে ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করে তিনি আশ্বস্ত করেন, "আমরা এনিয়ে ব্লকে রিপোর্ট দিয়েছি । ওই উপভোক্তা যাতে দ্রুত ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পান, তার জন্য বিডিওর কাছে আবেদন জানিয়েছি ।"
এদিকে চাঁচল 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সচ্চিদানন্দ চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা বারবার দলের প্রত্যেককে জানিয়েছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে মানুষ যে যে সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পায়, সেখানে কেউ কোনও কাটমানি নিতে পারবে না ।" তিনি রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, দল থেকে এই নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেউ যদি কাটমানি নিয়ে থাকে এবং তার প্রমাণ থাকে, তবে দলগতভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ব্লক প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হবে ।
এ প্রসঙ্গে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন । ওই উপভোক্তা যাতে সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হন, তার ব্যবস্থা করা হবে ।
আরও পড়ুন : Fake Aadhaar card : মালদায় ফের আধার কার্ড জালিয়াতি চক্রের হদিশ